ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রায়ান ফাং

স্যাটেলাইট এয়ারওয়েভনির্ভর নতুন নেটওয়ার্ক আসছে

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ১০ জুন ২০১৭

স্যাটেলাইট এয়ারওয়েভনির্ভর নতুন নেটওয়ার্ক আসছে

যুক্তরাষ্ট্রের ‘লাইট স্কয়ারড’ নামে একটি কোম্পানি এক দশক আগে এমন একটা কিছু করে সেলফোন শিল্পকে প্রবলভাবে আলোড়িত করতে চেয়েছিল যা কোন ওয়্যারলেস ক্যারিয়ারই আগে করেনি। কোম্পানিটা যেসব এয়ারওয়েভ কক্ষ প্রদক্ষিণরত কৃত্রিম উপগ্রহের জন্য চিরাচরিতভাবে সংরক্ষিত রয়েছে সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে আমেরিকার প্রথম রিটেইল সেলফোন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে চেয়েছিল। ধারণাটি ছিল চাঞ্চল্য সৃষ্টি করার মতো তবে অপরীক্ষিত। প্রধান প্রধান ক্যারিয়ার যেমন ভেরিজন ও এটিএ্যান্ডটি যেখানে অধিকতর লো-ফ্রিকোয়েন্সি এয়ারওয়েভের জন্য লড়ছিল সেখানে লাইট স্কয়ারড হাই ফ্রিকোয়েন্সি ওয়েভ দিয়ে সেল টাওয়ার থেকে গ্রাহকদের স্মার্টফোনে মোবাইল ইন্টারনেট পাঠাতে চেয়েছিল। এভাবে কোম্পানিটি প্রতিযোগিতা এড়িয়ে বৃহৎ কর্পোরেশনগুলোর প্রাধান্যপুষ্ট বাজারে এক নতুন, ক্ষুধার্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চেয়েছিল। কিন্তু দায়দেনা, সমস্যা ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বিরোধের কারণে কোম্পানির পক্ষে এই প্রকল্প নিয়ে আর এগোনো সম্ভব হয়নি। আজ সেই কোম্পানি অনেক ভাঙ্গা-গড়ার মধ্য দিয়ে নতুন করে আবির্ভূত হয়েছে। এর নতুন নাম হয়েছে লিগাডো। এর উচ্চাভিলাষও বিশাল। দশ বছর আগের সেই পরিকল্পনায় সফল হতে পারলে লিগাডো সংযোগ ডিভাইসগুলোর শিল্প বাজারের এক বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। ২০২০ সাল নাগাদ যে বাজার হবে ১১ হাজার কোটি ডলারের। লিগাডো কি করতে চাইছে? লিগাডো সেলফোনের ব্যবহারের জন্য অনুপযোগী বলে দীর্ঘদিন ধরে বিবেচিত হয়ে আসা ভূস্থলভিত্তিক এয়ারওয়েভগুলো কাজে লাগিয়ে বিশ্বের প্রথম ওয়্যারলেস গড়ে তুলতেই শুধু চাচ্ছে না উপরন্তু সেই নেটওয়ার্ককে উত্তর আমেরিকার ওপর কক্ষ প্রদক্ষিণরত একটি স্যাটেলাইটের সঙ্গে যুক্ত করতেও চাচ্ছে। এটা মূলত শিল্প গ্রাহকদের কাজে লাগবেÑ ব্যক্তি পর্যায়ের ভোক্তাদের নয়। তাই বলে এই হাইব্রিড নেটওয়ার্ক থেকে গড় আমেরিকানরা কোন লাভবান হবে না তা নয়। এটা ঠিক আরেকটি সেলফোন নেটওয়ার্ক নয়। বরং সম্পূর্ণ এক নতুন ধরনের সার্ভিস যার অস্তিত্ব এখন পর্যন্ত নেই। যেমন, নতুন ব্যবস্থায় স্বয়ংচালিত গাড়িগুলো নিমেষের মধ্যে জিপিএস লোকেশন রিডিং লাভ করতে পারবে। সে সব রিডিং এতটাই নির্ভুল যে বড়জোর পাঁচ ইঞ্চি তারতম্য হতে পারে। স্বয়ংচালিত মোটরগাড়ি যেখানে আগামীতে মূলধারার যানবাহন হতে যাচ্ছে সেখানে এই পর্যায়ের নির্ভুলতা অর্জন এই শিল্পের জন্য একান্ত প্রয়োজনÑ তা সেটা সমান্তরাল পার্কিংয়ের জন্য হোক আর ৬০ মাইল গতিতে ছুটন্ত গাড়ির সঠিক লেনে থাকার জন্যই হোক। লিগাডোর স্যাটেলাইট-টেরেস্ট্রিয়াল নেটওয়ার্ক রেল রোড কোম্পানিগুলো বাড়তি সুবিধা পেতে পারে। নেটওয়ার্ক নিখুঁতভাবে লোকেশন বলে দিতে পারার জন্য ট্রেন ডিসপ্যাচাররা ট্রেনের শেষ মাথাটি কোথায় তা সুনির্দিষ্টভাবে জানিয়ে দিতে পারবে। তাতে করে সংঘর্ষ এড়ানো যাবে এবং ট্রেন পরিচালনার দক্ষতা বাড়বে। ট্রেন যাত্রায় নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে। জরুরী হেলিকপ্টার সার্ভিসগুলোও এই নেটওয়ার্ক থেকে লাভবান হতে পারে। লিগাডোর নেটওয়ার্ক ধাপে ধাপে নির্মিত হবে। কোম্পানির মূল স্যাটেলাইট ২০১১ সাল থেকে চালু থাকলেও স্থলভিত্তিক সেল টাওয়ারগুলো এখনও নির্মিত হয়নি। নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতির অপেক্ষায় আছে কোম্পানি। এই নেটওয়ার্কের সুবিধা প্রথম ভোগকারীদের মধ্যে থাকবে টিপিএসসি ও মেট্রো এ্যাভিয়েশনের মতো কোম্পানি, বিভিন্ন বন্দর, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ইউটিলিটি কোম্পানি। নেটওয়ার্কটি কি ধরনের ট্রাফিক পরিচালনা করতে হবে সে অনুযায়ী তার কাজগুলো ভাগ করবে। দ্রুতগতির প্রয়োজন আছে এমন তথ্যে অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট প্যাকেটের জন্য স্যাটেলাইট সংযোগ হবে মূল সংযোগ। আবার রেললাইন পরিদর্শনকালে এরিয়ান ড্রোনের দ্বারা তৈরি ভিডিওর মতো অধিক ব্যান্ডউইথের প্রয়োগের ক্ষেত্রে স্থলভিত্তিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হবে। লিগাডোর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এর অপ্রথাগত নেটওয়ার্ক যার সাহায্যে এটি অর্থনীতির এক নতুন খাতে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। দৈনন্দিন কাজকর্মের জন্য অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যক আমেরিকান এখন ইন্টারনেট অব থিংগস (আইওটি) অর্থাৎ ওয়েবচালিত স্মার্ট ডিভাইস ও এ্যাপ্লায়েন্সের সমষ্টির দিকে ঝুঁকছে। এ অবস্থায় যে ব্রডব্যান্ড প্রোভাইডার যোগাযোগের সর্বক্ষণিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে পারবে সেই প্রচুর টাকা কামাতে পারবে। অন্যান্য টেলিকম কোম্পানিও ইওটির পেছনে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। তবে প্রচলিত সেলুলার ক্যারিয়ারগুলো সব ক্ষেত্রে এ কাজ করতে পারবে না। সেটা পারবে লিগাডোর মতো অপ্রচলিত কোম্পানি। কারণ লিগাডোই হলো প্রথম কোম্পানি যা কিনা স্যাটেলাইট এয়ারওয়েভকে কাজে লাগিয়ে সংকর নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। তাই লিগাডোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার ওপর সারা বিশ্বের নেটওয়ার্ক অপারেটর ও রেগুলেটরদের নিবিড় দৃষ্টি গিয়ে পড়েছে। অনুবাদ ॥ এনামুল হক সূত্র ॥ ওয়াশিংটন পোস্ট
×