ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভয়াবহ জঙ্গী হামলা

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ৩ জুন ২০১৭

ভয়াবহ জঙ্গী হামলা

গত বুধবার, ৩১ মে সকালে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের কূটনীতিক এলাকা জানবাক স্কয়ারে এক শক্তিশালী ট্রাকবোমা বিস্ফোরণে অন্তত ৮০ জন নিহত ও সাড়ে তিন শ’ লোক আহত হয়েছেন। এর বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক এবং হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আফগানিস্তানে নিরাপত্তা পরিস্থিতি যে কতটা নাজুক এ ঘটনা সে সত্যই জানান দেয়। সাম্প্রতিক আফগানিস্তানে আত্মঘাতী হামলার ঘটনা জনমনে বেশ আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। গত মাসের প্রারম্ভে ন্যাটো জোটের একটি সামরিক বহর কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস অতিক্রম করার সময় এর আত্মঘাতী বিস্ফোরণে অন্তত আটজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন। আর এর আগে মার্চে চিকিৎসকের ছদ্মবেশধারী বন্দুকধারীদের হামলায় ৪৯ ব্যক্তি নিহত হন কাবুলে যুক্তরাষ্ট্র্রে দূতাবাসের কাছে একটি সামরিক হাসপাতালে। বুধবারের হামলার দায় যদিও এখনও কোন জঙ্গী গোষ্ঠী স্বীকার করেনি, তথাপি ধারণা করা হচ্ছে এ হামলা আত্মঘাতী জঙ্গীদেরই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ফল। সময় সুযোগ বুঝেই তারা এ হামলা চালিয়েছে কূটনৈতিকপাড়ায়। জার্মান দূতাবাসের প্রবেশ পথেই শক্তিশালী এ বিস্ফোরণ ঘটানো হলেও এতে শুধু জার্মান দূতাবাসই নয়, ফ্রান্স ও তুরস্কের দূতাবাসও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি সড়কে থাকা বহু গাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন দূতাবাস ও আশপাশের ঘরবাড়ির দরজা-জানালা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। এ থেকে স্পষ্ট ধারণা করা যায়, কতটা শক্তিশালী মাত্রার এ বিস্ফোরণ। ঘটনাস্থলে অনেক মানুষের ছিন্নভিন্ন দেহ পড়ে থাকতে দেখে প্রত্যক্ষদর্শী ও সংবাদকর্মীরা হতবিহ্বল হয়ে যান। কেউ কেউ এ বিস্ফোরণকে চিত্রিত করেছেন শক্তিশালী ভূমিকম্প বলে। আসলে ৮০ বা ততোধিক লোক হতাহতের ঘটনা যে বাস্তব সত্যের দিকে আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে তা হচ্ছে তাদের আক্রোশ। কূটনৈতিকপাড়ায় কঠোর নিরাপত্তা বলয় থাকা সত্ত্বেও যে জঙ্গীরা তাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য পূরণে সক্ষম তারই ধারণা পাওয়া যায় এ ঘটনা থেকে। এতদিন হামলাকারীরা তাদের যে লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করেছিল গত বুধবারের ঘটনায় দেখা যায় তারা নিত্য নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমেরিকার গোয়েন্দা বিমানের জঙ্গীদের টার্গেট করে অব্যাহত ড্রোন হামলার সমর্থন ও সহযোগিতার পাল্টা প্রতিশোধ নেয়াই যে এ হামলার মূল উদ্দেশ্য তা সহজেই অনুমেয়। তবে ড্রোন হামলার ব্যাপারে জঙ্গীরা যে প্রতিক্রিয়াই ব্যক্ত করুক না কেন তা সমর্থনযোগ্য নয়। জঙ্গীদের হামলায় নিরপরাধ মানুষই এ পর্যন্ত বেশি আহত-নিহত হয়েছে, যাদের সঙ্গে কোন পক্ষেরই দূরবর্তী কোন সম্পর্ক নেই। নির্বিরোধ নিরপরাধ মানুষ হত্যা করে তাদের প্রতি মানুষের ঘৃণা এবং অসন্তোষই বাড়িয়ে তুলছে। আসলে যুক্তি আর বুদ্ধি যদি আড়ষ্ট হয়, জ্ঞান যদি হয় সীমাবদ্ধ তখন ন্যায়-অন্যায় শুভ-অশুভের কোন পার্থক্যজ্ঞান থাকে না। তালেবান জঙ্গীদের যে অব্যাহত কার্যক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাতে তাদের বর্বর প্রগতিবিরোধী শক্তি হিসেবেই ভাবতে হচ্ছে। সভ্যতার বিন্দুমাত্র লেশ তাদের আচরণে মানসিকতায় প্রতিফলিত হয় না, তারা কারও সহানুভূতি পাবে না। ভেতরে ভেতরে অর্থ-অস্ত্র দিয়ে আইএসআই জঙ্গীদের সহযোগিতা করছে বলে খবর বের হয়, কিন্তু এভাবে হামলা করে তারা কতটা সফল হবে কিংবা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছবে?
×