ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উৎসব-পোশাকের দেশী বাজার

প্রকাশিত: ০৪:০২, ১৭ জুন ২০১৭

উৎসব-পোশাকের দেশী বাজার

তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম রয়েছে। এই খাত থেকে আমাদের অর্থনৈতিক অর্জনও বিশাল। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ তৈরি পোশাকের চাহিদা মেটানোয় ইতোমধ্যে বিরাট অবদান রেখেছে ঢাকার পাশেরই একটি এলাকাÑ সে খবর অনেকেরই হয়ত জানা নেই। শুধু ঈদ মৌসুমে নয়, পয়লা বৈশাখসহ নানা পালাপার্বণ ও উৎসবে দেশের মানুষের পোশাকের চাহিদা মেটাচ্ছে কেরানীগঞ্জ। এখানে গড়ে উঠেছে প্রায় আট হাজারের মতো পোশাক কারখানা। দেশের কাপড়েই দেশের মানুষের চাহিদা পূরণÑ বিষয়টি সত্যিই স্বস্তির ও প্রশংসাযোগ্য। সারা দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের দোকানিরা নিয়মিত এখান থেকে পোশাক কিনছেন। ঢাকার অদূরে বুড়িগঙ্গার তীরঘেঁষা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আগানগর এলাকাটি এখন পাইকারি ক্রেতাদের পদভারে মুখর। ঈদ ক্রমশ কাছে চলে আসছে। তাই এলাকাটি হয়ে উঠেছে পোশাক মার্কেট-কারখানার এক বিশাল বাণিজ্যনগরী। এলাকার প্রতিটি মার্কেট, দোকান এবং কারখানায় এখন শুধু রং-বেরঙের পোশাক। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, এবার তারা হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য করতে সমর্থ হবেন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে আমাদের অর্থনৈতিক রিপোর্টার জেনেছেন, সারাদেশের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশই পূরণ করছে কেরানীগঞ্জের গার্মেন্টস কারখানাগুলোর পোশাক। প্রতিটি উৎসবে এখানকার কারখানায় তৈরি হয় নিত্য-নতুন ডিজাইনের পোশাক। এবার ঈদের জন্য থ্রি-পিস, ফ্রক, মেয়েদের বাহারি পোশাক, ছোটদের রং-বেরঙের পাজামা-পাঞ্জাবি, বড়দের জন্য পাঞ্জাবি, জিন্স প্যান্টসহ বিভিন্ন পোশাকের সমাহার লক্ষণীয়। কেরানীগঞ্জ দোকান মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি আমাদের প্রতিবেদকের কাছে তুলে ধরেছেন দেশের সবচেয়ে বড় দেশী পোশাকের বাজারের বিশদ চিত্র। এখানকার পাইকারি দোকানগুলোতে ২৫০ থেকে ৭০০ টাকায় জিন্স প্যান্ট বিক্রি হয়, যার চাহিদা প্রচুর। সেগুলোই খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকায়। এসব প্যান্টের ডিজাইন ও কাপড়ের মান আন্তর্জাতিক মানের। এছাড়া বিদেশ থেকে কাপড় এনেও এখানে পোশাক তৈরি হয়। এবার কেরানীগঞ্জে চীন ও ভারতীয় ডিজাইনের পোশাক তৈরি হয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে। এ ধরনের পোশাকে বেশি মাত্রায় ডিজাইন থাকে। অবশ্য এমন ডিজাইনের কারণে উৎপাদন হ্রাসের পাশাপাশি পোশাকের দাম বেড়ে যায়। কেরানীগঞ্জের কারখানাগুলোতে তৈরি দেশী পোশাকের মান সন্তোষজনক। টানা ২০-২৫ বছর ধরে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে এমন রমরমা পোশাক শিল্প। শোরুম রয়েছে দুই হাজারের মতো। কারখানাগুলোতে কাজ করেন ৫০ হাজার নারীসহ অন্তত দুই লাখ শ্রমিক। স্যান্ডো গেঞ্জি ছাড়া ছেলেমেয়েদের বাকি সব ধরনের পোশাকই এখানে তৈরি হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, দেশের স্বল্পবিত্তের মানুষের উৎসব পোশাকের চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে ব্যবসায়ীরা এখানে গড়ে তুলেছেন প্রয়োজনীয় গার্মেন্ট শিল্প। যতœ ও নিষ্ঠার জন্য এই শিল্প ধীরে ধীরে বিকশিত হয়েছে এবং দেশের মানুষের সুনাম অর্জন করেছে। একই সঙ্গে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানও হচ্ছে এখানে। দেশের টাকা দেশেই রাখাÑ অর্থনীতির এই ইতিবাচক দিকটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। দেশের মানুষ সীমিত ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য উৎসব-পোশাক কিনতে পারছেন। এমন একটি উদ্যোগ গ্রহণ ও সুনামের সঙ্গে তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য কেরানীগঞ্জের পোশাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠাকারী ব্যবসায়ীদের প্রশংসা প্রাপ্য। দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার কাজে তাদের অবদান খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই।
×