ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দৃশ্যমান উন্নয়ন উত্তর সিটির

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ১৮ মে ২০১৭

দৃশ্যমান উন্নয়ন উত্তর সিটির

রাজধানী ঢাকাকে একটি তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তোলার দাবি ঢাকাবাসীর দীর্ঘদিনের। তাদের প্রত্যাশা পূরণে অতীতে নগর পিতারা যে খুব বেশি সফল হয়েছেন তা বলা যাবে না। তবে বর্তমান বিভক্ত ঢাকার উত্তর সিটির মেয়র তার দায়িত্ব পালনের দুই বছর পূর্তিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় দাবি করেছেন, এক এক করে প্রতি মাসেই বদলে যাবে ঢাকা। মেয়র আনিসুল হকের আন্তরিক সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন নেই, তবে তার কাজের মধ্য দিয়েই প্রমাণ হবে উন্নয়ন কতটা। এ কথা অস্বীকারের জো নেই দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে উত্তর সিটির মেয়র নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বাচনে তার দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে। ইতোমধ্যে তিনি ৩ লাখ ৩০ হাজার বর্গফুট সড়ক উদ্ধার করেছেন যা আগে ছিল অভাবিত। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন এলাকা থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার অবৈধ সাইনবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন সরিয়েছেন। অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। ২ হাজার ৭৬৭টি অস্থায়ী স্থাপনা উচ্ছেদ করেছেন এবং অবৈধ বাড়ি উচ্ছেদ করেছেন ৪৫০টির মতো। তেজগাঁও অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড সরিয়ে দৃষ্টিনন্দন সড়ক, ডিভাইডার, ফুটপাথ করে দিয়েছেন, গাবতলীতেও অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। বনানী-গুলশান-বারিধারার মধ্যে বিশেষ সিটিবাস চালু করেছেন। হাতিরঝিল এলাকায়ও এ ব্যবস্থা চালু করেছেন, মশক নিধনে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছেন তা অপ্রতুল এবং অনিয়মিত তথাপি এসব কিছুকেই তার সদিচ্ছার সাফল্য হিসেবেই দেখব। কিন্তু কাওরান বাজার থেকে কাঁচবাজার সরিয়ে নেয়া, রেললাইনের দু’পাশের অবৈধ বস্তি, বাজার উচ্ছেদ করাসহ উত্তর সিটির সার্বিক অবকাঠামোগত উন্নয়নে আরও সক্রিয় ভূমিকা দরকার। দরকার সত্যিকার একটা নির্মল, পরিবেশবান্ধব, বসবাস উপযোগী আধুনিক প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন ঢাকা। নগরীর নিরাপত্তার বিষয়টিও এ ক্ষেত্রে সবিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ভাবা জরুরী। বিভিন্ন এলাকায় সিসিটিভি লাগানোর ফলে অপরাধ কমেছে বলে দাবি করা হলেও আমরা আশ্বস্ত হতে পারছি না ছিনতাই, ডাকাতির কারণে। এ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দেয়া জরুরী। ঢাকার দুই অপেক্ষাকৃত উদ্যমী মেয়র সর্বত্র ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করেছেন, ফুটপাথকে হকারমুক্ত রাখার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকাকে সুন্দর করার দায়িত্ব নাগরিকদেরও রয়েছে। তাদের সচেতনতা দায়িত্ব-কর্তব্য বোধ আরও বাড়লে এবং সার্বিক দিকনির্দেশনা সময়মতো দিতে পারলে তা আমলে নিয়ে মেয়ররা কাজ করলে ঢাকাকে সুন্দর ঢাকায় রূপান্তর সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বিভিন্ন বিভাগ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা। পানি, গ্যাস, বিদ্যুত থেকে সড়ক যোগাযোগ, পুলিশী নিরাপত্তা এসব বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ থাকা বাঞ্ছনীয়। যে কোন উন্নয়ন কাজে সমন্বয় একটা বড় বিষয়। তাছাড়া শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় লাইব্রেরি, খেলার মাঠ, অডিটরিয়াম, জিমনেসিয়াম, গড়ে তোলাও জরুরী। ঢাকায় নাগরিকদের চিত্তবিনোদনের জন্য পর্যাপ্ত পার্ক নেই, নেই হাঁটার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা। প্রাত-বৈকালিক সান্ধ্য ভ্রমণের জন্য বৃক্ষশোভিত উদ্যান কই? আমরা মনে করি ঢাকাকে সত্যিকার বসবাস উপযোগী, নিরাপদ নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সবার সহযোগিতা যেমন দরকার, তেমনি দরকার নগর পিতাদের একাগ্রতা, আন্তরিকতা এবং সদিচ্ছা।
×