ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

এরশাদের নেতৃত্বে আজ সম্মিলিত জাতীয় জোটের আত্মপ্রকাশ

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৭ মে ২০১৭

এরশাদের নেতৃত্বে আজ সম্মিলিত জাতীয় জোটের আত্মপ্রকাশ

রাজন ভট্টাচার্য ॥ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে আসছে ৭০ দলের ‘সম্মিলিত জাতীয় জোট- ইউএনএ’। আজ ৭ মে আনুষ্ঠানিকভাবে এ জোট আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে জাতীয় পার্টি ছাড়া অন্য কোন দলের নিবন্ধন নেই। বাকি ৬৯টি দলই নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনের বাইরে। বেশিরভাগই নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল। এ উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন এরশাদ। দেশের ইতিহাসে সংখ্যার দিক থেকে এটি হবে দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক জোট। এর আগে ১৯৮০ সালে আ স ম আব্দুর রব ৭৭ দলের রাজনৈতিক জোট গঠন করেছিলেন। যদিও ওই জোটের এখন আর কার্যকারিতা নেই। চলমান রাজনীতির মাঠে এরশাদই হবেন সবচেয়ে বড় জোটের কা-ারি! রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সংসদের বাইরে বিএনপিকে চাপে রাখতেই মূলত এ নতুন জোট হচ্ছে। অনেকের মতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ভোটব্যাংকে ভাগ বসানোর আশায় ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে এ জোট গঠনের চেষ্টা চলছে, যার নেপথ্যে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা। নেতাদের ধারণা, ইসলামী দলের নামে রাজনীতি করলে এ জোটের ভোট বাড়বে। নতুন নতুন দলও যুক্ত হবে এ স্রোতে। তবে এরশাদের নেতৃত্বে সরকারের এ পরিকল্পনা কতটা সফল হবে তা দেখার বিষয়। দলটির একাধিক শীর্ষনেতা জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই এরশাদ ইসলামী দলগুলোর পরামর্শে রাজনৈতিক কর্মসূচীও ঘোষণা করবেন। হেফাজতে ইসলাম থেকে শুরু করে ধর্মীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত শীর্ষনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন সাবেক এ স্বৈরশাসক। এরশাদের নেতৃত্বাধীন এ নতুন জোটে আ স ম আবদুর রবের জেএসডি, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল যুক্ত হওয়ার গুঞ্জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত তারা আসবেন কি-না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই যাচ্ছে। তবে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা, আ স ম আবদুর রবের জেএসডি, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক আন্দোলন, বাসদের উভয় অংশসহ বেশ কয়েকটি ছোট রাজনৈতিক দলের ‘বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি’র ব্যানারে জোট গড়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, দেশে জোটের রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ আছে। কোন্ দলের কত ভোট আছে সেটি মূল কথা নয়, দেশের মানুষ দেখতে চায় এরশাদের সঙ্গে কয়টি দল আছে। ২০ দলীয় জোট ও ১৪ দলীয় জোটের বেশিরভাগ শরিক দলের জনভিত্তি নেই। তারপরও শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া জোটের রাজনীতিকে গুরুত্বসহকারে দেখেন। আমরাও তাই। এদিকে নতুন জোটে শুরু থেকেই প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট এবং বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টকে আসার অনুরোধ জানানো হলেও তারা মজলিসে শূরার বৈঠকের কথা বলে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তবে ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেছেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা সব দলের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কে বিশ্বাসী। তবে এখনই কোন জোটে যাব কি-না তা নির্ভর করছে আমাদের দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম মজলিসে শূরার সদস্যদের মতামতের ওপর। শূরার বৈঠকের পরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো যাবে। তবে আপাতত শূরার বৈঠকের সম্ভাবনা নেই বলেও তিনি জানান। গত ৩০ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবে জোট গঠনের প্রাথমিক আলোচনায় ৩৪টি দল যোগ দিয়েছিল। নতুন করে লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান সেকেন্দার আলী মনির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় জোট বিএনএ’র ২১টি রাজনৈতিক দল এবং সাংবাদিক সালাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় যুক্তফ্রন্টও আজ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেবে। এতে জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা হবে ৭০টি। আর নতুন জোটের নামকরণ করা হচ্ছে সম্মিলিত জাতীয় জোট- ইউএনএ। যদিও কেউ কেউ আবার বলেছেন, নতুন জোটের নামকরণ হচ্ছে সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যজোট। ৩০ মার্চ এরশাদের নেতৃত্বাধীন আলোচনায় আসা দলগুলো ছিলÑ গণ ইসলামিক জোট, পিপলস জাস্টিস পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ ইসলামিক লিবারেল পার্টি, জাতীয় শরিয়া আন্দোলন, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ, বাংলাদেশ জনতা পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী জনকল্যাণ পার্টি, ইউনাইটেড ইসলামিক লীগ, জমিয়তে মুসলিমিন বাংলাদেশ, ন্যাপ-ভাসানী, খেলাফত সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি, ইসলামী গণ-আন্দোলন, জাতীয় ইসলামী আন্দোলন, জমিয়তুল ওলামা পার্টি, জাতীয় ইসলামিক মুভমেন্ট, খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশ, ইনসানিয়াত পার্টি, খেলাফত বাস্তবায়ন পার্টি, ইসলামী আক্বিদা সংরক্ষণ পার্টি, ইসলামী সংরক্ষণ পার্টি, মুসলিম জনতা পার্টি, খেদমতে খালক পার্টি, ওলামা মাশায়েখ সমন্বয় পরিষদ, ইউনাইটেড ইসলামিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ইসলামী পার্টি, ইসলামী সমাজ কল্যাণ আন্দোলন, বাংলাদেশ ইত্তেহাদুল মুসলিমিন, বাংলাদেশ খলাফাতুল উম্মাহ, বাংলাদেশ আক্বিমুদ্দিন মজলিস, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট পার্টি, জমিয়তুল হেদায়াহ মুভমেন্ট। এ দলগুলোর মধ্যে একটিরও নিবন্ধন নেই। এদিকে বাংলাদেশ জাতীয় জোট-বিএনএ চেয়ারম্যান সেকেন্দার আলী মনি জোট প্রসঙ্গে বলেন, আমরা ২১টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে বিএনএ জোট এইচএম এরশাদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছি। আজ নতুন এ জোট ঘোষণা করা হবে। জাতীয় পার্টি ছাড়া আমাদের জোটের অন্য কোন দলের নিবন্ধন নেই। তিনি বলেন, তাতে কী হয়েছে, আমাদের রাজপথের কর্মী বাহিনী আছে। নির্বাচনী মাঠ গরম করার মতো শক্তি-সামর্থ্যও আছে আমাদের। অন্যদিকে ১৫টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত যুক্তফ্রন্ট বৃহস্পতিবার জোটের এক সভা থেকে এরশাদের নেতৃত্বে সম্মিলিত জাতীয় জোটে যোগদানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যুক্তফ্রন্ট জোটের শরিক দলগুলো হলোÑ কৃষক শ্রমিক পার্টি-কেএসপি, আঞ্জুমানে তরিকতে সাজ্জাদী, নতুনধারা গণতান্ত্রিক পার্টি-এনজিপি, বাংলাদেশ দেশপ্রেমিক পার্টি-বিডিপি, সম্মিলিত নাগরিক পার্টি, বাঙালি জনতার পার্টি-বিজেপি, বাংলাদেশ জনকল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি-বিজিপি, জাতীয় গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা পার্টি, বাঙালি জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি, বিশ্বশান্তি মুক্তির গণপরিষদ, বঙ্গপার্টি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক ওলামা পার্টি, প্রগ্রেসিভ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক মুক্তি পার্টি। এ জোটের কোন দলের নিবন্ধন নেই। জানতে চাইলে জাপার মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার জনকণ্ঠকে বলেন, এটি নির্বাচনকালীন জোট। দেশের মানুষের সমর্থন নিয়ে আমরা রাজনীতির মাঠে নতুন করে জাগরণ সৃষ্টি করতে চাই। কারণ এখনও দেশবাসী এরশাদকে ভালবাসেন। তার উন্নয়নের কথা সবাই মনে রেখেছেন। আমি মনে করি নতুন এ জোটকে নিয়ে আগামী নির্বাচনে জাপা ক্ষমতায় আসবে। এরশাদের প্রেস সচিব শুনীল শুভ রায় বলেন, রবিবার বেলা ১১টায় জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন জাপা চেয়ারম্যান। তিনি থাকবেন জোটপ্রধান হিসেবে। এ জোট নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যাবে।
×