ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাথমিক শিক্ষায়-

প্রকাশিত: ০৩:২৭, ২৬ মে ২০১৭

প্রাথমিক শিক্ষায়-

দেশে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘদিন থেকে ২১ হাজারের বেশি প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ফলে স্বভাবতই এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এর পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে প্রশাসনিক কার্যক্রম। এই অবস্থা চলছে দীর্ঘদিন থেকে। বাস্তবতা হলো, প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকলে স্কুলগুলোতে ব্যাহত হয় সঠিক শিক্ষাকার্যক্রম। সমস্যার সমাধানে পদের শূন্যতা পূরণে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। পদোন্নতির জন্য শিক্ষকদের গ্রেডেশন তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয় পিএসসিতে। মোট শূন্য পদের ৩৫ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ দেয়া হয় সরকারী কর্মকমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে। আর ৬৫ শতাংশের ক্ষেত্রে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি দিয়ে নিয়োগ দেয়া হয় প্রধান শিক্ষক হিসেবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আপাতত প্রাথমিকের ১৬ হাজার সহকারী শিক্ষককে পদোন্নতি দিয়ে অস্থায়ীভাবে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্বে নিয়োগ দিতে যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে। বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে মেধা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার বিষয়টিকে। তবে এটি যেন যথাযথ ও নিরপেক্ষ হয়, সেটি নিশ্চিত করা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এর পাশাপাশি প্রাধান্য দিতে হবে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে ইচ্ছুক সহকারী শিক্ষকের ইংরেজী ভাষা সম্পর্কে জ্ঞানের বিষয়টিকে, যা শিক্ষাদানের পাশাপাশি প্রশাসনিক কার্যক্রম চালাতে সুবিধা হবে। আরও দিতে হবে যথাযথ প্রশিক্ষণ। শিক্ষার্থীদের পাঠদানের নতুন শিক্ষানীতিতে ২০১৮ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বাস্তবায়িত করার সরকারী ঘোষণা থাকলেও আপাতত হচ্ছে না প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষক সঙ্কটের কারণে। ফলে প্রাথমিক শিক্ষা পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করা নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদানের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, অভিজ্ঞ ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা নেই। রাতারাতি এসব গড়ে তোলাও সম্ভব নয়। বাজেট ঘাটতির বিষয়টিও সুবিদিত। মোট কথা, প্রাথমিক শিক্ষা সুনির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমলাতান্ত্রিক ও মনস্তাত্ত্বিক জটিলতায় জড়িয়ে পড়েছে সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রণালয়। ফলে প্রবল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছে সারাদেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষাবিদ, শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। কবে নাগাদ তা বাস্তবায়িত হবে অথবা আদৌ বাস্তবায়িত হতে পারবে কিনা, তাও বলতে পারছে না কেউ। জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে হলে সময় প্রয়োজন। কেননা, এর জন্য লাগবে অর্থ, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, উপযুক্ত শিক্ষক ও প্রশিক্ষণ, তাদের মর্যাদা সর্বোপরি যথাযথ পাঠ্যপুস্তক ও কারিকুলাম। দেশের শিক্ষানীতি নিয়ে স্বাধীনতার পর থেকেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা কিছু কম হচ্ছে না। সবচেয়ে যা দুঃখজনক তা হলো, একটি স্বাধীন দেশের উপযোগী গঠনমূলক ও স্বনির্ভর একমুখী শিক্ষানীতি আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন তো দূরের কথা, প্রণয়ন করা পর্যন্ত সম্ভব হলো না। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষাই চলছে কয়েক স্তরে। একদিকে প্রাথমিক শিক্ষা, অন্যদিকে এবতেদায়ী শিক্ষা ও কওমী মাদ্রাসা। কিন্ডারগার্টেনসহ ইংরেজী মাধ্যমের স্কুলও চলছে। কোনটির সঙ্গে কোনটির সমন্বয় নেই। পাঠ্যপুস্তকসহ সিলেবাসও আলাদা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবস্থাও তথৈবচ। কোন সমন্বয় নেই। কে কী কোথায় কখন কিভাবে বাস্তবায়ন করবেন তা জানে না কেউই, না মন্ত্রী, না আমলারা। দেশে শিক্ষা নিয়ে সৃজনশীল ও মৌলিক চিন্তকের অভাব আছে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উন্নত ও সমৃদ্ধ একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নসহ পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের ক্ষেত্রেও সমস্যা বিরাজমান। প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার সমন্বয় সাধন ও আধুনিকীকরণ অত্যাবশ্যক ও জরুরী। ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের আলোকে উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থা আনতে হবে একক মন্ত্রণালয়ের অধীনে। যোগ্যতাসম্পন্ন প্রধান শিক্ষকসহ উপযুক্ত ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকম-লী তৈরি করা সম্ভব না হলে শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন প্রকৃতপক্ষেই কঠিন হবে।
×