ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রসূতির কল্যাণে-

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১ জুন ২০১৭

প্রসূতির কল্যাণে-

গত ২৮ মে ‘নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস’ উপলক্ষে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হয়। আলোচনা, র‌্যালি, সেমিনারের আয়োজন করে প্রসূতিদের কল্যাণে মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। নিরাপদ মাতৃত্ব দিবসের আলোচনায় সঙ্গত কারণেই উঠে আসে মা ও অনাগত শিশুর সার্বিক কল্যাণ সাধন। একটি শিশু তার মায়ের জঠরে বড় হওয়া থেকে শুরু করে ভূমিষ্ঠ হওয়া অবধি একজন প্রসূতির যে ধরনের নিরাপত্তার প্রয়োজন তার ঘাটতি মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। ফলে সবার আগে প্রয়োজন মানসম্মত ধাত্রীবিদ্যার। বিভিন্ন হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসূতির জন্য উন্নতমানের শয্যা থেকে আরম্ভ করে প্রসব বেদনার উপশম করার যাবতীয় ব্যবস্থাসহ শিশুকে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পৃথিবীর আলো দেখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে প্রসূতির ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দেয়া উচিত। স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভিন্ন তথ্যে উঠে আসে মাত্র ৫৫% প্রসূতির নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করা হলেও বাকি ৪৫%-এর বেলায় মারাত্মক ঝুঁকিতে প্রসূতি এবং শিশুর জীবন বিপন্নেরও আশঙ্কা থাকে। বিশেষ করে গ্রামগঞ্জে অদক্ষ, অশিক্ষিত ধাত্রীদের হাতে প্রসব করানোর যে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সেখানেই এখনও অনেক মাকে মারাত্মক বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। আবার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এও দেখা যায়, প্রসূতিকে ডাক্তার দেখানো কিংবা চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে পরিবারের পক্ষ থেকে প্রবল আপত্তি তোলা হয়। এমনকি প্রসূতি নিজেও যেতে অনীহা প্রকাশ করেন। এ ধরনের অযৌক্তিক এবং পিছিয়ে পড়ার মানসিকতা পরিহার করে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সব ধরনের সুযোগ গ্রহণ করা পরিবার থেকে আরম্ভ করে সংশ্লিষ্ট সবার নৈতিক দায়িত্ব। এক্ষেত্রে একজন মায়ের দায়িত্ব সব থেকে বেশি। নিজের এবং সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যত তৈরির নিমিত্তে সুস্থ সন্তান প্রসব করে নিজেও নিরাপদ থাকা অত্যন্ত জরুরী। বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে প্রসূতির স্বাস্থ্যসেবার ওপর অধিক নজর দিয়ে এই সেবাকে আরও সম্প্রসারিত, মানসম্মত এবং সবার দ্বারে পৌঁছে দেয়া দেশ ও জাতির কল্যাণে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। প্রসূতি মানেই দেশের ভাবী প্রজন্মের জন্মদাত্রী। সে দায় যেমন একজন মায়ের একইভাবে পরিবারের এবং সমাজের। শুধু আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রয়োগের মাধ্যমে প্রসূতি কল্যাণ সার্বিকভাবে অর্জিত হবে না। যদি, সবার সচেতনতা, দায়বদ্ধতা, কর্তব্যবোধ, মাতৃমঙ্গলের বিষয়টি প্রত্যেককে সজাগ করে তুলতে না পারে। কেবল প্রসবের মুহূর্তটি বিবেচনায় আনলে চলবে না, পাশাপাশি দীর্ঘ দশ মাস মায়ের সযতœ তত্ত্বাবধান, গর্ভকালীন সময়ে হরেক রকম জটিলতা অতিক্রম করাও নিরাপদ মাতৃত্বের একটি বিশেষ পর্যায়। পর্যাপ্ত আহার গ্রহণ, প্রয়োজনীয় ফলমূল, শাক-সবজি মা এবং সন্তানের সুস্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ জরুরী যা নিরাপদ মাতৃত্বকে অনেকখানি নিশ্চিত করবে। নিয়মমাফিক চিকিৎসকের পরামর্শ এবং বিধিনিষেধগুলো যথাযথভাবে পালন করা মায়ের বিশেষ দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এক্ষেত্রে পারিবারিক সহযোগিতাও বিশেষ বিবেচনায় থাকতে হবে। সুতরাং নিরাপদ মাতৃত্ব মানেই গর্ভকালীন অবস্থার শুরু থেকে সন্তান জন্ম দেয়া পর্যন্ত একজন প্রসূতির সব ধরনের আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করার সুযোগ নিশ্চিত করা। সুতরাং প্রসূতি এবং তার সন্তানের সার্বিক কল্যাণ নির্বিঘœ করাই হোক বিশ্ব মাতৃত্ব দিবসের অন্যতম অঙ্গীকার।
×