ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় বাজেট ২০১৭-১৮

প্রকাশিত: ০৪:০২, ৪ জুন ২০১৭

জাতীয় বাজেট ২০১৭-১৮

বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন। একটানা ৯ বছর বাজেট দেয়ার মাধ্যমে রেকর্ডও গড়লেন অর্থমন্ত্রী। অনেক আশাবাদ আছে এই বাজেটে, আছে উচ্চাভিলাষ। সম্ভাবনাময় আগামীর স্বপ্ন দেখিয়েছেন তিনি। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপও গ্রহণ করেছেন। পদক্ষেপগুলোর বাস্তবায়নে তিনি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ এমনটাই মনে হয়েছে। বাজেটে বিপুল ব্যয়ের কথা যেমন আছে, তেমনি আছে উপার্জনেরও পথনির্দেশ। অন্যবারের তুলনায় এবার বাজেটের আকার বড় হলেও এটি বিগত বাজেটসমূহের ধারাবাহিকতারই অংশ। বাংলাদেশ বিশ্বের জনবহুল দেশগুলোর একটি। আমাদের জাতীয় আয় বাড়ছে, বাড়ছে অর্থনীতির আকারও। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত। তাই প্রতিবছরই বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। বাজেট হচ্ছে কোন সরকারের উন্নয়ন কৌশলের বাস্তবায়নের ভিত্তি। অতীতে দেখা গেছে বাজেট প্রণয়ন করা হলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই অবশ্য বাজেটকে শিল্প ও ব্যবসাবান্ধব হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এই বাজেটকে আমরা ‘করবান্ধব’ হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা করলে আমরা দেখব, উন্নয়নের মহাসড়কে দেশের গতি বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন বাড়তি অর্থ। অর্থ সংগ্রহের নানা খাত বের করা অর্থমন্ত্রীর একটি বিশেষ দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনের জন্য অর্থ সংগ্রহের নানা উপায় তিনি খতিয়ে দেখেছেন। ফলে ১৫ শতাংশ হার অটুট রেখে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের ঘোষণা দিতে হয়েছে তাকে। সেইসঙ্গে কর আদায়ের বিদ্যমান খাতগুলোতে কোন ছাড় দেয়া সম্ভব হয়নি। বরং ব্যাংকে রাখা আমানতের দিকেও দৃষ্টি দিতে হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এজন্য তাকে কিছুটা সমালোচনার মুখে পড়তে হতে পারে। আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এই বাজেটের আকার যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে বাজেট ঘাটতি। চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার এই বাজেটে অনুন্নয়ন ব্যয় হচ্ছে ২ লাখ ৪১ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন ব্যয় হচ্ছে এক লাখ ৬৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আকার হচ্ছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। সকল প্রকার কৃষিপণ্যসহ ৫৪৯টি পণ্যকে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে, যা সুবিবেচনাপ্রসূত। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড আর বর্তমান সময় প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নতির শিখরে আরোহণের সময়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়া দেশের সার্বিক অর্থনীতির উন্নয়ন অকল্পনীয়। শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে এবার সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ যথেষ্ট বেড়েছে। এটিকে ইতিবাচকভাবে না দেখার কোন কারণ নেই। আগামী অর্থবছরের বাজেটে একটি লক্ষ্যযোগ্য দিক হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বিভিন্ন ভাতার হার বৃদ্ধি। একই সঙ্গে বাড়ছে সুবিধাভোগীর সংখ্যাও। এক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধারাই হচ্ছেন প্রধান বিবেচনার কেন্দ্র। তাদের কেবল সম্মানী ভাতা বৃদ্ধি নয়, ১০ হাজার টাকা হারে বছরে দুটি উৎসব ভাতা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের উন্নত আবাসন সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে সারাদেশে ১০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এটি বাজেটের বড় ইতিবাচক দিক। লক্ষণীয় বর্তমান সরকারের শাসনামলে প্রতিটি বাজেটেই সামাজিক নিরাপত্তা খাত গুরুত্ব পেয়ে আসছে। ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি কর প্রত্যাহারের দাবিও ইতোমধ্যেই উঠেছে। আশা করি এটি অর্থমন্ত্রী পুনর্বিবেচনা করবেন। অর্থমন্ত্রী এবারের বাজেটকে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ বাজেট হিসেবে আখ্যায়িত করে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়বে না। বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের সর্বোচ্চ দক্ষতার ব্যাপারেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। আমরাও আশাবাদী হতে চাই।
×