ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

চিরচেনা চেহারায় রাজধানী ঢাকা

ঈদ শেষে ফিরেছে মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে বেদম ছোটাছুটি

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৩ জুলাই ২০১৭

ঈদ শেষে ফিরেছে মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে বেদম ছোটাছুটি

মোরসালিন মিজান ॥ ঈদের সরকারী ছুটি তিনদিনের। তিনদিনের বটে। টেনে এটিকে লম্বা করা হয়। বহুদূরের মফস্বল শহর। গ্রামের বাড়ি। যাওয়া-আসার ব্যাপার আছে। তিনদিনে হয় না। ফলে ঢাকার বাইরে যারা ঈদ করেন তারা যতটুকু সম্ভব সময় বাড়িয়ে নেন। এ বছরও তাই হয়েছে। ঈদের সরকারী ছুটি গত বুধবার শেষ হলেও, বহু মানুষ কাজে যোগ দেননি। বুধবারের মতো বৃহস্পতিবারও নামমাত্র চালু ছিল অফিস আদালত। আর শুক্র এবং শনিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। এমন সুযোগ কেউ হাতছাড়া করে? সঙ্গত কারণেই এতদিন ফাঁকা ছিল রাজধানী শহর। আর তারপর রবিবারে এসে দেখা গেল, পুরোদমে চালু হয়েছে অফিস আদালত শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আগের মতোই কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে রাজধানী শহর ঢাকা। গত ২৬ জুন উদযাপিত হয় মুসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদুল ফিতর। তার আগে থেকেই নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে থাকে মানুষ। ছেড়ে যেতে থাকে রাজধানী শহর। দেখতে দেখতে খালি হয়ে যায় ঢাকা। ঈদের একদিন আগে থেকে গত শনিবার পর্যন্ত চলমান ছিল এ অবস্থা। আর এখন সরব। অনেকদিন তালাবদ্ধ থাকা ঘরের দ্বার খোলার শব্দ কানে আসছে। কখনও ভোর বেলায়। কখনও মধ্যরাতে। অন্ধকার হয়ে থাকা বাড়িগুলোতে আলো জ্বলে উঠেছে। ভুতবাড়ি আর মনে হয় না। এমনকি বারান্দার গাছগুলো পর্যাপ্ত জল পেয়ে আগের মতোই সজীব সহেজ হয়ে উঠছে। চারপাশের বাসাবাড়ি, অলিগলির দিকে তাকিয়ে এমন আরও অনেক পরিবর্তন এখন দেখা যাচ্ছে। শহরের চিরচেনা রূপটি বেশি দৃশ্যমান হচ্ছে রাস্তায়। রবিবার বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে দেখা যায়, জীবিকার প্রয়োজনে শুরু হয়ে গেছে বেদম ছোটাছুটি। ঈদের নতুন জামা ঘামে ভেজা। রাস্তা পারাপারের সময় গত কয়েকদিন ডান বামে অনেকে তাকাননি। এদিন লম্বা সময় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে তাদের। পথচারীরা লাল-সবুজ-হলুদ বাতি দেখে তবেই রাস্তা পার হয়েছেন। সড়কে যানবাহনের সংখ্যাও বেড়েছে। গণপরিবহনের সংখ্যা গত কয়েকদিনের তুলনায় ছিল অনেক বেশি। ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও কম নয়। ব্যস্ত রাস্তাগুলোতে একটু পরপর যানজট লেগে যাচ্ছিল। কখনও যানজট। আবার কখনও ফাঁকা রাস্তা। ঈদের পর রবিবারই প্রথম খুলে দেয়া হয় স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ইউনিফর্ম পরা ছেলেমেয়েদের ছোটাছুটি তাই খুব দেখা গেছে। কারও কাঁধে স্কুলের ব্যাগ। কারও কাঁধে কলেজের খাতাপত্র। তেজগাঁও এলাকা দিয়ে আসার সময় হলিক্রস গার্লস হাইস্কুল, বটমলি হোম গার্লস হাইস্কুল, তেজগাঁও গবর্নমেন্ট হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রাণচাঞ্চল্য দেখে তো মন ভরে গেল। কত দিন পর এমন দেখা! স্কুলের সামনেই কথা হচ্ছিল বটমলি হোমের সাদিয়া অন্তরা ও ঐশীর সঙ্গে। তারা জানালো, ঈদের পর এটি তাদের প্রথম ক্লাস। অনেকদিন পর আজ বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে। তাই খুব উচ্ছ্বসিত বলেও মনে হলো তাদের। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও মোটামুটি খোলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাফতরিক কাজকর্ম চললেও, ক্লাস শুরু হবে ৯ জুলাই থেকে। মতিঝিল অফিসপাড়ায় পৌঁছতে দুপুর। ততক্ষণে গোটা এলাকা আগের মতোই কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠেছে। বিভিন্ন ব্যাংক বীমার হেডঅফিসে পুরোদমে কাজ চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তার কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, ব্যস্ত সময় পার করছেন সবাই। ভবনের ২৫ তলায় বসেন ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ। কথা প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ঈদের ছুটির পর আজই সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি। ৯০ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী যোগ দিয়েছেন। কেউ বিদেশে গিয়েছেন হয়ত। কেউ হয়ত গ্রাম থেকে এখনও আসতে পারেননি। তবে তাদের জন্য কাজ আটকে নেই। পুরোদমে চলছে। দিলকুশায় বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনÑ বিসিআইসির হেডঅফিস। ভবনের নিচতলায় বেশ কয়েকটি লিফট। প্রায় প্রতিটি লিফটের সামনে দীর্ঘ লাইন। দেখে ভেতরের ব্যস্ততাটুকু অনুমান করা হয়ে যায়। কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, ঈদে সবাই একটু বেশি ছুটি কাটানোর চেষ্টা করেন। তবে আমি অতো সুযোগ দেয়ার পক্ষপাতি নই। কাজের প্রতি আগ্রহ ধরে রাখাটা জরুরী। ঈদের পর তার নিজের অফিসের কাজ পুরোদমে চলছে বলে জানান তিনি। এদিকে, রবিবারও ঢাকায় ফিরতে দেখা গেছে বহু মানুষকে। বিভিন্ন গন্তব্য থেকে ছেড়ে আসা বাস ট্রেন লঞ্চগুলো সবই ছিল পরিপূর্ণ। এদিন কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের স্রোত। প্রায় সকলেই ঈদ করে ফিরছিলেন। সিলেট থেকে আসা আমিনুল হক বললেন, ঈদের বন্ধের মধ্যেই ছোট বোনের বিয়ের দিন ধার্য করা হয়েছিল। বিয়ের নানা আনুষ্ঠানিকতা। সবশেষ করে আসতে দেরি হয়ে গেল। রাজশাহী থেকে ঈদ করে ফেরা মাহমুদা আক্তার বললেন, আমার স্বামী সরকারী চাকরি করেন। তিনি আগেই ঢাকায় ফিরেছেন। আমি আমার দুই ছেলেকে নিয়ে ফিরেছি। সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, সদরঘাট এবং গাবতলী বাস-টার্মিনালও লোকে-লোকারণ্য। ছোট বড় মাঝারি সব ধরনের বাস ও লঞ্চ যাত্রীভর্তি হয়ে আসছে। সবই বলে দেয়, আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠছে রাজধানী শহর। ফিরছে চিরচেনা চেহারায়।
×