ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্মার্টকার্ড বঞ্চিত নাগরিক

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ১ মে ২০১৭

স্মার্টকার্ড বঞ্চিত নাগরিক

কারিগরি ত্রুটিসহ নানা কারণে খোদ রাজধানীতেই এখন পর্যন্ত অনেক নাগরিক স্মার্টকার্ড পাননি অথবা সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, রাজধানীতে স্মার্টকার্ড বিতরণের হার ৬০ শতাংশ। বাকি ৪০ শতাংশ নাগরিক স্মার্টকার্ড পাননি। গত বছরের ৩ অক্টোবর থেকে রাজধানীতে শুরু হয় স্মার্টকার্ড বিতরণ। তবে শুরুতেই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশনের প্রচার-প্রচারণার ঘাটতির অভিযোগ ছিল। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সব নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেয়ার কথা থাকলেও সেটা বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। খোদ রাজধানীতেই কয়েক লাখ ভোটার স্মার্টকার্ড পাননি। সে অবস্থায় সারাদেশের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। তদুপরি পর্যাপ্ত প্রচারের অভাব, ভাসমান ভোটার, স্থানান্তরিত ভোটার, বদলির চাকরিজীবী, কারিগরি ত্রুটি ও সমন্বয়হীনতার কারণে স্মার্টকার্ড বিতরণে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এনআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেয়ার মতো পর্যাপ্ত প্রিন্টার পর্যন্ত তাদের হাতে নেই। এমনকি ফ্রান্সের যে প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে স্মার্টকার্ড তৈরির ব্ল্যাঙ্ককার্ড সরবরাহের কথা, চুক্তি থাকলেও তা তারা দিতে পারছে না যথাসময়ে। ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত মাত্র ৫ লাখ ২০ হাজার ব্ল্যাঙ্ককার্ড সরবরাহ করেছে। অথচ দেশে ভোটারের সংখ্যা ৯ কোটিরও বেশি। রাজধানীতেই ভোটারের সংখ্যা ৫২ লাখ ৬৫ হাজার ৬৫৭ জন। তদুপরি ১৮ বছর বয়সী নতুন নতুন ভোটারের নাম তালিকাভুক্ত হচ্ছে। তাদের জন্য বুঝি আপাতত কাগজে মুদ্রিত লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্রই ভরসা! দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই যে, ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান নির্বাচন কমিশনের একটি ভাল ও সফল উদ্যোগ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় ২০০৮ সালে কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছিল। এতে করে পরবর্তীকালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচন যেমন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হতে পেরেছে, তেমনি নাগরিকরাও নানাভাবে উপকৃত হয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে। অধুনা জাতীয় পরিচয়পত্রকে আরও তথ্যসমৃদ্ধ ও আধুনিক করে নাম দেয়া হয়েছে স্মার্টকার্ড। পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি ওয়ার্ডে এবং দু’চারটি ছিটমহলে স্মার্টকার্ড বিতরণও শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে তেমন প্রচার-প্রচারণা না থাকায় সাধারণ মানুষের তেমন সাড়া মিলছে না। যেমন, গত ৩ অক্টোবর থেকে রাজধানীর দুটি থানার তিনটি ওয়ার্ডে কার্ড বিতরণ শেষ হলেও ৪০ ভাগ ভোটারের কাছে পৌঁছেনি স্মার্টকার্ড। এই তথ্য মিলেছে সংশ্লিষ্ট থানা নির্বাচন অফিস সূত্রে। কোন কোন থানায় অর্ধেকের বেশি ভোটার স্মার্টকার্ড নিতে আসেননি। এর অবশ্য নানা কারণ আছে। ইতোমধ্যে অনেকেই বাসা বদল করেছেন; এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন অন্যত্র, দেশের বাইরে অথবা গ্রামের বাড়িতে। নাগরিক জীবনে এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক ও সঙ্গত। এর বাইরেও জীবনযাপনের গ্লানি মোচনে প্রায় সবাইকেই ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয়Ñ অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্যবিধ কাজে। তাদের তো শুধু স্মার্টকার্ডের পেছনে ছুটলে চলে না! অন্যদিকে শুক্র-শনিবার সরকারী অফিসে ছুটি। সুতরাং স্মার্টকার্ড বিতরণের গতি আসবে কোত্থেকে ও কিভাবে? ইসির পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, যে বা যারা স্মার্টকার্ড নিতে আসতে পারেননি, পরে তারা তা সংগ্রহ করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট থানা অফিস থেকে। তবে তাতেও কিন্তু কিছু ঝুট-ঝামেলা ও সমস্যা থেকে যেতে পারে। সে অবস্থায় নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্টদের স্মার্টকার্ড বিতরণে আরও কার্যকর ও গঠনমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এলাকা ভিত্তিতে চালাতে হবে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা। দেশে এতগুলো জাতীয় দৈনিক ও টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে। সুতরাং বার বার প্রচারেও বাধা নেই। সবচেয়ে ভাল হয় ‘ডোর টু ডোর ক্যাম্পেন’। মনে রাখতে হবে এটি একটি সাংবাৎসরিক নাগরিক সেবা। প্রয়োজনে স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার ও কাউন্সিলরদের কাজে লাগাতে হবে। মানুষের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করা সম্ভব হলে স্মার্টকার্ড বিতরণে অসফল হওয়ার কোন কারণ নেই।
×