ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নীতিমালার বাস্তবায়ন চাই

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ৭ জুলাই ২০১৭

নীতিমালার বাস্তবায়ন চাই

দেশে গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে নির্যাতন চালিয়ে হত্যার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। প্রায়শই পত্রপত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে গৃহকর্মী নির্যাতনের খবরাখবর। আরও যা দুঃখজনক তা হলো এই প্রক্রিয়া শুধু মধ্যবিত্ত ও সচ্ছল মধ্যবিত্তদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং তা ধনী ও এলিট শ্রেণীর মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। মহাখালী, ডিওএইচএস, গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, মিরপুরে গৃহকর্মী নির্যাতনের খবর তুলনামূলকভাবে বেশি পাওয়া যায়। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশালসহ অন্যান্য জেলা শহরেও এহেন ঘটনার খবর কম নয়। সম্প্রতি জাতীয় দলের একাধিক ক্রিকেটারের সস্ত্রীক গৃহকর্মী নির্যাতনের জের ধরে জেল-জরিমানার খবরও আছে। দুঃখজনক হলো, কোন কোন ক্ষেত্রে তা আন্তর্জাতিক পরিম-লেও সম্প্রসারিত হয়েছে। সাম্প্রতিককালে নিউইয়র্কে একাধিক গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে নির্যাতিতা পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে অন্যত্র। এতে স্বভাবতই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও ক্ষুণœ হয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হয়েছে অল্প বয়সী শিশুরা। কিশোরী ও তরুণী গৃহকর্মীর ক্ষেত্রে যৌন নিগ্রহসহ ধর্ষণ, এমনকি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবরও আছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী দেশে বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ গৃহকর্মী রয়েছে, যাদের ৮০ শতাংশ মেয়ে শিশু। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৪ সালের জাতীয় শিশুশ্রম জরিপে দেখা যায়, গৃহকর্মে নিযুক্ত ১ লাখ ২৫ হাজার শিশুকর্মীর বয়স পাঁচ থেকে সাতের মধ্যে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ মেয়ে শিশু। ২০১৩ সালের শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য অনুযায়ী দেশে ১৫ বছর বয়সের ওপরে প্রায় ৯ লাখ শিশু গৃহকর্মী রয়েছে। এদের ৮৩ শতাংশ মেয়ে শিশু, যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। এরাই রয়েছে সর্বাধিক নির্যাতনের ঝুঁকিতে, যার মধ্যে ধর্ষণও অন্তর্ভুক্ত। যা হোক, নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা বাড়তে থাকায় সরকার ২০১৫ সালে গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণনীতি গ্রহণপূর্বক প্রণয়ন করে ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা-২০১৫।’ এতে গৃহকর্মীদের নিয়মিত বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা, ছুটি, বিনোদন, এমনকি মাতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থাসহ চাকরির নিরাপত্তা রাখার আশ্বাসও মেলে। তবে ওই পর্যন্তই। আজ পর্যন্ত সেই নীতিমালা বাস্তবায়নের কোন চেষ্টা পরিলক্ষিত হয়নি। আইন প্রণয়ন তো দূরের কথা! কবে নাগাদ হবে তা বলতে পারে না কেউ। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অবশ্যই কিছু করণীয় এবং দায়িত্ব রয়েছে। তবে এটাও ঠিক, যে সব পরিবারে গৃহকর্মী রয়েছে, সে সব পরিবারের সদস্যদের মনমানসিকতা না পাল্টালে শুধু আইন করে নীতিমালা বাস্তবায়ন করা যাবে না। বাস্তবে প্রায় সব গৃহকর্মীই দরিদ্র পরিবার থেকে আগত। তাদের পক্ষে থানা-পুলিশসহ আইনের আশ্রয় নেয়াও অসুবিধাজনক। কিছু মানবাধিকার ও আইনী সহায়তা কেন্দ্র গৃহকর্মীদের সহায়তা প্রদান করলেও তা অপ্রতুল। এমনও দেখা গেছে যে, মামলা হলেও তা শেষ পর্যন্ত টাকার বিনিময়ে ধাবিত হয় আপোসের পথে। মহিলা ও শিশু অধিদফতর নির্যাতন প্রতিরোধে হেল্প লাইন-১০৯ চালু করলেও সচেতনতার অভাবে তা তেমন কার্যকর নয়। সে অবস্থায় গৃহকর্মী নির্যাতন প্রতিরোধে সর্বস্তরে সচেতনতা অত্যাবশ্যক। গণমাধ্যমও এক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে।
×