ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৩০ জুন ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ ঈদ শুরু হচ্ছে। ঈদ শুরু হলো। আর শেষ? শেষের কথা আসছে কেন? না আসলেই যেন বেঁচে যান সবাই! ঈদের শুরু আছে কেবল। শেষ নেই! হয়ত তাই সোমবার ঈদ উদযাপনের পর এখনও তার রেশ রয়ে গেছে। শহর ঢাকার সর্বত্রই উৎসবের আমেজ। যার সঙ্গেই দেখা হচ্ছে, কোলাকোলি। বুকে বুক মেলানো। কুশল বিনিময়। আত্মীয় পরিজনের বাসায় নেমন্তন্ন খাওয়া মোটামুটি শেষ হলেও, ফাঁকা ঢাকায় ঘুরে বেড়াতে বাধা নেই কোন। খোলা জায়গায় পার্কে বিনোদনকেন্দ্রে ভিড়। যে যার মতো করে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন। এত বড় হাতিরঝিলের পুরোটা অধিকার করে নিয়েছেন বিনোদন প্রত্যাশীরা। ধানম-ি লেক ক্রিসেন্ট লেক লালবাগ কেল্লার মতো জায়গাগুলো ঘুরে দেখা যায়, মানুষ আর মানুষ। অভিজাত এলাকার রেস্তরাঁগুলোও প্রিয় ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছে। আড্ডা গল্প আর মুখরোচক খাবার। বেশ কেটে যাচ্ছে সময়। গত দুই দিন ধানম-ি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ আনন্দের নতুন সঙ্গী এসব রেস্তরাঁ। সুন্দর গোছানো পরিবেশ। আকৃষ্ট না হয়ে পারা যায় না। অবশ্য ঈদের সরকারী ছুটি শেষ হওয়ার পর পরই খুলেছে রাজধানীর অফিস-আদালত। সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ শুরু হয়ে গেছে। গতি কম। আগের মতো মুখর নয়। তবে কাজ শুরু হয়ে গেছে। বহু কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যক্তিগত ছুটি বাড়িয়ে নিয়ে গ্রামে গিয়েছিলেন। তাদের অনেকেই এখনও ফেরেননি। আগামী রবিবারের মধ্যে সবাই স্ব স্ব কর্মস্থলে যোগ দেবেন, অনুমান করা যায়। ঈদের আগে থেকেই আলোচনায় যৌথ প্রযোজনার সিনেমা। শুধু আলোচনা নয়। আন্দোলন সংগ্রাম। সংগ্রামীরা অভিযোগ করছিলেন, ‘নবাব’ ও ‘বস-টু’ যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা মানেনি। ছবি দুটি কিছুতেই মুক্তি দেয়া যাবে না। দিলে ‘আগুন জ্বলবে’ ধরনের হুঁশিয়ারি আসছিল। এখানেই শেষ নয়, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজ ও নায়ক শাকিব খানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে তাদের এফডিসিতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু এতকিছুর পরও ছবি দুটি মুক্তি পায়। এবং তার পর থেকেই দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। দেশের অধিকাংশ হলে প্রদর্শিত হচ্ছে ‘নবাব’ ও ‘বস-টু।’ ‘অবাঞ্ছিতদের’ পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন সিনেমাপ্রেমী দর্শক। এক রকম হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। টিকেট পাওয়া যাচ্ছে না। সর্বত্রই টিকেটের জন্য হুলস্থুল অবস্থা। এমনকি ঢাকার যেসব হলে যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র দেখানো হচ্ছে, কোনটিতেই আসন খালি নেই। বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘নবাব’ দেখার জন্য গত চারদিন ধরে চেষ্টা করেও অনেকে ব্যর্থ হয়েছেন। ব্যর্থদের একজনের সঙ্গে ঈদের পরদিন কথা হচ্ছিল। টিকেট কাউন্টারের ভিড় ঠেলে ক্লান্ত মাসুদ বলছিলেন, অন্য লোককে দায়িত্ব দিয়েছিলাম টিকেট সংগ্রহের। তিনি ব্যর্থ হওয়ায় আমি নিজে এসেছি। এরপরও টিকেট পাওয়া গেল না। ভাল নির্মাণের ফলেই এমনটি হচ্ছে জানিয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী বলেন, যৌথ প্রযোজনার ছবি দুটির ট্রেলার দেখার পর থেকেই ভাল কিছুর আশা করছিলাম। যারা দেখেছেন তারাও বলছেন, দারুণ হয়েছে। প্রতি বছর ঈদে বড় পর্দায় হলিউডের মুভি দেখেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তারাও বাংলা সিনেমার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। রাকিব ও সোহানা ‘নবাব’ দেখে দারুণ মুগ্ধ। নবদম্পতির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, হলিউড বলিউডের মুভি তারা নিয়মিতই দেখেন। তবে বাংলা চলচ্চিত্রের প্রতি অন্যরকম প্রেম। তেমন ছবি পান না বলে দেখেন না। এবার চাহিদা যথেষ্ট পূরণ হয়েছে বলে জানান তারা। বুধবার দেয়া তথ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিটিও যৌথ প্রযোজনার পক্ষে গেছে। ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নবাব’ এবং ‘বস-২’ -এর বেলায় যৌথ প্রযোজনার নীতি যথাযথভাবে অনুসৃত হয়েছে। সিনেমা মুক্তির সামগ্রিক প্রক্রিয়ায় কোথায়ও সরকারে পক্ষ থেকে কোন প্রভাব বিস্তার করা বা আইনের বাইরে পা ফেলার সুযোগ নেই। ঈদে রাজধানীতে তেমন কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। তবে বৃহস্পতিবার গাবতলী পশুরহাটে বড় ধরনের অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। সকাল ১০টার দিকে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণেও আনে। কিন্তু ততক্ষণে রাজধানীর সবচেয়ে বড় এ পশুরহাটের তিনটি ছাউনি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। হঠাৎ লাগা আগুনে জীবন্ত দগ্ধ হয়েছে ১৩টি গরু ও ২৬টি ছাগল। উপায় না দেখে আগুনে দগ্ধ আরও ১৪টি গরু তাৎক্ষণিকভাবে জবাই করা হয়। দুর্ভাগ্যজনক যে, এ অবস্থায়ও অন্তত অর্ধশত গরু-ছাগল চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ।
×