ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নত সেবা পাবে গ্রাহক ॥ বিদেশেও দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার বাজার সৃষ্টি হবে

মোবাইল ও ট্যাবে ৭শ’ গেমস, ৩শ’ এ্যাপস উন্নয়ন কর্মসূচী

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৫ মে ২০১৭

মোবাইল ও ট্যাবে ৭শ’ গেমস, ৩শ’ এ্যাপস উন্নয়ন কর্মসূচী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে মোবাইল ও ট্যাবলেটে ব্যবহারের জন্য ৭শ’ মোবাইল গেমস এবং ৩শ’ এ্যাপসের (এ্যাপ্লিকেশন) উন্নয়ন করার কর্মসূচী হাতে নিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। ইতোমধ্যে ‘জাতীয় পর্যায়ে মোবাইল এ্যাপ্স প্রশিক্ষণ ও সৃজনশীল এ্যাপ্স উন্নয়ন’ কর্মসূচী বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হয়েছে। কর্মসূচী বাস্তবায়ন হলে বিদেশে ২ থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার মোবাইল গেমস ও এ্যাপসের বাজার সৃষ্টি হবে। প্রকল্পে সহযোগিতা দিচ্ছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। সরকার এই প্রকল্পে ২৮২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। আধুনিক বিশ্বের কাছে তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশের এটি একটি বড় অর্জন হিসেবে দেখা দেবে। দেশবাসীও পাবেন মোবাইল ও ট্যাবলেটে আধুনিক সেবা। এই সেবা ঘরে বসেই তারা পাবেন। এ জন্য কোন সফটওয়্যারের প্রয়োজন হবে না। সরকার তথ্যপ্রযুক্তির উন্নত সেবা দিতেই এই উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, দেশে স্মার্টফোনের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বিভিন্ন এ্যাপসের ব্যবহারও। এখন বাংলায় তৈরি হচ্ছে নানা রকম এ্যাপ্লিকেশন বা এ্যাপস। এসব এ্যাপস স্মার্টফোন কিংবা ট্যাবলেট কম্পিউটারে সহজেই ব্যবহার করা যাবে। প্রযুক্তিতে বাংলার ব্যবহার বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য প্রতিনিয়ত বাংলা ভাষায় এ্যাপস তৈরি করছেন দেশীয় ডেভেলপাররা। এ্যান্ড্রয়েড চালিত স্মার্টফোনে বাংলা লেখায় অন্যতম জনপ্রিয় হচ্ছে ‘মায়াবি কীবোর্ডের’ মাধ্যমে। এতে ফিক্সড ও ফোনেটিক দুই ধরনের কীবোর্র্ডই আছে। এ্যাপসটি দিয়ে মোবাইল, ট্যাবলেটে বাংলা লেখা যাবে। সফটওয়্যার ছাড়াই বাংলা লেখার একটি এ্যাপস ‘বাংলা ভাই’। এ্যাপসটি ব্যবহার করে মোবাইল ফোনকে কীবোর্ডের মাধ্যমে ফেসবুক ও লিংকডিনে বাংলা লেখা যাবে। খুব বেশি প্রয়োজনীয় একটি বাংলা ভাষায় তৈরি ‘ল এ্যাপস’। কোন বিপদে পড়লে কী ধরনের আইনী সহায়তা পাবেন, কার কাছে যাবেন, আইনী প্রক্রিয়া ও নিয়ম কানুনগুলো কি। আর এ জন্য কি কি কাগজপত্র ও ডকুমেন্ট করা দরকার তার সব কিছু জানা যাবে। দেশের সরকারী ছুটির তালিকা নিয়ে প্রস্তত করা হয়েছে ‘বাংলাদেশের ছুটি’ নামক এ্যাপস। ২০১৪ সালের সকল আবশ্যিক ও ঐচ্ছিক ছুটিকে আলাদা আলাদা করে দেখানো হয়েছিল। এবার এ্যাপসটিকে আরও উন্নত করা হয়েছে। এছাড়া এই ছুটির তালিকার সঙ্গেই আছে ইভেন্ট ক্যালেন্ডার। ফলে ব্যবহারকারী নির্দিষ্ট ছুটির দিনের যে কোন পরিকল্পনা ওই ক্যালেন্ডারেই যোগ করতে পারবেন। নির্দিষ্ট সময়ে পরিকল্পনাটি মনে করিয়ে দেয়ার সুবিধাও রাখা হয়েছে এ্যাপসটিতে। রাশিফল জানতেও তৈরি করা হয়েছে এ্যাপস। বাংলায় রাশিফল জানা যাবে স্মার্টফোনের মাধ্যমেই। আর এটি সম্ভব ‘বাংলা রাশিফল’ নামের এ্যাপের মাধ্যমে। মোবাইল ফোনে বাংলা লেখার জন্য অনেক এ্যাপস তৈরি হয়েছে। সহজ ও সুন্দর ইউজার ইন্টারফেসের এই এ্যাপের সাহায্যে ফোনেটিকসের মাধ্যমে বাংলা লেখা সম্ভব। অফ লাইনে ব্যবহারের সুবিধা সংবলিত এ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগের সাইটেও বাংলা লেখা শেয়ার করা যাবে। এছাড়া কীবোর্ড ব্যবহার করে ও লেখা কপি করে অন্য যে কোন এ্যাপ্লিকেশনে বাংলা লেখা যাবে। এতে বাংলা অভিধানও রযেছে। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের তরুণরা যাতে এগিয়ে যেতে পারে সে জন্য সরকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ হাজার ডেভেলপার তৈরি করা হবে। এই ১০ হাজার ডেভেলপার ৭শ’ মোবাইল গেমস ও ৩শ’ মোবাইল এ্যাপস তৈরি করবে। এ ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮২ কোটি টাকা। আগামী ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে ২ থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার মোবাইল এ্যাপস ও গেমের বাজার তৈরি হবে। জানা গেছে, অনেক সময় জরুরী প্রয়োজনে বাংলা তারিখ জানার দরকার হয়। ‘বাংলা ক্যালেন্ডার’ নামে এ্যাপসটি ব্যবহার করে বাংলা মাসের তারিখ জানা যাবে। এতে বাংলা তারিখের পাশাপাশি ইংরেজী তারিখও চলে আসবে। স্মার্টফোনে শিশুদের জন্য বাংলায় গণিত শিক্ষার সুবিধা পাওয়া যাবে ‘ম্যাথ ফর কিডস ইন বাংলা’ নামক এ্যাপসটির সাহায্যে। এর মাধ্যমে শিশুরা গণিত শিখতে পারবে বাংলায়। বাংলাদেশের সম্পূর্ণ সংবিধানকে একটিমাত্র মোবাইল এ্যাপ্লিকেশনে আনা হয়েছে। বাংলা ভাষায় রচিত এই সংবিধান যে কোন নাগরিকের সংবিধান সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেবে। ব্যবহারকারীর সুবিধার্থে সংবিধানকে অধ্যায়ভিত্তিক সাজানো হয়েছে। মোবাইল ও ট্যাবলেটে বাংলায় এসএমএস লেখার সুবিধা পাওয়া যাবে ‘বাংলা এসএমএস’ নামক এ্যাপসটিতে। এতে ফোনেটিক কীবোর্ড লেআউট ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলায় এসএমএস লেখা যাবে। স্মার্টফোনে চাইলেই এ্যাপসটি ব্যবহার করে যে কাউকে বাংলায় এসএমএস পাঠানো যাবে। ইংরেজী শব্দের বাংলা অর্থ জানা যাবে এবার স্মার্টফোনের মাধ্যমেই। ‘বাংলা ডিকশনারি’ নামের এই এ্যাপসের সাহায্যে শুধু শব্দের অর্থই নয়; একই সঙ্গে পাওয়া যাবে শব্দের উচ্চারণও। এছাড়া যে শব্দের অর্থ জানতে চান, সেটি ক্লিক করলে সেই শব্দ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শব্দের সাজেশনও পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের মহান ভাষা আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে আরও বেশি জানতে ও অন্যকে জানানো যাবে ‘একুশ আমার’ এ্যাপটির মাধ্যমে। এতে রয়েছে কালপঞ্জি অনুসারে গৌরবোজ্জ্বল ভাষা আন্দোলনের বিস্তারিত ইতিহাস ও শহীদদের সংক্ষিপ্ত জীবনী। শুনতে পারা যাবে ভাষা আন্দোলনের ওপর বিখ্যাত সব গান। এছাড়া গানগুলোর লিরিক্সও পড়া যাবে। ইউটিউব লিংকের মাধ্যমে দেখা যাবে একুশের ওপর নির্মিত বিভিন্ন প্রামাণ্য চিত্র। এ্যাপটির মাধ্যমে পড়া যাবে একুশের ওপর লেখা বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিকের কবিতাও। এছাড়াও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে শেয়ার করা যাবে ভাষা আন্দোলনের ওপর নির্মিত বিভিন্ন চিত্রায়ন। আর্কাইভস বা গ্যালারি, ওয়াল পেপারসহ অনেক কিছু। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ রকম কয়েক শ’ এ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয়েছে। এবার টার্গেট নেয়া হয়েছে মোবাইল ও কম্পিউটার সেবার জন্য ৩শ’ নতুন এ্যাপস তৈরি করার। এজন্য বেসরকারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে; যাতে এ্যাপসগুলো বিশ্বমানের হয়। তথ্য প্রযুক্তিসম্পন্ন এ্যাপস তৈরি করার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। মোবাইল এ্যাপস তৈরির জন্য উন্নতমানের প্রশিক্ষণ ও সৃজনশীল এ্যাপস উন্নয়নের কাজ করা হবে। ইতোমধ্যে এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচী শুরু হয়েছে।
×