ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মর্মান্তিক

প্রকাশিত: ০৪:০২, ৬ জুলাই ২০১৭

মর্মান্তিক

অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থাসহ সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্র নাজুক হলে বিপদ যে কোন সময় তাড়া করতে পারে। প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে অবহেলা ও ঔদাসীন্য অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়। তাই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে যে কোন মুহূর্তেই। শিল্প খাতে নিরাপত্তা ত্রুটি মাঝে মধ্যেই কারণ হয়ে দাঁড়ায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা। অসংখ্য সাধারণ শ্রমিক হতাহতের শিকার হয়। পাশাপাশি আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা না থাকা বা অপ্রতুল হলে পরিস্থিতি বিপজ্জনক হতে বাধ্য। হয়েছেও তাই। শুধু এ দেশে নয়, ব্রিটেনের মতো উন্নত দেশেও তাই আবাসিক ভবনে ক্রমান্বয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। কর্তৃপক্ষীয় অবহেলা, দায়িত্বহীনতা, গাফিলতি, ঔদাসীন্য, রক্ষণাবেক্ষণে অযতœ অসর্তকতা বিপদের বার্তা বয়ে আনে। এমনটিই ঘটেছে ঢাকা ও গাজীপুরে। একই দিনে সকাল ও বিকেলে পোশাক কারখানা এবং রেস্তরাঁ ও আবাসিক হোটেলে অগ্ন্যুৎপাত প্রাণহানির ঘটনা ঘটিয়েছে। ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ক’জন। আগুনে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কারখানা ও ভবনগুলো। কী কঠিন নির্মম মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে নিরীহ এসব মানুষকে! গাজীপুরের কাশিমপুরের নয়াপাড়ার একটি পোশাক কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে আবারও দেখিয়ে দিল কারখানা মালিকদের নিয়মনীতি ও বিধিবিধান না মানার ফলাফল কী হতে পারে। রানা প্লাজা ধসের পর দেশে-বিদেশে তুমুল সমালোচনার মুখে পোশাক খাতের নিরাপত্তার ওপর জোর দিলেও এর ফাঁকফোকরে যে ঘাটতি রয়ে গেছে এই ঘটনা তারই প্রমাণ। বয়লার ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা হয় না। অধিকাংশ কারখানায়ই, তাই প্রায়শই বিভিন্ন কারখানায় বয়লার ফেটে দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে। গত বছর টঙ্গী, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, নেত্রকোনায় বয়লার বিস্ফোরণ ঘটে। প্রতিটি দুর্ঘটনায় একাধিক শ্রমিকের মৃত্যু হলেও বয়লার ব্যবহারকারী কারখানাগুলো সাবধান হয়েছে, বলা যাবে না। এত মানুষের প্রাণহানির দায়ভার বুঝি কারও ওপর বর্তায় না। শ্রমিকদের নিরাপত্তা মালিক নিশ্চিত করছে কিনা দেখার জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর রয়েছে। নিয়মিত কারখানা পরিদর্শনের দায়িত্ব পালনে তারা যে অপারগ, সে তো স্পষ্ট করে এসব দুর্ঘটনা। মালিক পক্ষ বয়লারসহ অন্য সরঞ্জামাদি ত্রুটিমুক্ত রাখার আদৌ কোন ব্যবস্থা নিয়েছে এবং অগ্নিনির্বাপণের প্রস্তুতি রেখেছে, এমনটা মনে হয় না। দেশে আইন, বিধি, দালিলিক অবকাঠামো সবই আছে, শুধু প্রতিপালন হয় না সেভাবে। শিল্প কারখানার কর্মপরিবেশের সঙ্গে লাখ লাখ অসহায় শ্রমিকের জীবন মৃত্যুর প্রশ্ন জড়িত। কিন্তু মালিকদের কাছে নিরাপত্তা নয়Ñ লাভটাই বড়। একই কথা খাটে পরিদর্শন বা নজরদারি কর্তৃপক্ষের বেলায়ও। বয়লারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ সরঞ্জামাদি যেমন ব্যবহার করতে হয়, ঝুঁকি হ্রাসেরও কিছু উপায় থাকে। কর্তৃপক্ষের সেসব মেনে চলতে বাধ্য করার দায় যেন নেই কারও। কারখানার কর্মপরিবেশের মতো শ্রমিক নিরাপত্তা জাতীয় অর্থনীতির অগ্রগতিও জড়িত। এক্ষেত্রে অবহেলা-অনিয়ম আর কতদিন সহ্য করতে হবে, কে জানে। মানসম্মত বৈধ বয়লার ব্যবহার নিশ্চিত করার দায়িত্ব শিল্প মন্ত্রণালয়ের। মনে হয়, তাদের কাছে এই বিষয়টি অতি তুচ্ছ। তাই দুর্ঘটনা রোধ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। বরং আরও দুর্ঘটনার জন্য অপেক্ষমাণ থাকতে হবে শ্রমিকদের। মন্ত্রণালয় নিবন্ধিত বয়লারের সংখ্যা মাত্র চার শ’। অথচ দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে দশ হাজারের বেশি। কী করে তা সম্ভব, জানে শিল্প মন্ত্রণালয় ও তার অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান। উত্তরার রেস্তরাঁ, আবাসিক হোটেল ও ভবনে দুর্বল অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আগুন ছড়াতে সাহায্য করেছে। রেস্তরাঁর সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুন ছড়াতে পারে বলে প্রাথমিক যে ধারণা, তা সত্যি হলে ভয়ের মাত্রা বাড়ে। রাজউক ও ফায়ার সার্ভিস বিভাগ তাদের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কোন পদক্ষেপ নেয়নি। অবশ্য তারা এ নিয়ে কোন কাজও করে না।
×