ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কাজী সেলিম

জাতিসংঘে বাংলাদেশের গণহত্যার বিচার ও স্বীকৃতির দাবি উত্থাপনের এখনই সময়

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২২ মে ২০১৭

জাতিসংঘে বাংলাদেশের গণহত্যার বিচার ও স্বীকৃতির দাবি উত্থাপনের এখনই সময়

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ‘২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস’ পালন করার প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এটি দেশ-জাতির জন্য একটি যুগান্তকারী ও ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত, যা দেশের আইনে পরিণত হয়েছে। যা প্রতি বছর ২৫ মার্চ দিনটি ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দেশ-বিদেশে পালিত হবে। চলতি বছরও অত্যন্ত শ্রদ্ধাবনতচিত্তে পালিত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এ দিনটি অত্যন্ত নির্মম, পাশবিক ও বর্বরোচিত হত্যাকা-ের নয় মাসব্যাপী সংঘটিত গণহত্যার প্রারম্ভিক দিন হিসেবে আমাদের রক্তাক্ত ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ রয়েছে। প্রথমত গণহত্যা দিবসটি যথাযথভাবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালন করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র, তথ্য ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিভাগ বা পরিদফতর, অধিদফতরের সমন্বিত পরিচালনায় একটি বিস্তারিত কর্মসূচী সংক্রান্ত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে প্রতি বছর ‘২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস’কে দেশব্যাপী ও বিদেশে আমাদের দূতাবাসসমূহে, বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশের জনগণের যৌথ অংশগ্রহণ ও সম্পৃক্ততায় যথাযথভাবে পালন করতে সক্ষম হবে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ সরকার তথা বিশেষ করে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি দুরূহ ও কঠিন দায়িত্ব পালন করতে হবে জাতিসংঘের মাধ্যমে বিগত শতাব্দীর ১৯৭১ সালে সংঘটিত নৃশংস ও বর্বরোচিত বাংলাদেশের গণহত্যার বিশ্ব তথা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করার। বাংলাদেশের গণহত্যার বিষয়টি জাতিসংঘসহ কিছু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা যেন না জানা, না দেখার ভান করে নীরব রয়েছে। এই তথাকথিত জনদরদী সংস্থাগুলো শুধু হিটলার কর্তৃক ইহুদী নিধনের হলকস্ট নিয়ে বছর উদযাপন করে হায় মাতম করে থাকে। আবার এই মতলববাজ সংস্থাগুলো ’৭১-এর ঘাতক যুদ্ধাপরাধী নরপশুদের বিচারের ও শাস্তিদ-ের বিরোধিতা করে আমাদের দেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারকার্যকে হেয় ও প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে। কেউ কেউ মানবতাবিরোধী রাজাকার-আলবদর যুদ্ধাপরাধী ঘাতকদের প্রতি মানবাধিকারের ধোয়া তুলে তাদের পক্ষাবলম্বন করছে। তাদের কাছে শতাব্দীর সংঘটিত নৃশংস বাংলাদেশের গণহত্যা যেন এক অতীত, অনাকাক্সিক্ষত অপ্রয়োজনীয় বিষয়। ২৫ মার্চ বাংলাদেশের গণহত্যা দিবস পালনের জাতীয় সংসদে পাসকৃত এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি এবং বাংলাদেশে ১৯৭১-এর নয় মাস পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসরদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ও নৃশংসতাকে জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃতি আদায় করার দাবিটি উত্থাপনের এখনই উপযুক্ত ও গুরুত্বপূর্ণ সময়। জাতিসংঘের সেপ্টেম্বর অধিবেশনেই এটি তুলে ধরা যায়। শুধু বাংলাদেশের দূতাবাসসমূহে সেগুনবাগিচার পররাষ্ট্র দফতর থেকে ফ্যাক্স, ইমেইল ও টেলেক্স চালাচালি করতে হবে। আমাদের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার সাহেবরা ও তাদের অধীনস্থ কর্মকর্তারা ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে বিদেশী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের কার্যালয় এবং স্থানীয় সংবাদ মিডিয়া ও মানবাধিকার সংস্থার কাছে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরতে হবে। এই ক্ষেত্রে গাফিলতি, তাচ্ছিল্য কাম্য নয়। তবে ভয় হয়, এখনও জামায়াত-বিএনপির কিছু ঘাপটিমেরে থাকা সুবিধাভোগী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মনোভাবাপন্ন কূটনীতিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী বিভিন্ন দূতাবাসে রয়েছেন। বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ের কাজটি হবে বেশ কঠিন ও দুরূহ, যদি এ বিষয়ে কূটনৈতিক চাপ ও তৎপরতা না থাকে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে দায়িত্বরত ও স্বপক্ষ ত্যাগকারী বাঙালী কূটনীতিবিদরা যে ত্যাগ, চেতনা ও দেশপ্রেমের মহান আদর্শে বলীয়ান ও দীক্ষিত হয়ে তাদের কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করেছিলেন, বিদেশী রাষ্ট্র, সরকার ও জনগণের সমর্থন আদায় করেছিলেন, ঠিক একই চেতনা ও আদর্শকে বুকে লালন ও ধারণ করে এবার এগিয়ে আসতে হবে বিদেশে বাংলাদেশের কূটনীতিবিদ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। বিশেষ করে নিউইউর্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও মিশনের সমগ্র টিমকে ’৭১-এর সেই মনোবল, ব্রত ও মহান দায়িত্ব পালনের সাহসী চেতনা নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। জাতিসংঘের কাছ থেকে বাংলাদেশের গণহত্যার বিচার ও তার যথাযথ স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে এই মহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যকে সামনে রেখে আগামী সেপ্টেম্বর মাসের আসন্ন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানদের সম্মুখে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে সংঘটিত পাকহানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যার বিচার দাবি ও জাতিসংঘ কর্তৃক গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য জাতিসংঘের ওপর চাপ প্রয়োগ করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক এই দাবিটি পালনের ব্যাপারে আমাদের যথাযথভাবে প্রস্তাব আকারে উত্থাপন করতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে উক্ত অধিবেশনে উপস্থিত হয়ে আমাদের এই ন্যায্য দাবিটি উত্থাপন করলে বিষয়টির ওপর অধিবেশনে উপস্থিত হওয়া রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বাংলাদেশের এই দাবির অনস্বীকার্যতা, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন ও ধ্বংস করার পাকহানাদার বাহিনীর দ্বারা জাতিসংঘ প্রণীত ১৯৪৮ সালের সাধারণ পরিষদের ৯৬(১) নং প্রস্তাবের অধীনে সংঘটিত গণহত্যা ও বাংলাদেশে ১৯৭১-এর পাকবাহিনীর দ্বারা সংঘটিত নৃশংস গণহত্যার মানবাধিকার পরিপন্থী জঘন্য অপরাধ ও কার্যক্রমকে উপস্থাপন করে তার শাস্তি ও স্বীকৃতির দাবি জানাতে পারলে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের যৌক্তিক দাবি তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিশেষ গুরুত্ব পাবে। জাতিসংঘের তরফ থেকে ’৭১-এর গণহত্যার যথাযথ স্বীকৃতি ও বিচারের দাবিটি বাস্তবায়নের পথকে ত্বরান্বিত করবে। সেপ্টেম্বর মাসের জাতিসংঘের অধিবেশনে এই গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ দাবিটি প্রস্তাব আকারে পেশ বা উত্থাপন করার পূর্ব প্রস্তুতিমূলক একটি মহাপরিকল্পনা ও কর্মসূচী বা প্ল্যান অব এ্যাকশন প্রণয়ন করে তার যথাযথ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সেগুনবাগিচার আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পালন করতে পারে। বাংলাদেশ সরকারের কেবিনেট ও পার্লামেন্টের প্রয়োজনীয় অনুমোদন সাপেক্ষে অত্যন্ত দ্রুত ও গুরুত্বসহকারে তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে আমাদের বিদেশ মন্ত্রণালয়কে ’৭১-এর বীর কূটনীতিবিদ মুক্তিযোদ্ধা, দক্ষ ও ঝানু কূটনীতিবিশারদ বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে ’৭১-এর চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অগ্রসর হতে হবে। এই ক্ষেত্রে আমি একাত্তরে রণাঙ্গনের একজন যোদ্ধা হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আগামী সেপ্টেম্বর মাসের আসন্ন সভায় ১৯৭১-এ বাংলাদেশে গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ের পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণের ওপর আমার মূল আলোচ্য বিষয়টি প্রস্তাব আকারে মন্তব্য করতে চাই। পূর্বেই উল্লেখ করেছি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত ও প্রণীত একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর। এই মহাপরিকল্পনার অধীনে পররাষ্ট্র, তথ্য ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যৌথ সম্পাদনায় ও সংগ্রহে ’৭১ সালে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের স্থানীয় দালাল, রাজাকার, আলবদর ও মুসলিম লীগ দালালদের দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতার সকল ডকুমেন্ট তথ্য, উপাত্ত যথা সচিত্র প্রতিবেদন, চিত্র, প্রকাশনা বুলেটিন, দেশ-বিদেশে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত সকল তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে গণহত্যার সঠিক সাক্ষী-প্রমাণের একটি দলিল তৈরি করে পাকিস্তানীদের এ দেশে একাত্তর সালে বর্বরতার চিত্র তুলে ধরা। একই অপরাধে অপরাধী হিসেবে জাতিসংঘ কর্তৃক অভিযুক্ত ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয়ে জাতিসংঘের পরিচালনায় ও তত্ত্বাবধানে রুয়ান্ডা, কম্বোডিয়া, পূর্ব তিমুর, বসনিয়া, হারজেগোভিনা, শ্রীলঙ্কার তামিলদের বিরুদ্ধে পরিচালিত কথিত গণহত্যা তদন্ত, আদালত গঠন ও বিচার এবং শাস্তি প্রদান করা হয়েছে উক্ত দেশসমূহের যুদ্ধাপরাধীদের। জাতিসংঘের সেপ্টেম্বর মাসের আসন্ন সাধারণ পরিষদের সভায় বাংলাদেশের গণহত্যার বিচার ও স্বীকৃতি আদায়ের সমর্থন পাওয়ার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে দু’ভাবে কাজ করে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া যায়। প্রথমত বাংলাদেশে নিযুক্ত ’৭১-এ আমাদের দুর্দিনে সাহায্য সমর্থন প্রদানকারী বন্ধুরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনারদের রাজধানী ঢাকায় আমন্ত্রণ করে তাদের সম্মুখে বাংলাদেশের গণহত্যার বিচার ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভের উদ্দেশ্যে সেপ্টেম্বরে সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি সম্ভাব্য প্রস্তাব উত্থাপন হলে তার পক্ষে তাদের স্ব স্ব দেশের সমর্থন চাওয়া, তাদের সরকারপ্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানদের নিকট এতদসংক্রান্ত আমাদের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন প্রদানের জন্য অনুরোধ জানিয়ে বিশেষভাবে লিখিত পত্র হস্তান্তরকরণ, উপস্থিত রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের মধ্যে প্রস্তুতকৃত গণহত্যার তথ্য-উপাত্ত সরবরাহের মাধ্যমে তাদের স্ব স্ব সরকারের কাছে আগাম বার্তা প্রদান ও বাংলাদেশের দাবি ও প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন আদায়ের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে পদক্ষেপ গ্রহণ। ঢাকায় এ ধরনের প্রস্তুতি সভার আয়োজন করলে বিদেশে সকল রাষ্ট্রে আমাদের দূত পাঠিয়ে আর অর্থ খরচের প্রয়োজন হবে না। দ্বিতীয়ভাবে সেপ্টেম্বরের অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দু’সদস্যবিশিষ্ট একটি দক্ষ, মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা বিষয়ক অভিজ্ঞ প্রতিনিধি দলকে বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ ’৭১-এর গণহত্যার ওপর পরিষ্কার ও পরিপূর্ণ ধারণা, যুক্তি ও ব্যাখ্যাসহ প্রদানে সক্ষম, অভিজ্ঞ টিমকে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানের পক্ষ থেকে সমর্থন আদায়ের অনুরোধপত্রসহ ’৭১-এর বন্ধুরাষ্ট্রসহ সকল দেশে প্রেরণ করা উচিত। বিদেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও প্রেস উইংয়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তাগণ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেরিত এই টিম বা দলের জন্য ঐ সকল দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম, মানবাধিকার সংগঠনসহ প্রয়োজনীয় সকল সংস্থা ও সংগঠনকে বাংলাদেশের পক্ষে জোরালো সমর্থন প্রদানের সর্বাত্মক পূর্ব আয়োজন, সাক্ষাতকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করে রাখবেন এবং বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত বিশেষ পত্র হস্তান্তর করবেন। বাংলাদেশের এই বিশেষ দলটি বিদেশে আমাদের দূতাবাসের আমন্ত্রণক্রমে ওই সকল দেশের সংবাদ মিডিয়ার লোকজনদের চায়ের দাওয়াত করে রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও প্রেস মিনিস্টারদের উপস্থিতিতে ৭১-এ সংঘটিত গণহত্যার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে তাদের হাতে তথ্য-উপাত্ত সংক্রান্ত বই পুস্তক হস্তান্তর করে তাদের দেশের স্ব স্ব মিডিয়া প্রচারযন্ত্রে যথাযথভাবে প্রচার করার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাতে হবে। বিদেশে আমাদের রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনার বা প্রেস কাউন্সিলররা এট্যাচি সাহেবদের হয়তোবা ব্যক্তিগত উদ্যোগের অভাব, সদিচ্ছা, দায়িত্ববোধের অনীহার প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে বাংলাদেশের জাতীয় দিবসগুলোতে অথবা বিদেশের মিডিয়াতে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সাফল্যের বিভিন্ন তথ্য প্রচার না করে, দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা বিষয়কে মূলধন করে নেগেটিভ প্রচারণায় লিপ্ত ওই সকল দেশের মিডিয়ায় বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণার বা নেগেটিভ প্রপাগান্ডার বিরুদ্ধে কোন সময়ই ওই সকল দেশের মিডিয়াতে তাদের চেহারা দেখা যায় না। এই বিশেষগুলোর ওপর বিস্তারিত আলাপ ও পরিকল্পনা গ্রহণের অনুরোধ সংক্রান্ত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতকারের মনোবাসনা নিয়ে বহুবার ফোন করার পরও একটি ফিরতি সৌজন্য ফোন কল পাইনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সরকারী আমলাদের বাইরেও দেশপ্রেমিক নাগরিকদের বিশেষ করে বর্তমান সরকারের সুহৃদ বা শুভাকাক্সক্ষী হিসেবে জনগণের গুরুত্বপূর্ণ বা গ্রহণযোগ্য মতামত ও পরামর্শ থাকতে পারে, তা হয়তো পররাষ্ট্রমন্ত্রী অথবা প্রতিমন্ত্রীর বোধগম্য হয় না। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে কঠোর নির্দেশ প্রদান করতে হবে যে, ‘আগামী সেপ্টেম্বর মাসে আসন্ন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে ১৯৭১-এর বাংলাদেশের গণহত্যার বিচার ও জাতিসংঘ, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের নিকট বিচারের দাবি ও তার যথাযথ স্বীকৃতি আদায়ের দাবি তোলা হবে।’ এতদসংক্রান্ত একটি সমন্বিত সর্বাত্মক কর্মসূচী ও বিস্তারিত ব্যবস্থা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে যৌথভাবে সম্পাদনার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই কর্মসূচী বা ব্যবস্থা গ্রহণের কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের অগ্রগতি, পর্যালোচনা পর্যবেক্ষণ ও তদারকির জন্য প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে একটি অস্থায়ী সেল গঠন করে নির্দিষ্ট সময়, ক্ষণ, দিন ঠিক করে যার যার দায়িত্ব পালনের কঠোর নির্দেশনা জারি করা উচিত। লেখক : ’৭১- এর বীর মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশের গণহত্যায় জাতিসংঘের ব্যর্থতার ওপর গবেষণায়রত [email protected]
×