ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন মূল্যায়নে নতুন ফল

প্রকাশিত: ০৪:১০, ৭ মে ২০১৭

নতুন মূল্যায়নে নতুন ফল

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে বৃহস্পতিবার। পরীক্ষায় কৃতকার্য সব শিক্ষার্থীকে আমাদের অভিনন্দন। নতুন পদ্ধতিতে উত্তরপত্র মূল্যায়নের প্রভাব পড়েছে পরীক্ষার ফলে। এই পদ্ধতিকে সময়োচিত আখ্যা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, এ পদ্ধতিতে পাসের হার কিছুটা কমে গেলেও পরীক্ষার্থীদের মেধা যাচাইয়ে এটি যথার্থ কার্যকরী হবে। ১০ বোর্ডে এবার পাসের হার ৮০.৩৫ শতাংশ। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮১.২১ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার কমেছে। শুধু পাসের হার নয়, শতভাগ পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও এবার বেড়েছে। কমেছে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার দেশের ৯৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষার্থী পাসই করতে পারেনি। এর কারণ খুঁজে বের করে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে ভবিষ্যতে সব প্রতিষ্ঠান আশাব্যঞ্জক ফল উপহার দিতে পারবে বলে আমরা আশা করতে পারি। গত বছর ৫৩টি প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী ফেল করেছিল। আবার শতভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে। এবারের ফল বিশ্লেষণ করলে বলা যায়, ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশিত হওয়ার যে নিয়ম রয়েছে, এবারও সে ধারাবাহিকতা অক্ষুণœ রাখা হয়েছে। বিষয়টি প্রশংসনীয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, দ্রুত ফল ঘোষণা শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ধাপের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ কেন হ্রাস পেল, শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা নিশ্চয়ই তা মূল্যায়ন করবেন। মাধ্যমিকে পাসের হারের উল্লম্ফন শুরু হয়েছিল মূলত ‘অবজেকটিভ’ পদ্ধতির প্রশ্নপত্র চালুর পর। ইতোমধ্যে দেশে চালু হয়েছে সৃজনশীল পদ্ধতির প্রশ্নপত্র। উদ্দেশ্য, মুখস্থবিদ্যার ওপর শিক্ষার্থীদের নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা। তবে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠদানে সক্ষম শিক্ষকের অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে সরকার নিশ্চয়ই অবগত। এসএসসি পরীক্ষা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জীবনের বড় ধরনের একটি বাঁক ফেরার কেন্দ্র। এ পরীক্ষার ফলের ওপর শিক্ষার্থীর পরবর্তী ধাপের শিক্ষা গ্রহণের বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করে। কাজেই ভাল ফলের জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকম-লীসহ সংশ্লিষ্ট সবার যতœবান ও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে অনুত্তীর্ণদের সংখ্যা শূন্যের কাছাকাছি আনার চ্যালেঞ্জও গ্রহণ করা দরকার। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার লক্ষ্য শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি করা, যারা একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবে। শিক্ষার উন্নত গুণগতমান সে কারণে জরুরী তা বলাই বাহুল্য। শিক্ষার মান বাড়ানোর কথা আমরা বার বার বলে আসছি। সে লক্ষ্যে প্রয়োজন মানসম্মত শ্রেণীকক্ষ, যা নির্ভর করে মানসম্পন্ন শিক্ষকের ওপর। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষক নিশ্চিত করা দরকার। ভুলে গেলে চলবে না, আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের ভবিষ্যত। দেশের সেই ভবিষ্যত নাগরিকদের গড়ে তোলার দায়িত্ব যাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে তাদের মান হতে হবে প্রশ্নাতীত। পরীক্ষার ফলের সঙ্গে শিক্ষার মানের বিষয়টি সম্পর্কযুক্ত। শিক্ষার মানের উন্নতি হলে পরীক্ষার ফলেরও উন্নতি হবেÑ এটা সাধারণ হিসাব। কিন্তু রাতারাতি শিক্ষার মান বাড়ানো অসম্ভব। এর জন্য সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যাবশ্যক।
×