ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৫ মে ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ পরীক্ষা জীবনে অনেক দিতে হয়। পরীক্ষার কোন শেষ নেই। তবে শুরুটা বলা চলে এসএসসি দিয়ে। স্কুলজীবনের শেষ পরীক্ষাটি নানা কারণেই খুব গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রমাণ করার সব চেষ্টা করে। বাবা-মায়েরাও সন্তানের সাফল্য কামনায় নিজেকে সবটুকু উজার করে দেন। সঙ্গত কারণেই এসএসসির ফল মানে ব্যাপক উত্তেজনা। স্কুলের আঙিনায় বিপুলভাবে উদযাপন করা হয়। আর ঘরে ঘরে চলে মিষ্টি মুখ। বৃহস্পতিবার সেই চিরচেনা দৃশ্যটি আবারও দেখা গেল। এদিন ২০১৭ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। নানা হিসাব-নিকাশের কারণে এবার পাসের হার ও জিপিএ ৫ দুটোই কমেছে। পাসের হার গত বছরের তুলনায় প্রায় ৮ শতাংশ কমে ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এবার জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ ৪ হাজার ৭৬১ পরীক্ষার্থী। গতবারের চেয়ে পাঁচ হাজার কম। কমেছে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও। যারা আশানুরূপ ফল করতে পারেনি তারা সাধারণত সামনে আসে না। আসেনি। তবে যাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তারা দিনভর ছিল উৎসবের আমেজে। সারাদেশের মতো শহর ঢাকার স্কুলগুলোতেও আনন্দের বন্যা বয়ে গেছে। দুপুরের দিকে হলিক্রস স্কুলের সামনে দিয়ে আসার সময় অন্যদিনের মতো মনে হলো না কোন কিছুই। স্কুল ভবনের প্রবেশপথে বিশাল সাউন্ডবক্স। গান বাজছে। উপরে ব্যানার টানানো। সেখানে লেখাÑ এসএসসি রেজাল্ট সেলিব্রেশন। ভেতরের দিকে উঁকি দিয়ে দেখা গেল, তুমুল হৈ হুল্লোড়। মেয়েরা একে অন্যের হাত ধরে নাচছে। গাইছে। পাওয়ার আনন্দে কচিকাঁচার দল যেন নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছিল! দেখে, আহা, কত স্মৃতি যে মনে পড়ে যায়! রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল এন্ড কলেজও এখন রাজধানীর খুব উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বহু শিক্ষার্থী এবার এখান থেকে এসএসসি দিয়েছে। ফলও ভীষণ ভাল। কত ভাল সেটা বোঝাতেই যেন কিছুক্ষণ পর পরই চিৎকার করে উঠছিল ফল প্রকাশের আগে থেকে ক্যাম্পাসে সমবেত হওয়া শিক্ষার্থীরা। তাদের অনেকের সঙ্গে এসেছিলেন বাবা-মা। খুশিতে নিজের সন্তানকে বার বার জড়িয়ে ধরছিলেন। কৃতী শিক্ষার্থীরা কাঁদছিল। কাঁদছিলেন অভিভাবকরাও। সবার চোখে ছিল আনন্দাশ্রু। এদিন রোদও ছিল খুব। গ্রীষ্মের গরমে গায়ের ত্বক জ্বলছিল রীতিমতো। তবু থামার নাম নেই কারও। হৈ হুল্লোড় চলছিলই। প্রচ- গরমে গা ঘেমে যাচ্ছিল সন্তানের। অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা মা দৌড়ে এসে মুছে দিয়ে গেছেন। সব দেখে সত্যি অন্যরবম অনুভূতি হয়। এই অনুভূতির কথা বলে বোঝানো মুশকিল। রাজধানীর মিষ্টির দোকানগুলোতেও প্রভাব ফেলেছিল এসএসসির রেজাল্ট। বিকেলে মিনাবাজারের ইস্কাটন আউটরেটসহ একাধিক মিষ্টির দোকানে গিয়ে দেখা যায়, বিক্রি শেষ। মিষ্টি সব বিক্রি হয়ে গেছে। দিলু রোডের মুখে একটি দোকান। দোকানি আশ্বস্ত করে বললেন, সন্ধ্যায় আবার পাওয়া যাবে। এদিকে পরীক্ষার ফল অপেক্ষাকৃত খারাপ হওয়ার ব্যাখ্যা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তার সেই ব্যাখ্যা নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে এখন। মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তনের কারণ তুলে ধরে মন্ত্রী বলেছেন, পরীক্ষার পর পরীক্ষকরা খাতা নিয়ে যান এবং ফল জমা দেন। কিন্তু অভিজ্ঞতায় দেখা যায় তারা ভাল করে খাতা দেখেন না। হঠাৎ এমন মন্তব্য নিয়ে আলোচনা হতে পারে বৈকি!
×