ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৪ জুন ২০১৭

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আজ পবিত্র মাহে রমজানের অষ্টম দিবস। মহানবী (স) হাদীস শরীফে এ মাসের মর্যাদা বর্ণনা করতে গিয়ে ইরশাদ করেছেন, এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় আর শয়তানকে করা হয় জিঞ্জিরাবদ্ধ। আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমে শয়তানকে মানব জাতির সুস্পষ্ট শত্রু হিসেবে সতর্ক করেছেন। আজ আমরা এখানে সে শয়তানের দম্ভ ও প্রভাব সম্পর্কে আলোকপাত করব। বিশ্বের সর্বপ্রথম মানুষ ও নবী আদি পিতা হযরত আদমের (আ.) জীবনের সঙ্গে শয়তান নামের এক দাম্ভিকের সংশ্লিষ্টতা চার প্রধান আসমানী গ্রন্থ তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল ও সবশেষ পবিত্র কোরআন অতি জোরালো যুক্তিপূর্ণ ভাষায় ব্যক্ত করেছে। উপরোস্থের দরবারে যুক্তির চেয়ে আনুগত্যই বড় কথা। সাধারণত ছোটদের কাছে বড়দের চাওয়া এটি। এতে কোন অধীনস্থ কর্মচারীর বাধ্যতা-অবাধ্যতা প্রমাণিত হয়। আল্লাহ পাকের দরবারেও এ আনুগত্যের মূল্য অনেক বেশি। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আদম (মানুষ) সৃষ্টির পর ফেরেস্তাদের বললেন, ‘আদমকে সিজদা কর’। সবাই সিজদা করল, কিন্তু ইবলিশ করল না।-(বাকারা)। এরপর আল্লাহ এবং ইবলিশ শয়তানের মাঝে বেশ কথাবার্তা হয়। তিনি শয়তানের কাছে সিজদা থেকে বিরত থাকার কারণ জানতে চাইলেন। কুরআনে তা অতি সুন্দরভাবে এসেছে। সেদিন থেকে শয়তান মানবকূলে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কাজে হরদম ব্যস্ত। তার প্রলোভনে যুগে যুগে আল্লাহর সেরা জীব মানুষ গুমরাহ হয়, জাহান্নামী হয়। কুরআনের বর্ণনা মতে, আসল শয়তানের সাগরেদ ঘরে ঘরে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছিটিয়ে আছে মানুষ, মনুষ্য সন্তান কিংবা নানা সম্পদের ছদ্মবেশে। সুরা সোয়াদ- এর ৭৫ থেকে ৮৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে- (আল্লাহ) বললেন, হে ইবলিশ! আমি যাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছি, তার প্রতি সিজদা করতে তোমাকে কে বাধা দিল? তুমি কি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলে, না তুমি উচ্চ মর্যদাসম্পন্ন? ইবলিশ বলল আমি আদম হতে শ্রেষ্ঠ। তুমি আমাকে আগুন হতে সৃষ্টি করেছ এবং তাকে সৃষ্টি করেছ কাদা মাটি হতে। তিনি বললেন, তুমি (আজ থেকে) এখান হতে বের হয়ে যাও, কারণ তুমি অভিশপ্ত এবং তোমার ওপর আমার এই অভিশাপ স্থায়ী হবে কর্মফল দিবস পর্যন্ত। সে বলল, হে আমার প্রভু! তুমি আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দাও। তিনি বললেন, যাদের অবকাশ দেয়া হয়েছে তুমি তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হলে-অবধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত। ইবলিশ বলল, তোমার ইজ্জতের কসম! আমি তাদের (মানুষদের) সকলেরই সর্বনাশ সাধন করব। তবে তাদের মধ্যে বিশুদ্ধমনা বান্দাদের নয়। প্রভু বললেন, আমিই সত্য এবং আমি সত্যই বলছি যে, তোমার ও তোমার অনুসারীদের দ্বারা আমি জাহান্নাম পূর্ণ করবই।’ (শয়তান বলল) আমি তাদের জন্য তোমার সরল পথে বসে থাকব। তারপর নিশ্চয় আমি তাদের সম্মুখ হতে ও তাদের পশ্চাৎ হতে এবং তাদের দক্ষিণ হতে এবং তাদের বাম হতে তাদের কাছে উপস্থিত হব এবং (তখন) তুমি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞ পাবে না।’-(আ-রাফ-১৭)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে মা’আরিফুল কুরআনে বলা হয়েছে- মানুষের ওপর শয়তানের হামলা চতুর্দিকে সীমাবদ্ধ নয়, আরও ব্যাপক। হাদীসের এ বর্ণনাও সত্য যে, শয়তান মানবদেহে প্রবেশ করে রক্তবাহী রগের মাধ্যমে সমগ্র দেহে হস্তেক্ষেপ করে।’-(পৃঃ অখ- ৪৩৩)। এরপর আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা শয়তানের উদ্দেশে বললেন, যাও, জাহান্নামেই তোমার সম্যক শাস্তি এবং তাদের জন্যও সেই শাস্তি- যারা তোমার অনুসরণ করবে। তোমার আহ্বানে ওদের মধ্য থেকে যাকে পার সত্যচ্যুত কর, তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী দিয়ে ওদের আক্রমণ কর এবং ওদের ধনে ও সন্তান-সন্ততিতে শরিক হয়ে যাও আর তাদের (যত পার) প্রতিশ্রুতি দাও। (বাস্তবিক পক্ষে) শয়তান তাদের যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা ছলনা মাত্র। আমার সত্যিকার বান্দাদের ওপর তোমার কোন ক্ষমতা নেই। কর্মবিধায়ক হিসেবে তোমার প্রতিপালকই যথেষ্ট।’ উপরিউক্ত আয়াতে মানুষের ধনসম্পদ সন্তান-সন্ততির মধ্যে শয়তানের শরিকানার অর্থ বিখ্যাত কুরআন ব্যাখ্যাকারী সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের (রা.) মতে এই যে, ধনসম্পদ অবৈধ হারাম পন্থায় উপার্জন করা অথবা হারাম কাজে ব্যয় করাই হচ্ছে ধনসম্পদে শয়তানের শরিকানা। সন্তান-সন্তুতির মধ্যে শয়তানের শরিকানা কয়েকভাবে হতে পারে। যেমন: সন্তান অবৈধ ও জারজ হলে, সন্তানের মুশরিকসূলভ নাম রাখা হলে, তাদের লালন-পালনে অবৈধ পন্থায় উপার্জন করলে-( তাফসীরে কুরতুবী)। আল কুরআনের বর্ণনানুযায়ী শয়তান একজন হলেও সে তার প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে ঘরে ঘরে, তারই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে আছে দেদার আদম-সন্তান। তাদের উৎপাতেই সমাজে ঘটে বিশৃঙ্খলা, অশান্তি আর যাবতীয় বিভ্রান্তি।
×