ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এ্যান্টিবায়োটিক

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৯ জুন ২০১৭

এ্যান্টিবায়োটিক

আজকাল কথায় কথায় এ্যান্টিবায়োটিক চলে। ছোট-বড়, বয়োজ্যেষ্ঠ, নারী ও শিশু নির্বিশেষে। হাত বাড়ালেই মেলে এ্যান্টিবায়োটিক। অধিকাংশ রোগী নিজেরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দ্রুত রোগ নিরাময়ের জন্য এ্যান্টিবায়োটিক কিনে খান। ফার্মেসি বা ওষুধের দোকানে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র ব্যতিরেকে এ্যান্টিবায়োটিকসহ কিছু ওষুধ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কে কার কথা শোনে? গ্রামগঞ্জ তো বটেই, এমনকি রাজধানীতেও অধিকাংশ দোকানেই মেলে প্রেসক্রিপশন ছাড়া নিষিদ্ধ ওষুধ, এমনকি এ্যান্টিবায়োটিক, ঘুমের ওষুধ পর্যন্ত। ভাইরাল ফিভার, সাধারণ সর্দি-কাশি-জ্বর হলেও এ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের অভিযোগ উঠছে হামেশাই। নানাবিধ এ্যান্টিবায়োটিকের অপ্রয়োজনীয় অপব্যবহারের ফলে রোগীর শরীরে আর তা কাজ করছে না। সেক্ষেত্রে হয় রোগী স্বাভাবিকভাবেই ভাল হয়ে উঠছে অথবা এ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে অন্যবিধ অসুখে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) উদ্যোগে পরিচালিত এ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার ও কার্যকারিতা নিয়ে এক সমীক্ষায় দেখা যায়, দেশে এখন ৫৫ দশমিক ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে এ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর। এ নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল এ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স পার্টনারশিপ (জিএআরপি) এবং সেন্টার ফর ডিজিজ ডায়নামিক্স, ইকোনমিক্স এ্যান্ড পলিসি (সিডিডিইপি) শীর্ষক দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। তারা সরকার তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে চাপও দিয়েছে। এর অংশ হিসেবেই গত ৩১ মে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর আনুষ্ঠানিকভাবে এক পরিপত্র জারি করেছে ‘প্রেসক্রিপশন ছাড়া এ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি নিষেধ।’ অতঃপর এই নির্দেশিকা যেন রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র ওষুধের দোকানে কঠোরভাবে পালিত ও অনুসৃত হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনকে। রেডিও-টিভিসহ সর্বস্তরের গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে। এর পাশাপাশি ওষুধ কোম্পানিগুলোকেও মানসম্মত এ্যান্টিবায়োটিকসহ ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের ব্যাপারে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। মোটকথা, এ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার ও বিক্রি বন্ধ করতে হবে যে কোন মূল্যে। মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে ব্যর্থ হওয়ায় সম্প্রতি হাইকোর্ট ২৮টি কোম্পানিকে তিন রকম ওষুধের উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। অথচ বাংলাদেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে যে কয়েকটি খাত নিয়ে গর্ববোধ করতে পারে ওষুধ শিল্প তার অন্যতম। বর্তমানে এই শিল্প খাতটি প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চলেছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ ওষুধ উৎপাদিত হয় দেশেই। আরও যা শ্লাঘার বিষয় তা হলো, বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশে উৎপাদিত ওষুধ রফতানিও হচ্ছে। তবে এ কথাও সত্যি যে, বেশ কয়েকটি নামীদামী ওষুধ কোম্পানির পাশাপাশি কিছু অখ্যাত কোম্পানিও আছে, যারা তৈরি করছে মানহীন ওষুধ, এমনকি এ্যান্টিবায়োটিক। কোন কোন কোম্পানির ভেজাল ওষুধ খেয়ে শিশুসহ বয়স্কদের মৃত্যুর অভিযোগও আছে। অভিযুক্ত কোম্পানির মালিকদের জেল-জরিমানাসহ কারখানা বন্ধ করেও দেয়া হয়েছে। দুঃখজনক হলো, এরপরও মানহীন ওষুধ তৈরি ও বাজারজাতকরণের অভিযোগ উঠেছে কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে। ওষুধ শিল্প একটি স্পর্শকাতর বিষয়। মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্নটি এর সঙ্গে জড়িত ওতপ্রোতভাবে। পাশাপাশি খাদ্য ও পথ্যের বিষয়টিও প্রসঙ্গত উঠতে পারে। ভেজাল খাদ্য যেমন মানুষের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে; অনুরূপ ভেজাল, নকল বা মানহীন ওষুধ বিপন্ন করে তুলতে পারে মানুষের জীবনকে। আর তাই ওষুধের মান নিয়ে হেলাফেলা তথা শৈথিল্য প্রদর্শনের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই।
×