ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সকল প্রসূতির জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবার অঙ্গীকার

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৯ মে ২০১৭

সকল প্রসূতির জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবার অঙ্গীকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সকল প্রসূতির জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে রবিবার পালিত হয়েছে বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় র‌্যালি, সেমিনার ও আলোচনা সভা। আলোচনায় বক্তারা বলেন, প্রশিক্ষিত ধাত্রীর সঙ্কট রয়েই গেছে। শহরাঞ্চলে হাসপাতাল ও ক্লিনিক ভিত্তিক সন্তান প্রসবের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে অদক্ষ ও অপ্রশিক্ষিত ধাত্রী দিয়েই চলছে সন্তান প্রসবের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এতে ঝুঁকিতে থাকছেন প্রসূতি মা ও শিশু। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাতৃস্বাস্থ্য কর্মসূচী উদ্যোগে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস উপলক্ষে রবিবার জাতীয় পর্যায়ে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ, মোবাইল ফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমে দিবসটির প্রতিপাদ্য প্রচার, অবস্ ও গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের ১৩টি শাখার মাধ্যমে আলোচনা সভা, সেবা প্রদান ও বিভিন্ন কাযক্রম গ্রহণ করা হয়। রবিবার রাজধানীতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে র‌্যালির আয়োজন করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় জেলা এবং উপজেলা ও তদনিম্ন পর্যায়ে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে একটি র‌্যালি শাহবাগ মোড় থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় বক্তারা বলেন, মনিটরিং ব্যবস্থা শক্তিশালী করার পাশাপাশি সকলকে কমিটমেন্ট নিয়ে এগিয়ে যাওয়া দরকার। বর্তমানে বাংলাদেশে মাতৃ মৃত্যুর হার কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নামিয়ে আনা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত সরকার মাত্র ৫৫ শতাংশ মায়ের নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে পেরেছে। বাকি ৪৫ শতাংশ মা এখনো নিরাপদ মাতৃত্ব সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। প্রত্যেকটি মায়ের জন্য নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করা দরকার। সন্তান প্রসব করতে গিয়ে একজন মা মরে যাক তা কেউ চায় না। কারণ প্রতিটি মৃত্যুই অনাকাক্সিক্ষত। নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে নারীর পাশাপাশি পুরুষদেরও সচেতন করতে হবে। কারণ পুরুষরা এখানও পরিবারের কর্তা হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। এ বিষয়ে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেন, মা ও শিশু স্বাস্থ্য এবং কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম সফল করে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন। আরও জোরালো করতে হবে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম। পরিবার পরিকল্প পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে জনসংখ্যা বৃদ্ধির অস্বাভাবিক হার নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। অনেক উন্নতি এসেছে। নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচী বেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে। প্রতিবছর পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার বাড়ছে। র‌্যালি অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশে প্রতিদিন গড়ে ১৪ জন মা প্রসবজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করছেন। এখনও শতকরা ৪২ শতাংশ প্রসব দক্ষ এবং অবশিষ্ট প্রসব বাড়িতে অপ্রশিক্ষিতদের হাতে হচ্ছে। চলমান ৪র্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচীতে (২০১৭-২২) মাতৃস্বাস্থ্যকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সকল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা হাসপাতালসমূহের সঙ্গে ১৫৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সমন্বিত জরুরী প্রসূতি সেবা কার্যক্রম বিদ্যমান আছে। এর পাশাপাশি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রসমূহে সীমিত আকারে এ সেবা প্রদান চলছে। এ ছাড়াও বেসরকারী পর্যায়েও মাতৃস্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ১৫০০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নিরাপদ প্রসব সেবা কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জরুরী প্রসূতি সেবার মান উন্নয়নে স্বাস্থ্য অধিদফতরের আওতাধীন চিকিৎসকদের জরুরী প্রসূতি সেবা প্রশিক্ষণ চলমান আছে। হত দরিদ্র মায়েদের প্রসূতি সেবা নিশ্চিতকল্পে মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কিম ৪১টি জেলার ৫৩ উপজেলায় চালু আছে। চলমান সেক্টর কর্মসূচীর আওতায় প্রতিবছর ১০টি করে উপজেলা সম্প্রসারণ করা হবে। ফলে ২০২২ সালে এর সংখ্যা দাঁড়াবে মোট ১০৩টি উপজেলা।
×