ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিত্যপণ্যের মূল্য

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২২ মে ২০১৭

নিত্যপণ্যের মূল্য

আর মাত্র ক’দিন পর পবিত্র রমজান। রোজাদারদের প্রতিদিনের ইফতারের অন্যতম একটি অনুষঙ্গ ছোলা। গত শুক্রবার রাজধানীর খোলাবাজারে এই পণ্যটি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি সর্বনিম্ন ৮৫-৯০ টাকায়। কোন কোন বাজারে আরও বেশি। অথচ বর্তমানে দেশে প্রতি কেজি ছোলা আমদানিতে সর্বোচ্চ ব্যয় ৪৪ টাকা মাত্র। সামান্য এই একটি পণ্য থেকেই দেশের আমদানিকারক, সরবরাহকারী, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের মুনাফা লোটার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এর বাইরেও সপ্তাহের ব্যবধানে চাল, ডাল, চিনি, ভোজ্যতেল, গুঁড়োদুধ ইত্যাদির দাম বেড়েছে কেজি প্রতি সর্বনিম্ন ৮ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। মূল্যবৃদ্ধির উল্লম্ফন পরিলক্ষিত হচ্ছে শাক-সবজি, তরিতরকারি, মাছ-মাংস-দুধের বাজারেও। টিসিবি পণ্যমূল্য পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি স্থানে ন্যায্যমূল্যে ট্রাকসেল চালু করলেও বাস্তবে এর সুবিধা পাচ্ছে খুব কমসংখ্যক মানুষ। রোজাদারদের প্রায় জিম্মি করে নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন প্রায় সব আমদানিকারক, প্রস্তুতকারকসহ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। প্রতিবছর একই চিত্র লক্ষ্য করা যায় রমজান, ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আযহার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। দাম বাড়ানোর জন্য সংস্কারের নামে চিনির কারখানা বন্ধ করে দেয়ারও খবর আছে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে ভোগ্যপণ্যের দাম কমতির দিকে। সে অবস্থায় দেশে প্রায় প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর বিষয়টি ব্যবসায়ীদের কারসাজি ছাড়া কিছু নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, গুঁড়োদুধ, ছোলা, লবণ ইত্যাদির দাম কমলেও দেশে বাড়ছে এসব নিত্যপণ্যের দাম। এ নিয়ে নানা কারসাজি ব্যবসায়ীরা করে থাকে প্রতিবছরই। দাম বাড়ার জন্য ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক অজুহাত দিচ্ছেন। কখনও বলছেন, আকস্মিক মৌসুমি বৃষ্টিপাত, কখনও বা বৈশাখ- জ্যৈষ্ঠ মাস, কখনও বলছেন চাহিদা বেশি, যোগান কম ইত্যাদি। সরকার সীমিত পরিমাণে চাল আমদানির অনুমতি দিলেও দাম কমেনি। প্রভাব পড়েছে শাক-সবজির বাজারেও। তবে সর্বাধিক উল্লম্ফন পরিলক্ষিত হচ্ছে গরু ও খাসির মাংসের দামে। গাবতলীসহ গরুর হাট এবং সীমান্তে গরু চোরাচালান নিয়ে প্রবল টানাপোড়েন চলতে থাকায় মাংসের বাজার বেশ চড়া। জনগণের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে, প্রয়োজনে বিদেশ থেকে মাংস আমদানি করা হোক। মাংসের দামের অনিবার্য প্রভাব পড়েছে মাছ, ডিম ও দুধের বাজারেও। অথচ বাস্তবতা হলো আন্তর্জাতিক বাজারে এমনকি প্রতিবেশী দেশেও ভোগ্যপণ্যের দাম বর্তমানে নিম্নমুখী। এ থেকে যা বোধগম্য তা হলো, রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে প্রায় অবাধে সুযোগ নিচ্ছে ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকসহ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। আর জনগণ বহুল উচ্চারিত এই সিন্ডিকেটের সামনে অনেকটা অসহায়, প্রায় জিম্মি হয়ে পড়েছে। অথচ বিদেশে উৎসব, পালা-পার্বণ উপলক্ষে ব্যাপক ছাড় দেয়া হয় ভোগ্যপণ্যে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নানা কারণের মধ্যে অন্যতম দুর্বল বাজার মনিটরিং, অসাধু আমদানিকারক, উৎপাদক, পরিবেশক, সরবরাহকারী, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী, অকার্যকর টিসিবি সর্বোপরি ট্যারিফ কমিশন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে আদৌ কোন সমন্বয় না থাকা। যে কারণে ভোক্তা ও ক্রেতা স্বার্থ অধিকার এবং সংরক্ষণ বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। সিন্ডিকেট তথা মুুষ্টিমেয় ব্যবসায়ী চক্রের বাজারে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ও মুনাফা লুটে নেয়ার কথা প্রায়ই উচ্চারিত হয়। এফবিসিসিআই, ঢাকা চেম্বার, মেট্রো চেম্বারসহ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো খুবই শক্তিশালী এবং সরকারের ওপর তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তিও অস্বীকার করা যায় না। জাতীয় সংসদেও ব্যবসায়ীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে ভোক্তা ও ক্রেতা স্বার্থ এক রকম উপেক্ষিত ও অনালোচিত থাকছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে লাভ-ক্ষতি-মুনাফা ইত্যাদি থাকবেই। তবে এ সবই হতে হবে নীতি-নৈতিকতা, সততা ও নিয়মকানুনের আওতায়, যে ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি রয়েছে বহুলাংশে। সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব নিয়ে অগ্রসর হতে হবে বাজার মনিটরিং ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে। সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদেরও মনে রাখতে হবে যে, রমজান ও ঈদসহ পালা-পার্বণে মুনাফা লোটার প্রবণতা থেকে কিছুটা হলেও তারা যেন নিজেদের সংযত রাখতে পারেন।
×