ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

কাঠফাটা রোদ আর ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ দেশবাসী

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২২ মে ২০১৭

কাঠফাটা রোদ আর ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ দেশবাসী

নিখিল মানখিন ॥ তাপমাত্রা এখনও চল্লিশ স্পর্শ করেনি। বয়ে যাচ্ছে মৃদু দাবদাহ। অথচ মনে হচ্ছে তার বহুগুণ বেশি! বাতাসে অত্যধিক গরম ভাব। গ্রীষ্মের তীব্র দহন। তপ্ত গরমে অতীষ্ঠ দেশবাসী। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। চলতি মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে পৌঁছার পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অফিস। কয়েকটি জেলা ছাড়া রোদে খা খা করছে দেশ। এখনই দেশজুড়ে বৃষ্টির কোন সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। আর্দ্রতার দাপটেই রবিবার বেড়ে যায় অস্বস্তির মাত্রা। সকাল থেকেই তাপ ছড়াতে শুরু করছে সূর্য। মাটি থেকে তাপ ঠিকরে বেরোচ্ছে। শরীর চাইছে ঘাম ঝরিয়ে নিজেকে ঠা-া রাখতে। মানুষ ঘামছেও কুলকুলিয়ে। কিন্তু সেই ঘাম শুকোতে পারছে না, উল্টে গায়ে জমে থাকছে। আগামী কয়েকদিনে বৃষ্টিপাতের খবর দিতে পারছে না আবহাওয়া অফিস। বরং অধিদফতরের পূর্বাভাসে আজ সোমবারও দাবদাহ নতুন নতুন এলাকায় বিস্তারলাভ করার খবরে অস্বস্তিতে পড়েছে দেশবাসী। প্রশান্তি পেতে অপেক্ষা করছে একপশলা বৃষ্টির। এই সময়ে চিকুনগুনিয়ার পাশাপাশি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। হিটস্ট্রোকের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। চলতি মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অফিস। পাশাপাশি একটি ঘূর্ণিঝড়ের। এখন পর্যন্ত কোনটাই বাস্তবে রূপ নেয়নি। তবে আবহাওয়া অফিসের দেয়া তীব্র দাবদাহ বয়ে যাওয়ার পূর্বাভাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের তাপমাত্রা। হাঁসফাঁস গরমের মাঝে গলদঘর্ম অবস্থা দেশবাসীর। ঘর্মাক্ত কলেবরে হাঁসফাঁস। জমা ঘামের চাপে শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, বাড়ছে শ্বাস-প্রশ্বাসের হারও । এর পেছনের কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মধ্যভারত থেকে ধেয়ে আসছে গরম বাতাস। এখানে বায়ুম-লের নিচের স্তরে অবস্থান করছে ঘূর্ণাবর্ত। ঘূর্ণাবর্তের টানে সমুদ্র থেকে ঢুকছে জলীয়বাষ্প। সকাল সাড়ে আটটার পরই পাল্টে যাচ্ছে আবহাওয়ার চিত্র। আধাকিলোমিটার হাঁটলেই ঘামে ভিজে যাচ্ছে শরীর। দুপুর গড়াতেই একটুখানি ছায়ার খোঁজে সকলেই। স্বস্তি খুঁজতে ভিড় বাড়ছে ঠা-া পানীয়ের দোকানে। রবিবার রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রা আরও বাড়ল। কোন স্বস্তির খবর শোনাতে পারল না আবহাওয়া অধিদফতর। বরং শুনিয়ে দিল, বঙ্গোপসাগরের ওপর একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হওয়ায় বাতাসে জলীয়বাষ্প থাকবে। ফলে বাড়বে অস্বস্তিকর গরম। এ সময়ে দাবদাহ ও গরম ব্যতিক্রমী ঘটনা নয় বলে জানিয়ে দেশবাসীকে আরও অস্বস্তিতে ফেলে দিলেন আবহাওয়াবিদরা। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, মে মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে। দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ২ থেকে ৩ দিন বজ্রসহ মাঝারি থেকে তীব্র কালবৈশাখী বা বজ্রঝড় ও দেশের অন্যত্র ৩ থেকে ৪ দিন হালকা থেকে মাঝারি কালবৈশাখী বজ্রঝড় হতে পারে। এই মাসে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ১ থেকে ২ টি তীব্র দাবদাহ এবং অন্যত্র ২ থেকে ৩ টি মৃদু থেকে মাঝারি দাবদাহ বয়ে যেতে পারে। অতিভারি বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কতিপয় স্থানে আকস্মিক বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। তীব্র নয়, মৃদু দাবদাহ বইছে এখন। সঙ্গে যোগ হয়েছে বৃষ্টিশূন্যতা। দুইয়ে মিলে বেশ উত্তপ্ত সারা দেশ। গরমের মাত্রাটা খানিকটা বেশি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলজুড়ে। আজকালের মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের মধ্যাঞ্চলে তাপপ্রবাহের বিস্তার হতে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর (বর্ষা) বাংলাদেশে প্রবেশ নিয়েও দেশের আবহাওয়া অধিদফতর ও আন্তর্জাতিক আবহাওয়া অফিসসমূহের পূর্বাভাস নিয়েও চলছে আলোচনা। ভারতের আবহাওয়া অফিস বলছে, এবার মৌসুমী বায়ু আগেই প্রবেশ করবে, তবে বৃষ্টিপাত কম থাকবে। আর বৃষ্টির সুখবর দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস। তারা বলছে, মৌসুমী বায়ু প্রতিবেশী মিয়ানমারের ইয়াংগুন শহর পর্যন্ত চলে এসেছে। জ্যৈষ্ঠের এই দহন খুব একটা স্থায়ী হবে বলে মনে করছেন না তারা । তাদের মতে খানিকটা ঝড়-বৃষ্টি, এর সঙ্গে মৌসুমী বায়ু যোগ হলে গরমের দাপট কমে যাবে। আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শাহ আলম জানান, ১০ জুনের মধ্যে মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের আকাশে চলে আসতে পারে। তাই বৃষ্টি হলে এবার গরমের মাত্রা অন্যান্য বছরের মতো বাড়বে না বলে জানান তিনি। কিন্তু বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদদের এই আশ্বাসে যেন ভরসা পাচ্ছে না কাঠফাটা রোদ ও ভ্যাপসা গরমে অতীষ্ঠ দেশবাসী। গ্রীষ্মের দাবদাহে শুধু মানুষ নয়, প্রাণীকুল অস্থির হয়ে পড়েছে। দিনভর কাঠফাটা রোদ। সূর্য অস্ত যাওয়ার পরও ভ্যাপসা গরমের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলছে না নগরবাসীর। ঘন ঘন লোডশেডিং যেন বাড়িয়ে দেয় দুর্ভোগের মাত্রা। ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরেও গরমের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলছে না। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই এতটুকু। ক্লান্তি দূর করতে কেউ পান করছেন ডাবের পানি, কেউবা খাচ্ছেন শশা, ক্ষীরা। তারপরও স্বস্তি মিলছে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আগেই সতর্ক থাকতে হবে। দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকা যাবে না। প্রচুর পরিমাণ তরল জাতীয় বিশেষ করে ‘ ওরস্যালাইন ’ খেতে হবে। ঢিলেঢালা জামা পরিধান করতে হবে। আর হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাকে ছায়ায় নিতে হবে। শরীর মুছে দিতে হবে। এতে আক্রান্তের অবস্থার উন্নতি না হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তিনি বলেন, হিটস্ট্রোকে আক্রান্তের আগে শরীরে তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থার বেশি থাকবে। শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। বমি বমি ভাব দেখা দেবে। মাথা ঘুরতে থাকবে। প্রস্রাব কমে যাওয়ার পাশাপাশি রক্তের চাপও কমে যাবে। এসব লক্ষণ দেখা দিলেই ছায়াচ্ছন্ন স্থানে বিশ্রাম নিতে হবে। হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আগেই বিশেষ সতর্ক থাকার ওপর বেশি জোর দিয়েছেন তিনি।
×