ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

তারবিহীন প্রযুক্তি আরও বেশি তারে বাধা পড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ২৭ মে ২০১৭

তারবিহীন প্রযুক্তি আরও  বেশি তারে বাধা পড়ছে

হেইলি সুকায়ামা ॥ ওয়্যারলেস এয়ারপডগুলো নিয়ে আমি এক অদ্ভুত সমস্যায় পড়েছি। আর সেই কারণে ভ্রমণের সময় ওগুলোকে সঙ্গে নেয়া বাদ দিয়েছি। ওগুলোর কাজে কোন ত্রুটি দেখা দিয়েছে তা নয়। ভালই কাজ করছে। ওগুলো নিয়ে আমি যখন চলি কিংবা লাগেজসহ এয়ারপোর্ট দিয়ে যাই আমি নীরবে ওদের ধন্যবাদ দেই কারণ আমি কখনই কোন ঝামেলার মধ্যে পড়ি না। অথচ ঝামেলার জটে পড়া বিশ্বব্যাপী আমাদের মতো গোবেচারা মানুষদের বিস্ময়কর রকমের এক সাধারণ সমস্যা। অবশ্য আমি যখন গন্তব্যে পৌঁছাই সমস্যাটা তখনই দেখা দেয়। কর্ডবিহীন, স্মার্ট ও রিচার্জেবল সরঞ্জাম মতোই নিজের জীবনে যোগ করি ততই বেশি করে জাগতিক ও বাস্তব সমস্যায় পড়ে যাই। সময় এলে চার্জ দেয়ার মতো অনেক কর্ড আমার এখনও আছে। কিন্তু এর জন্য ওয়্যারলেস প্রযুক্তিতে অন্তর্নিহিত ‘তার থেকে মুক্তির’ গোটা অঙ্গীকারটাই এতে ক্ষুণœ হয়ে যায়, বিশেষ করে যখন আমি বাইরে কোথাও যাই। বেশিরভাগ ভ্রমণের সময় সাধারণত আমি দুটো ফোন একটা ল্যাপটপ বা ট্যাবলেট, একটা স্মার্টওয়াচ বা ফিটনেস ট্র্যাকার, বাড়তি ব্যাটারি প্যাকেট, ওয়্যারলেস হেডফোন এবং একটা পাওয়ার স্ট্রিপ সঙ্গে নেই। বিনা তারে চার্জ হওয়ার মতো ডিভাইস আমার কাছে থাকলেও আমার একটা ওয়্যারলেস চার্জার চাই। আমার একটা কর্ড ব্যাগও আছে যেটা কিনা নিজের টয়লেট্রি কিটের চাইতেও বেশি প্রয়োজন। আমি সহজে সস্তা দামের টুথপেস্ট কিনতে পারি। কিন্তু সেই একই কথা আমি আমার ল্যাপটপ চার্জারের ক্ষেত্রে বলতে পারি না। আমি যদি এমন কারও সঙ্গে ভ্রমণে যাই যে আমার সঙ্গে একই রুমে থাকে তাহলে কে কখন কোথায় তার ডিভাইস চার্জ করে নিচ্ছে দেখলে সেটা ‘সারভাইভার’ ছবির অতি ছোট আকারের সংস্করণ মনে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ল্যাম্পে প্ল্যাগযুক্ত হয়ে থাকার কোন সুযোগ থাকে না। স্বীকার করি এটা হয়ত মূলত প্রথম বিশ্বেরই সমস্যা এবং বুঝতে পারি যে টেক রিপোর্টার হিসেবে আমার জীবন এই সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে আমি একা নই। নতুন রুমে ঢুকে যাচাই করতে গিয়ে যত সংখ্যক ল্যাম্প প্লাগবিযুক্ত অবস্থায় আমি দেখতে পেয়েছি তার ভিত্তিতে এ কথা বলতে পাারি। সমস্যাটা আরও প্রকট আকার ধারণ করে তাদের জন্য যারা মনমুগ্ধকর পুরনো ভবনে থাকে বা বাস করে। সেখানে হয়ত প্রত্যেক রুমে একটা করে আউটলেট আছে। নান্দনিক শিল্পকলার যুগে লোকে ঘড়িতে চাবি দিত- চার্জ দিত না। প্রযুক্তি এত দ্রুত এগিয়ে চলছে যে বিশ্ব তার সঙ্গে তাল রেখে চলতে পারছে না। এসব হলো তারই ক্লাসিক দৃষ্টান্ত। ব্যবহার্য ডিভাইসগুলো সুবিধাজনক করার কাজে দ্রুত ধাবিত হতে গিয়ে গেজেট প্রস্তুত কারকরা ভুলেই গেছে যে তাদের সেই যাত্রাপথে প্রতিটি মানুষকেই সঙ্গে নেয়া প্রয়োজন। কাজেই আমাদের প্রতিশ্রুত ওয়্যারলেস বা তারবিহীন ভবিষ্যত এত কাছেই যেখানে এসে গেছে সেখানে ওই ভবিষ্যতটা এই বাস্তবতার সঙ্গেও যুক্ত যে প্রতিটি তারবিহীন জিনিসেরও চার্জ হওয়ার জন্য তার প্রয়োজন। এ সমস্যার সমাধানের চিন্তা করা কঠিন। সমাধান একটা হতে পারে যদি প্রতিটি গেজেটের এমনভাবে ফরম্যাট করা থাকে যে সেগুলো বিনা তারে চার্জযুক্ত হবে। সেক্ষেত্রে প্রতিটি কফিশপ, হোটেল, মোটেল ও পুরনো আমলের বাড়িতে তারবিহীন চার্জিং প্যাড থাকতে হবে। সমস্যার আরেক দিক দেখা যাক। টেক শিল্প যেখানে আমাদের কাছে কত কিছুই না বিক্রির চেষ্টা করছে যেমন স্মার্ট শার্ট, স্মার্ট টুথব্রাশ, স্মার্ট বেল্ট, স্মার্ট জুয়েলারি, স্মার্ট ওয়ালেট, হেলথ ও ফিটনেস গেজেট সেখানে এই সমস্যাটা আরও প্রকট রূপ নিতে পারে। এসব গেজেটের কোন কোনটিতে এমন ব্যাটারি থাকতে পারে যা চার্জ করার প্রয়োজন পড়ে না। আবার কোনটির ব্যাটারি বদলানো যেতে পারে। অন্যগুলোর হয়ত বদলানোই যাবে না। সেক্ষেত্রে একটি গেজেট পুরনো হয়ে অচল হয়ে গেলে প্রতিবারই অধিক দাম দিয়ে নতুন গেজেট কিনতে হবে। মোদ্দা কথায় আমাদের টেক প্রযুক্তি এখন আমাদের একটি তারের বদলে আরেক তার কেনাবেচা করতে বলছে এবং এক্ষেত্রে নতুনটি আরও বেশি ঝামেলাপূর্ণ হতে পারে। আপাতত আমি যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই আউটলেটের ঘাটতি থাকার সম্ভাবনা থাকে। এ অবস্থায় আমি এনালগ ঘড়ি কিংবা একজোড়া ওয়্যারলেস হেডফোন নিতে চাইব যার মধ্যে অডিও কেবলও আছে। এতে কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে আমি বঞ্চিত হব নিশ্চয়ই। তবে অন্তত এটুকু ব্যাপারে নিশ্চিত থাকব যে যখন প্রয়োজন হবে আমার ব্যবহৃত জিনিসটিকে সঠিক অবস্থায় পাব। সেই সঙ্গে এটাও বলি যে সকালবেলার সময়টা কত জানবার জন্য আমাকে সারাটা সন্ধ্যা অন্ধকারে বসে থাকতে হবে না। অনুবাদ ॥ এনামুল হক সূত্র ॥ ওয়াশিংটন পোস্ট
×