ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার চুয়াডাঙ্গা গ্রাম;###;৫ জঙ্গী আস্তানা কর্ডন করে রেখেছে র‌্যাব;###;এন্টি মাইন, ডিনামাইট স্টিকসহ বিপুল পরিমাণ বোমা ও বিস্ফোরক উদ্ধার

এক গ্রামে ৫ জঙ্গী আস্তানা

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৭ মে ২০১৭

এক গ্রামে ৫ জঙ্গী আস্তানা

এম. রায়হান, ঝিনাইদহ থেকে ॥ ঝিনাইদহ সদর উপজেলার চুয়াডাঙ্গা গ্রামে ৫টি জঙ্গী আস্তানা কর্ডন করে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব। মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে র‌্যাব এ অভিযান শুরু করে। এ অভিযানে ২টি সুইসাইডাল ভেস্ট, ৫টি শক্তিশালী বোমা, ১৮টি ডিনামাইট স্টিক, বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির ১৮৬টি বৈদ্যুতিক সার্কিট, ৪ ড্রাম রাসায়নিক দ্রব্য ও ১টি এন্টি মাইন উদ্ধার। এখনও এখনও পুরো এলাকা কর্ডন করে রেখেছে র‌্যাব। আজ সকালে নতুন করে অভিযান শুরু করা হবে বলে ঝিনাইদহ ল্যাবের অধিনায়ক মেজর মনির আহমেদ জানান। এদিকে সোমবার রাতে সেলিম (৩০) ও প্রান্ত (১৭) নামে দুই নিউ জেএমবি সদস্যকে র‌্যাব গ্রেফতার করে। পরে তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক চুয়াডাঙ্গা গ্রামে অভিযান চালানো হয়। প্রথম দিকে র‌্যাব দুটি জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পেলেও পরে অভিযান চলাকালে পর্যায়ক্রমে আরও ৩টি জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পান। খবর পেয়ে র‌্যাব-৬-এর অধিনায়ক এডিশনাল ডিআইজি খন্দকার রফিকুল ইসলাম, র‌্যাবের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও পিবিআই সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। সকাল থেকেই এলাকায় মৌখিকভাবে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। জঙ্গী আস্তানায় অভিযানের সময় গ্রামের লোকজন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। গ্রামের একটি মহল্লার ভেতরেই ছিল ৫ জঙ্গী আস্তানা। ওই মহল্লা থেকে লোকজন বাইরে বের হতে পারছিলেন না। তারা নিজ ঘরে জানালা- দরজা বন্ধ করে ভেতরে থাকেন। বাইরে থেকেও ওই মহল্লায় কাউকে ঢুকতে দেয়া হয় না। একের পর এক জঙ্গী আস্তানার খোঁজ মিলতে থাকায় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঝিনাইদহ র‌্যাবের অধিনায়ক মেজর মনির আহমেদ বলেন, সোমবার রাতে চুয়াডাঙ্গা গ্রামে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা অভিযান চালায়। রাত ১টার দিকে গ্রামের ওহাব বিশ্বাসের বাড়ির পাশ থেকে মতিয়ার রহমানের ছেলে প্রান্ত ও আত্তাব উদ্দিনের ছেলে সেলিমকে গ্রেফতার করে। তাদের দুইজনেরই বাড়ি চুয়াডাঙ্গা গ্রামে। তাদের র‌্যাব ক্যাম্পে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর তারা চুয়াডাঙ্গা গ্রামে প্রথমে ২টি ও পরে ৩টি মোট ৫টি জঙ্গী আস্তানার সন্ধান দেয় এবং তারা নব্য জেএমবি সদস্য বলে ব্যাবের কাছে স্বীকার করে। সে মোতাবেক মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে চুয়াডাঙ্গা গ্রামে অভিযান শুরু করা হয়। প্রথমে প্রান্তর বাড়ির পাশের বাঁশ বাগানের ভেতর থেকে ২টি সুইসাইডাল ভেস্ট ও সেলিমের বাড়ির পাশে মাটির নিচ থেকে ৫টি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করা হয়। দুপুরের পর আরও ৩টি জঙ্গী আস্তানায় অভিযান শুরু করা হয়। সেখান থেকে ১৮টি ডিনামাইট স্টিক, বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির ১৮৬টি বৈদ্যুতিক সার্কিট, ৪ ড্রাম রাসায়নিক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় মঙ্গলবার অভিযান স্থগিত করা হয়েছে। আজ সকালে নতুন করে অভিযান শুরু করা হবে বলে মেজর মনির আহমেদ জানান। প্রথম ধাপে ১টি জঙ্গী আস্তানায় অভিযান শেষে র‌্যাব-৬-এর অধিনায়ক এডিশনাল ডিআইজি খন্দকার রফিকুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ২টি সুইসাইডাল ভেস্ট উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি স্পটে অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার সেলিম ও প্রান্ত নব্য জেএমবির সমস্য। তাদের তথ্যের ভিত্তিতেই আজকের এই অভিযান চালানো হচ্ছে। র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার সেলিম গত ৭ মে মহেশপুর উপজেলার বজরাপুর গ্রামে জঙ্গী আস্তানায় নিহত তুহিনের ভাই এবং প্রান্ত তার চাচাত ভাই। পোড়াহাট ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড সদস্য মাফিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের এ ইউনিয়নের চুয়াডাঙ্গা গ্রামে এতগুলো জঙ্গী আস্তানা রয়েছে তা আমরা ভাবতেও পারিনি। সকাল থেকে একের পর এক ৫টি জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব। সেসব আস্তানা থেকে বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক ও বোমা পাওয়ার সংবাদ পেয়ে আমরা ভীত হয়ে পড়েছি। হাতের কাছে এত বড় বড় জঙ্গী রয়েছে তা আগে কোনদিন ধারণা করতে পারিনি। তিনি এসব জঙ্গীদের আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়। চুয়াডাঙ্গা গ্রামের আয়ুব আলী খাঁ বলেন, আমরা প্রতিদিন সকাল-দুপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে যাতায়াত করি। কোনদিন বুঝতে পারেনি সেলিম ও প্রান্ত জঙ্গী সদস্য। তাদের আচরণেও আমরা কিছু বুঝতে পারিনি। আমরা চাই, প্রকৃত দোষীদের ধরে শাস্তি দেয়া হোক। লিপু হোসেন বলেন, সেলিম ও প্রান্তর সঙ্গে আমাদের প্রায়ই দেখা হয়। তারা গ্রামের ছেলে। আমি কোন সময় বুঝতে পারিনি এরা জঙ্গী। আজ অবাক হচ্ছি। সকাল থেকেই দেখছি, র‌্যাব এসে প্রায় সারা গ্রাম ঘিরে ফেলেছে। অভিযান চালিয়ে তারা বোমা, ভেস্টসহ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক পেয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছে। এসব দেখে আমরা খুব ভয়ে আছি। গ্রামের মনোয়ারা খাতুন বলেন, এত জঙ্গী আমাদের গ্রামে তা কোনদিন বুঝতে পারিনি। র‌্যাব যদি এদের না ধরত তাহলে হয়তো বড় ধরনের ক্ষতি করত। ধরা পড়ে ভালই হয়েছে। আমরা অন্তত নিরাপদে থাকতে পারব। ঝিনাইদহ শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে এই চুয়াডাঙ্গা গ্রাম। এ গ্রামেই ঘাঁটি গাড়ে নব্য জেএমবি। চুয়াডাঙ্গা গ্রামের আবদুল ওহাবের বাড়ির পাশ থেকে সোমবার রাতে র‌্যাব গ্রেফতার করে আফতাব উদ্দিনের ছেলে সেলিম (৩৫) ও মতিয়ার রহমানের ছেলে প্রান্তকে (১৭)। তাদের দুইজনেরই বাড়ি চুয়াডাঙ্গা গ্রামে। উল্লেখ্য, গত ২১ ও ২২ এপ্রিল ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামে জঙ্গী আস্তানা আবদুল্লাহর বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে ২০ ড্রাম হাইজেন পারঅক্সাইড, পিস্তল, গুলি, সুইসাইডাল ভেস্ট, বেল্টসহ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। এরপর ৭ মে মহেশপুর উপজেলার বজরাপুর গ্রামের জহুরুল ইসলামের বাড়িতে জঙ্গী আস্তানা সন্দেহে ঘিরে অভিযান চালানো হয়। এ অভিযানে পোড়াহাটির আবদুল্লাহ ও তুহিন নামে দুই জঙ্গী নিহত হয়। আহত হয় কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এডিসি নাজমূল ইসলাম ও এসআই মহসিন। সেখান থেকে ৪টি বোমা ও ২টি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার করা হয় জঙ্গী আস্তানার মালিক জহুরুল ইসলাম ও তার ছেলে জসিম উদ্দিনকে। ৭ ও ৮ মে সদর উপজেলার লেবুতলা গ্রামের শরাফত হোসেন ম-লের বাড়িতে জঙ্গী আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ অভিযানে শামীম হোসেন নামে একজনকে গ্রেফতার, ১টি পিস্তল ও ৮টি বোমা উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা সবাই নব্য জেএমবির সদস্য বলে পুলিশ জানায়। সব শেষে মঙ্গলবার (১৬ মে) সদর উপজেলার চুয়াডাঙ্গা গ্রামে ৫টি জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পায় র‌্যাব। সকাল থেকে একটানা অভিযান চলে এ আস্তানাগুলোতে।
×