ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বনানীতে ২ ছাত্রী ধর্ষণ আসামি নাইম আশরাফ গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৮ মে ২০১৭

বনানীতে ২ ছাত্রী ধর্ষণ আসামি নাইম আশরাফ গ্রেফতার

আজাদ সুলায়মান/নাসির উদ্দীন, মুন্সীগঞ্জ থেকে ॥ ঢাকার বনানীতে দুই ভার্সিটি শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলার দ্বিতীয় আসামি নাইম আশরাফ ওরফে হালিম বুধবার রাতে লৌহজং হতে গ্রেফতার হয়েছে। সাফাতের দেহরক্ষী ও ড্রাইভার গ্রেফতারের দুদিনের মাথায় এই গ্রেফতারের কথা জানানো হলো একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তাকে বুধবার রাত পৌনে আটটার দিকে কুমারভোগ ইউনিয়নের চন্দ্রের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। লৌহজং থানার ওসি আনিচুর রহমান জানান, রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী ধর্ষণ মামলার পলাতক আসামি নাইম আশরাফ ওরফে হালিমকে গ্রেফতার করেছে বলে জানতে পেরেছি। তিনি জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে গোয়েন্দা সংস্থাটি তাদের নিজের মত করে ওই আসামিকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তারা স্থানীয় থানার সহযোগিতা নেয়নি। তবে স্থানীয় পুলিশ গোয়েন্দা পুলিশের একটি অপারেশন ব্যাপারে অবহিত ছিল। নাইম আশরাফ তার এক আত্মীয় চন্দ্রের বাড়ির আকুব আলীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। ‘সাফাতের ড্রাইভারও দুই তরুণীকে ব্ল্যাকমেল করতে চেয়েছিল’ সাফাতের ড্রাইভার বিল্লাল নিজেও ওই দুই তরুণীকে ব্ল্যাকমেল করে শয্যাশায়ী করতে চেয়েছিল। তরুণী ধর্ষণ চিত্র ভিডিও করার পর সেটা দিয়ে সাফাতের অজান্তেই গোপনে এমন প্রস্তাব দেয় বিল্লাল। কিন্তু তার আগেই সব ফাঁস করে দেয়ার সিদ্বান্ত নেয় তরুণীদ্বয়। রিমান্ডে থাকা সাফাতের গানম্যান আজাদ ও ড্রাইভার বিল্লাল এ ধরনের তথ্য প্রকাশ করেছে। এদিকে বুধবার শুল্ক গোয়েন্দার সদর দফতরে তলব করা হয় রেইন ট্রি হোটেলের মালিকপক্ষকে এবং আপন জুয়েলার্সের তিন মালিককে। তাদের টানা সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দিলদার জানান তার দোকানে কোন ধরনের অবৈধ স্বর্ণ নেই। দেশের অন্য সবাই যেভাবে স্বর্ণের ব্যবসা করে তিনিও সেভাবেই করেন। তবে শুল্ক গোয়েন্দার মহাপরিচালক মইনুল খান জানিয়েছেন, আপন জুয়েলার্সের ৫টি দোকান থেকে জব্দ করা ৪৯৮ কেজি স্বর্ণের মধ্যে এক কেজির বৈধ কাগজপত্র নেই্। সে জন্যই তাদের সময় দেয়া হয়েছে। তিনি আপন জুয়েলার্সে গ্রাহকদের গচ্ছিত স্বর্ণ তুলে নেয়ার আহ্বান জানান। জানা যায়, দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করা এই ধর্ষণ ঘটনার চার আসামি সাফাত, সাকিফ, আজাদ ও বিল্লালকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পৃৃথক পৃৃথক জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের বক্তব্য পরস্পরবিরোধী হওয়ায় বুধবার মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় তারা চারজনেরই ২৮ মার্চ রাতে কে কিভাবে কি ভূমিকা পালন করে, সেটা অভিন্ন সুরে স্বীকার করে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ২৮ মার্চ সারারাত নির্যাতন শেষে পরদিন সকালে সাফাতের ড্রাইভার বিল্লাল ও গানম্যান আজাদ যখন তরুণীদের বাসার সামনে নামিয়ে দেয় তখনই জানানো হয় হোটেলের ভিডিওর কথা। তরুণীরা তখন তা বিশ্বাস করতে পারেনি। কিন্তু কদিন পর বিল্লাল ও গানম্যান আজাদ দুজনেই সাফাতের অজান্তে ওই তরুণীদ্বয়কে শয্যাশায়ী হওয়ার প্রস্তাব দেয়। এতে বিপাকে পড়েন তরুণীদ্বয়। তারা ওই ভিডিও নিজ চোখে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিল্লাল তখন সেই রাতে ধর্ষণের বর্ণনা দেন। এতে তরুণীরা আরও আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। এমন ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতিতে তরুণীরা ওই ভিডিও ফুটেজ কৌশলে সংগ্রহ করার চেষ্টা করেন। ঘটনাটি সাফাত নিজেও স্বীকার করার পর তরুণীদের আবারও ওই হোটেলে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। নইলে তা ফাঁস করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। এ অবস্থায় তরুণীরা এ ঘটনা তাদের একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তির মাধ্যমে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। তারপর তারা থানায় গিয়ে মামলা করার সিদ্বান্ত নেন। এক কেজিও বৈধ নয় আপন জুয়েলার্স থেকে জব্দ করা ৪৯৮ কেজি (প্রায় সাড়ে ১৩ মণ) স্বর্ণের মধ্যে এক কেজিরও কোন বৈধ কাগজ দেখাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত ডার্টিমানি ও চোরাচালানের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়। ‘আপন জুয়েলার্স’ থেকে জব্দ করা স্বর্ণের বিষয়ে বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন শুল্ক ও গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান। তিনি জানান, শুল্ক ও গোয়েন্দার দল আপন জুয়েলার্সের গুলশান, উত্তরা, মৌচাক ও সীমান্ত স্কয়ারসহ বিভিন্ন শাখায় অভিযান চালিয়ে ৪৯৮ কেজি স্বর্ণ ও ডায়মন্ড ব্যাখ্যাহীনভাবে মজুদ রাখার অভিযোগে জব্দ করে। গুলশানের সুবাস্তু টাওয়ারে আপন জুয়েলার্সের একটি শাখা বন্ধ পাওয়ায় সেটি সিলগালা করে দেয়। ড. মইনুল খান বলেন, এই বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের বৈধ সরবরাহের কোন কাগজ দেখাতে পারেনি আপন জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষ। তারা বৈধ কাগজ দেখানোর জন্য সময় চেয়েছেন। আমরা সময় দিয়েছি। শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষের সহকারী কমিশনার দিপা রানী হালদার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বনানী হোটেলে দুই তরুণী ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিম ও তার ছেলে শাফাত আহমেদের চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। কোন কোন তথ্যে দেখা যায়, মেসার্স আপন জুয়েলার্সের মালিকরা অবৈধ ব্যবসার আড়ালে ‘ডার্টিমানি’ অর্জন করেছেন, যা মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ। এ ঘটনায় (ধর্ষণ) ‘ডার্টিমানি’র যোগসূত্র রয়েছে বলেও প্রমাণ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অবৈধ ব্যবসার অভিযোগটি খতিয়ে দেখাকে ‘পাবলিক ডিমান্ড’ হিসেবে দেখছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। তাই অভিযোগটি আমলে নিয়ে গভীর অনুসন্ধানে নেমেছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। গচ্ছিত সোনা তুলে নেয়ার আহ্বান আপন জুয়েলার্সে শত শত গ্রাহকের গচ্ছিত রাখা সোনা আগামী সোমবার প্রয়োজনীয় রশিদ দেখিয়ে তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। বুধবার আপন জুয়েলার্সের তিন মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ এই তথ্য জানান। মহাপরিচালকের পক্ষে উপপরিচালক এইচ এম শরিফুল হাসান স্বাক্ষরিত এক আদেশে এই তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আপন জুয়েলার্সের সিলগালা করা শাখাগুলোতে যেসব গ্রাহকের স্বর্ণ অলঙ্কারসহ অন্যান্য অলঙ্কার যা রিপেয়ারিং বা এক্সচেঞ্জের জন্য গচ্ছিত রাখা হয়েছে তা জনস্বার্থে আগামী সোমবার রশিদ দেখিয়ে গ্রাহকরা তুলে নিতে পারবেন। সোমবার বেলা ২ টায় প্রতিটি শাখা থেকে স্বর্ণালঙ্কার বা অন্যান্য অলঙ্কার অক্ষত অবস্থায় গ্রাহকদের ফেরত দেয়া হবে। এ বিষয়ে আপন জুয়েলার্স তাদের গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, শাখাগুলোর যেসব লকারে আপন জুয়েলার্সের গুরুত্বপূর্ণ কাগজ রয়েছে, যা তাদের আইনী সহায়তার জন্য প্রয়োজন হবে, তা মালিকদের উপস্থিতিতে ১৮ মে হস্তান্তর করা হবে। তা সংগ্রহ করার জন্যও মালিক পক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাগজপত্র ও দলিলাদি সংগ্রহের পর ২৩ মে মালিক পক্ষকে শুল্ক গোয়েন্দাদের শুনানিতে অংশ নেয়ার জন্যও বলা হয়েছে। আমার দোকানে অবৈধ সোনা নেই আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক দিলদার আহমেদ বলেছেন, আমার দোকানে কোন অবৈধ সোনা নেই। সবাই যেভাবে ব্যবসা করে আমিও সেভাবেই করি। বুধবার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় বিকেল সোয়া ৫টার দিকে সাংবাদিকদের কাছে এ দাবি করেন তিনি। আপন জুয়েলার্সের রয়েছে আমাদের দোকান সার্চ করার। তারা আমাদের স্বর্ণ ও ডায়মন্ড জব্দ করেছে। আমরা পেপার্স শো করব। সময় নিয়েছি। এদিন বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে কাকরাইলস্থ আইডিবি ভবনের ১০তলায় শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে সাক্ষাতের জন্য আপন জুয়েলার্সের মালিক তিন ভাইÑগোলজার আহমেদ, দিলদার আহমেদ ও আজাদ আহমেদ উপস্থিত হন। এ সময় জন্কণ্ঠের এক প্রশ্নের জবাবে দিলদার বলেন, আপন জুয়েলার্স থেকে জব্দ করা স্বর্ণগুলো বৈধ না-কি অবৈধ তা প্রমাণের জন্য শুল্ক গোয়েন্দা যে কাগজপত্র চেয়েছে তা জমা দেয়ার জন্য ১৫ দিনের সময় চেয়েছি। শুল্ক গোয়েন্দা যেসব কাগজপত্র চেয়েছে আমরা তা জমা দেব। তবে আমাদের কাছে কোন অবৈধ মালামাল নেই। শুল্ক গোয়েন্দারা তাদের কাজ করছেন। তারা আমাদের কাছে যেসব ডকুমেন্টস চেয়েছেন আমরা সেগুলো জমা দেয়ার জন্য পনেরো দিন সময় চেয়েছি। আমরা আমাদের পেপার্স শো করব।
×