ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেহাল আবহাওয়া অফিস

প্রকাশিত: ০৪:১০, ১৬ জুন ২০১৭

বেহাল আবহাওয়া অফিস

৫২ বছরের পুরনো যন্ত্রপাতি ও জরাজীর্ণ ভবনে কার্যক্রম চলছে বরিশাল আবহাওয়া অফিসের। অথচ সেই আদিকাল থেকেই দেশের দক্ষিণাঞ্চল উপকূলীয় এলাকা বিধায় দুর্যোগপ্রবণ, এমনকি প্রায়ই দুর্যোগকবলিত হয়ে থাকে। সবচেয়ে যা দুঃখজনক তা হলো, রাডার না থাকায় এই কেন্দ্র থেকে ঘূর্ণিঝড়ের কোন পূর্বাভাস দেয়া আদৌ সম্ভব হয় না। তাকিয়ে থাকতে হয় ঢাকা আবহাওয়া অফিসের দিকে। বরিশাল বিভাগে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আদৌ হবে কি হবে না তা জানানো হয় ঢাকা থেকে। ১৯৬৫ সালে বরিশালের কাউনিয়া সংলগ্ন কাশিপুরে চার একর জমিতে স্থাপন করা হয় বরিশাল আবহাওয়া অফিস। সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় সবকিছু তেমনই আছে। ভবনটিও হয়ে পড়েছে জরাজীর্ণ ও সেকেলে। যন্ত্রপাতিও বেশিরভাগই অকেজো ও মরচে ধরা। সময় সময় কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতি দেয়া হলেও বিদ্যুত ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেসব পড়ে থাকে। বর্তমানে এই কেন্দ্র থেকে কেবল আবহাওয়া তথ্য, পাইলট বেলুন বা আবহাওয়া যাচাই বেলুন, পর্যবেক্ষণ ও তথ্য সরবরাহ করা ব্যতিরেকে আর কোন কাজ হয় না বললেই চলে। সর্বোপরি অফিসটিতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় বিদ্যুত থাকে মাত্র ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা। বাকি সময় যন্ত্রপাতিগুলো প্রায় বন্ধ থাকে। বিদ্যুতবিহীন অবস্থায় আবহাওয়ার গতি-প্রকৃতি, তাপ-চাপের পরিবর্তন, বৃষ্টিপাত, বাতাসের আর্দ্রতা, গতিবেগ, মেঘের মনমর্জিÑ প্রায় কিছুই জানার উপায় নেই। মোমবাতি জ্বালিয়ে অথবা টর্চ জ্বেলে জরুরী পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। লোকবল সঙ্কটও তো আছেই। বরিশাল আবহাওয়া অফিসের চিত্র যে অন্যত্রও মিলবে না এমন নয়। অথচ বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের অবস্থান নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত অঞ্চলে। এমনকি বর্তমানে বিশ্বে জলবায়ু ও আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণে যে কয়টি দেশ রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকিতে, বাংলাদেশের অবস্থান তার মধ্যে ষষ্ঠ। সুতরাং আবহাওয়ার পূর্বাভাসের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার অবকাশ নেই। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বর্তমানে প্রায় নির্ভুল আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব। এমনকি জাপান, সিঙ্গাপুর, ভারতের আবহাওয়া বিভাগও অনেক আধুনিক ও উন্নত। সে অবস্থায় বাংলাদেশেরও পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। এই খাতের উন্নয়নে দেশী-বিদেশী অনুদানও সহজলভ্য। বিশ্বের একাধিক দেশের সর্বাধুনিক আবহাওয়া উপগ্রহ ক্রমাগত আবর্তন করে চলেছে পৃথিবীর কক্ষপথ। সেসব থেকে প্রতি মুহূর্তে তথ্য-উপাত্ত প্রেরিত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহে। বাংলাদেশেরও উচিত হবে এই অত্যাধুনিক সঙ্ঘে যোগ দেয়া। বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ নেই, এমন কথা বলা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। বরং কথা হলো, এই যোগাযোগ ও সম্পর্ক আরও বাড়াতে হবে। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশও এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দেশ ও অংশীদার। বাংলাদেশ সম্পর্কে বহির্বিশ্বে আগ্রহও বিস্তর। সুতরাং নিজেদের প্রয়োজন এবং স্বার্থেই ঢাকা কেন্দ্রীয় অফিসসহ সব আঞ্চলিক কেন্দ্রকে আধুনিক ও মানসম্মত করতে হবে।
×