ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্যের কোন অভাব নেই, প্রয়োজনে বিদেশ থেকে আমদানি করা হবে;###;হাওড়াঞ্চলের ছেলে-মেয়েদের জন্য আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবে ;###;খালিয়াজুরিতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ;###;বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে আবারও নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান

নেত্রকোনার হাওড়দ্বীপে প্রধানমন্ত্রী ॥ কেউ না খেয়ে থাকবে না

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৯ মে ২০১৭

নেত্রকোনার হাওড়দ্বীপে প্রধানমন্ত্রী ॥ কেউ না খেয়ে থাকবে না

সঞ্জয় সরকার, খালিয়াজুরি, নেত্রকোনা থেকে ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নৌকায় ভোট দিলে মানুষ সুখে-শান্তিতে সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা পায়। মানুষের কল্যাণই আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য। আর বিএনপি ক্ষমতায় আসে লুটপাটের জন্য। এরা ক্ষমতায় থাকলে লুটপাট করে, আর বিরোধী দলে গেলে মানুষ পুড়িয়ে মারে। এটা কোন ধরনের রাজনীতি? বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় নেত্রকোনার হাওড়দ্বীপ খ্যাত খালিয়াজুরি উপজেলা সদরের কলেজ মাঠে অকালবন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওড়বাসীর মাঝে ত্রাণ বিতরণকালে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওড়বাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কাউকে না খেয়ে কষ্ট করতে হবে না। আমাদের খাদ্যের কোন অভাব নেই। দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে। এরপরও যদি দরকার পড়ে- প্রয়োজনে বিদেশ থেকে আমদানি করব। তিনি বলেন, হাওড়াঞ্চলে দুর্যোগ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিয়েছি। আগামী ফসল না ওঠা পর্যন্ত সুদ মওকুফসহ কৃষি ঋণ স্থগিত করেছি। ভিজিএফ সহায়তা চালু করেছি। খোলাবাজারে ১০টাকা করে ওএমএস’র চাল বিক্রির ব্যবস্থা করেছি। আবারও যাতে কৃষকরা ঋণ সুবিধা পায়- আমরা সে ব্যবস্থাও করব। হাওড়াঞ্চলের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবÑ যাতে তারা সেখানে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে। হাওড় উন্নয়নের জন্য বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে দেব। পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নদী ও খাল খনন করে নাব্য বাড়ানো হবে। স্থানীয় ডিসিকে তালিকা প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, নেত্রকোনার হাওড়াঞ্চলে কোন মানুষ গৃহহারা থাকবে না। যারা গৃহহীন, ভূমিহীন তাদের জন্য আমরা আদর্শ গ্রাম, গুচ্ছ গ্রাম বা অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে ঘরবাড়ি তৈরি করে দেব। হাওড়ের মৎস্যজীবীদেরও আর্থিক সাহায্য দেব। মৎস্যসম্পদ প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করে দেব। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পদক্ষেপ নেব। এছাড়াও আরও যা যা করা দরকার সব করব। আমরা চাই মানুষ শান্তিতে বসবাস করুক। তিনি বলেন, আপনারা হাওড়ের মানুষ, আমি বাঁওড়ের মানুষ। টুঙ্গিপাড়া এলাকায় হাওড়ের মতো ছোট ছোট বাঁওড় আছে। আপনাদের কষ্ট আমি বুঝি। জেলা প্রশাসক ড. মুশফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং স্থানীয় এমপি রেবেকা মমিন। এছাড়া মঞ্চে উপস্থিত ছিলেনÑ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফ, আহমদ হোসেন, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, অসীম কুমার উকিল, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, অপু উকিল, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল এমপি, ছবি বিশ্বাস এমপি, ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু এমপি, পঙ্কজ দেবনাথ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিয়র রহমান খান, সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী খান খসরু, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রশান্ত কুমার রায়, খালিয়াজুরি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া জব্বার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন পদক্ষেপের বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ দেশের গরিব-দুঃখি মানুষের মুখে হাসি ফোটানো আর তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করা ছাড়া আমার আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। তাই আমরা একের পর এক কর্মসূচী গ্রহণ করে চলেছি। যারা একেবারে হতদরিদ্র তাদের জন্য ভিজিএফ-ভিজিডি সহায়তা চালু করেছি। বর্গা চাষীরা আগে ব্যাংক ঋণ পেতেন না। কারণ তারা জামানত দিতে পারতেন না। ৯৬-এ সরকার গঠনের পর আমরা তাদের বিনা জামানতে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করেছি। কৃষকদের জন্য মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক এ্যাকাউন্ট করার ব্যবস্থা করেছি। কৃষকরা যাতে সহজে এবং কমমূল্যে কৃষি উপকরণ পায় সেজন্য ২ কোটি ৮ লাখ ৯৩ হাজার কৃষি কার্ড বিতরণ করেছি। ১ কোটি ৩০ লাখ মায়ের নামে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য উপবৃত্তি দিচ্ছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। স্কুলগুলোতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালু করেছি। ইন্টারনেট সুবিধা সহজলভ্য করেছি। বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। এখন আর অভিভাবকদের বই কিনতে হয় না। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে মানুষ বিনা পয়সায় ৩০ ধরনের ওষুধ পাচ্ছেন। প্রথমবার ক্ষমতায় এসে আমরাই বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও স্বামী পরিত্যক্তদের ভাতা চালু করেছি। দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা চালু করেছি। সন্তান জন্মাবার কারণে যে মা মাতৃদুগ্ধ দান করেন তাকেও আমরা সহায়তা দিচ্ছি। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প চালু করেছি। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক গঠন করেছি। কর্মসংস্থান ব্যাংক চালু করেছিÑ যাতে বেকার যুবক-যুবতীরা বিনা জামানতে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পায়। আমাদের আজ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। মাতৃ মৃত্যুর হার কমেছে। বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এ দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন এ দেশকে একটি সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে। গরিব-দুঃখি মেহনতি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। দোয়া করবেন যাতে তার স্বপ্ন আদর্শ বাস্তবায়ন করতে পারি। আপনাদের সেবা করতে পারি। এছাড়া আর কিছু চাওয়া-পাওয়ার নেই আমার। বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা ক্ষমতায় এসে লুটপাট, সন্ত্রাস, মারামারি আর বিদেশে টাকা পাচার করে। এটাই তাদের উদ্দেশ্য। তারা মুখে ধর্মের কথা বলে, আবার কোরান শরীফে আগুন দেয়। মসজিদে আগুন দেয়। ২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকাতে তারা শ’ শ’ মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে হত্যা করেছে। ৫শ’ ৮২টা স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছে। ৩ হাজার ২শ’ ৫২টি বাড়িতে আগুন দিয়েছে। রেললাইনে আগুন দিয়ে ক্ষতি সাধন করেছে। নির্বাচনের সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারকে হত্যা করেছে। পুলিশ, গোয়েন্দাসহ আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মানুষদের হত্যা করেছে। রাস্তা-ঘাট কেটে দিয়েছে। সারাদেশে তারা তা-ব চালিয়েছে। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর নেত্রকোনার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ওই সময় বিএনপি যা করেছেÑ তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। এখানে তারা আওয়ামী লীগের ১২ নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। নিহতদের প্রত্যেকের নাম উচ্চারণ করে তিনি বলেন, হত্যা ছাড়াও তারা লুটপাট, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, নারীদের সম্ভ্রমহানি করেছে। সাংবাদিকদের নির্যাতন করেছে। সংবাদ পরিবেশনে বাধা দিয়েছে। খালিয়াজুরি-মদন-মোহনগঞ্জ এলাকা থেকে নির্বাচিত জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে ‘একটা কুলাঙ্গার’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে ‘কেসিও’ ঘড়ি চুরি করে এনে বিক্রি করত। অথচ সে হয়ে গেল মন্ত্রী। বান্দরের হাতে লাঠি দিলে যা হয়Ñ সে তাই করেছে। আপনারা নিশ্চয়ই বাবরের সেই অত্যাচার-নির্যাতনের কথা ভুলে যাননি। অভিভাবক, শিক্ষক, ইমামসহ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের লক্ষ্য রাখতে হবে এ অঞ্চলের কোন ছেলেমেয়ে যাতে জঙ্গী বা মাদকাসক্ত না হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ছাত্রছাত্রীদের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবেÑ কেউ যাতে বিপথগামী না হয়। তারা যাতে মানুষের মতো মানুষ হয়। ভাল মানুষ হয়ে যাতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে। সবশেষে উপস্থিত জনতার কাছে আগামী নির্বাচনের জন্য নৌকার পক্ষে ভোট চান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় মাঠ ভরা লোকজন ‘জয়বাংলা’ সেøাগান দিয়ে তাঁর আহ্বানে সাড়া দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে উন্নয়নের ধারাও অব্যাহত থাকে। বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে আমরা এ দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চাই। তাই আমি আপনাদের জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে এমনকি বুকের রক্ত ঢেলে দিতেও সর্বদা প্রস্তুত। ৪০ মিনিটের বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে দাঁড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও দুস্থদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। তিনি ১২শ’ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও দুস্থের তালিকার মাঝে ২০ জনকে নিজ হাতে ত্রাণের চাল (বস্তা) এবং নগদ ১ হাজার টাকা করে তুলে দেন। কলেজ মাঠে ত্রাণ বিতরণের পর প্রধানমন্ত্রী স্পিডবোটে চড়ে খালিয়াজুরির হাওড় এলাকা পরিদর্শনে যান। পরিদর্শন শেষে আবার নগর ইউনিয়নের বল্লভপুর গ্রামের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে ১শ’ ২০ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও দুস্থ পরিবারের সদস্যদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। সেখান থেকে খালিয়াজুরি সদরে ফিরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলনায়তনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারী কর্মকর্তা ও দলীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সকাল ১০টা ৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী একটি হেলিকপ্টারে চড়ে খালিয়াজুরিতে আসেন। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা খালিয়াজুরিতে অবস্থান শেষে বেলা আড়াইটায় আবার হেলিকপ্টারে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। কলেজ মাঠের অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ৯৮-এর বন্যায় সারাদেশের মানুষ ৬৩ দিন পানিতে ছিলেন। তখনও শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আমরা সফলভাবে সেদিন বন্যার ধকল মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছিলাম। ৯৮-এর বন্যা যদি পাড়ি দিতে পারিÑ এবারও আমরা সফলভাবে হাওড়াঞ্চলের বন্যার ধকল কাটিয়ে ওঠতে পারব। কৃষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আগামী মৌসুমের জন্য অবশ্যই আপনারা বীজ, সার, কীটনাশকসহ প্রণোদনার টাকা পাবেন। ১০ টাকার ব্যাংক এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আপনাদের হাতে সহযোগিতা পৌঁছে দেব। কারণ আপনাদের পাশে শেখ হাসিনার সরকার আছে। আওয়ামী লীগ আছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা গরিবদের ভালবাসেন। তাদের দুঃখ-কষ্ট বোঝেন। তাই গরিব-অসহায়দের মাঝে বার বার ছুটে আসেন। দুর্যোগের আঁধার রাতে তিনি সবসময় জনগণের পাশে থাকেন। কিন্তু বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া গরিবদের ভালবাসেন না। তিনি ক্ষমতা ভালবাসেন। বিএনপি এখন ‘লুটপাটের ভিশন’ নিয়ে ব্যস্ত। গরিবদের কথা তাদের মনে নেই। তাদের নেতাকর্মীরা এখন নিজেরা নিজেরা জেলায় জেলায় লাঠালাঠি করছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে তিনি প্রশ্ন করেনÑ দুর্যোগে আপনাদের নেত্রী কোথায় গিয়েছেন? দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত হাওড়াঞ্চলে এখন পর্যন্ত একটি মানুষও না খেয়ে নেই। এটা এই সরকারের বিরাট সফাল্য। ৩ লাখ ৮৬ হাজার মানুষকে আগামী জুলাই মাস পর্যন্ত মাসে ৩০ কেজি করে চাল এবং নগদ ৫শ’ করে টাকা দেয়া হচ্ছে। ৫০ হাজার মৎস্যজীবীকেও সহযোগিতা দেয়া হবে। খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, হাওড়াঞ্চলে ১০-১২ লাখ মেট্রিকটন খাদ্য শস্য নষ্ট হলেও দেশে খাদ্য সঙ্কট হবে না। এরপরও দেশে ১ কোটি ৭৫ থেকে ৮০ লাখ মেট্রিকটন ধান উৎপাদিত হবে। চালের বাজার অবশ্যই নিম্নমুখী হবে। যারা মানুষকে বিভ্রান্ত করেনÑ তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, অহেতুক মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না। কাউকে কষ্ট দেবেন না। পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, এবারের বন্যা থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে মানুষ এ ধরনের বিপদে আর না পড়ে। আগামীতে আমরা উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত করব। এ অঞ্চলের ধনু, কংস, সোমেশ্বরী প্রভৃতি নদীগুলো খননের উদ্যোগ নেব। এছাড়া বাঁধ নির্মাণের দুর্নীতির তদন্ত করে রিপোর্ট প্রকাশ করব। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। প্রসঙ্গত, হাওড়দ্বীপ খালিয়াজুরিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এটিই প্রথম সফর। এর আগে খালিয়াজুরিতে আওয়ামী লীগের কোন সরকার প্রধানের পা পড়েনি। এদিকে সরকারী কর্মসূচীতে শুধু ‘হাওড় এলাকা পরিদর্শন এবং ত্রাণ বিতরণের’ কথা উল্লেখ থাকলেও অগণিত হাওড়বাসীর উপস্থিতির কারণে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানটি সকাল ১০টার মধ্যেই মূলত জনসমুদ্রে পরিণত হয়। দূর-দূরান্ত থেকে শ’ শ’ ট্রলার নিয়ে হাওড়ের লোকজন খালিয়াজুরি কলেজ মাঠে সমবেত হন।
×