ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য

জেনি এক শ’ মিটার দূর থেকে নিজের তৈরি বিস্ফোরক বিস্ফোরণে দক্ষ

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৯ এপ্রিল ২০১৭

জেনি এক শ’ মিটার দূর থেকে নিজের তৈরি বিস্ফোরক বিস্ফোরণে দক্ষ

শংকর কুমার দে ॥ জঙ্গীনেতা মুশফিকুর রহমান জেনি জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, তার নিজের তৈরি ইম্প্রোভাইস এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসে (আইইডি) ১০০ মিটার দূর থেকে বিস্ফোরণে পারদর্শী। এটি দূর থেকে রিমোট নিয়ন্ত্রিত। রিমোট নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই নাশকতার পরিকল্পনা করেছে সে। তার নেতৃত্বে অন্তত আরও ১৫ জন আছে যারা বিভিন্ন বিষয়ে প্রকৌশলী, মেধাবী ছাত্র, নানা পেশায় নিয়োজিত। তারা শীর্ষ জঙ্গী নেতা নিহত সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সদস্য। জেনিকে গ্রেফতারের পর ৫ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে এ ধরনের তথ্য পেয়েছে র‌্যাবের তদন্তকারীরা। র‌্যাব সূত্রে এ খবর জানা গেছে। জিজ্ঞাসাবাদে জেনি বলেছে, তার তৈরি একটি ইম্প্রোভাইস এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) পরীক্ষাও চালিয়েছিল সে। বুধবার রিমোট নিয়ন্ত্রিত আইইডির উপকরণসহ সারোয়ার-তামিম গ্রুপের আইইডি বিভাগের প্রধান জেনিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তাকে গ্রেফতার করার আগে গত দুই মাসে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশ থেকে আরও ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়, যারা জেনির সহযোগী। তার সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে র‌্যাবের দাবি। র‌্যাব-১০ এর কমান্ডিং অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর বলেছেন, মুশফিকুর রহমান জেনি বিস্ফোরক তৈরিতে বিশেষজ্ঞ। সে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের আইইডি তৈরি বিভাগের প্রধান। তার কাছ থেকেই আইইডি তৈরির প্রশক্ষিণ নিয়েছে তার সহযোগীরা। গত ২১ মার্চ রাজধানী বাড্ডা থেকে সারোয়ার-তামিম গ্রুপের কয়েক সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদকালে তারা জানায়, তাদের দলনেতা জেনি। তারা আইইডিতে গান পাউডার ব্যবহার করে সরকারী-বেসরকারী বড় স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করে আসছিল। এর আগে গ্রেফতার হওয়া ১৫ জনকেই আইইডি তৈরির প্রশিক্ষণ দেয় জেনি। তার নিজে বানানো সার্কিট তৈরির একটি ড্রাফও উদ্ধার করা হয়েছে বলে র‌্যাব কর্মকর্তার দাবি। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ মার্চ রাজধানীর বাড্ডা থেকে বুয়েট থেকে পাস করা দুই প্রকৌশলী অলিউজ্জামান ওরফে অলি ও আনোয়ারুল আলমসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত অলি একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করত। ২০১২ সালে সে বুয়েট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রী নেয়। আর আনোয়ার পড়াশোনা করেছে বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। গ্রেফতারের পর তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে রাজধানীর উপকণ্ঠ দোহার ও মিরপুর থেকে আরও দশ জনকে গ্রেফতার কর হয়। গ্রেফতার হওয়া এই গ্রুপের ১৫ সদস্যের নেতৃত্বে ছিল এই জেনি। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, প্রকৌশলী অলি ও আনোয়ারসহ আগে গ্রেফতার হওয়া সারোয়ার-তামিম গ্রুপের কয়েক সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদে জেনির বিষয়ে তথ্য পায় র‌্যাবের অনুসন্ধানকারী দল। পরে গত বুধবার সকালে উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের ১/এ রোডের ৮ নম্বর বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বাবার নাম ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচং এলাকায়। জেনি ২০০৫ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়। তবে জঙ্গী কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ায় পড়াশোনায় অনিয়মিত হয়ে পড়ে। বাড্ডায় গ্রেফতার হওয়া আনোয়ার ও অলি তার সহপাঠী ছিল। জিজ্ঞাসাবাদে জেনি বলেছে, তার নেতৃত্বে সারোয়ার-তামিম গ্রুপের ১৫ সদস্যের একটি সেল রয়েছে। সারোয়ার-তামিম গ্রুপের এই সেলটি ব্যাটারির এসিড এ্যাসিটোন ও নেল পলিস তৈরির উপাদান দিয়ে গান পাউডার তৈরি করত। পরে একটি সার্কিটের সঙ্গে গান পাউডার যুক্ত করে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটানোর উপযোগী করে আইইডি তৈরি করেছিল। বেশি পরিমাণ গান পাউডার দিয়ে তৈরি এসব আইইডির ধ্বংস ক্ষমতাও বেশি। সার্কিটগুলো জেনির তৈরি। তার বাসা থেকে প্রচুর পরিমাণে সার্কিট উদ্ধার করা হয়েছে। জেনি জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, তার সহযোগী অলিউজ্জামান অলি, আনোয়ার ও জেনি ২০১৪ থেকে ২০১৫ সালের কোন এক সময় সারোয়ার-তামিম গ্রুপে জড়িত হয়। পরে তারাই গ্রুপের অন্য সদস্যদের মোটিভেটেড করে জঙ্গী দলে ভেড়ায়। এই গ্রুপের অনেক সদস্যের সঙ্গে সারোয়ার জাহান ও তামিমের সরাসরি দেখা হয়েছে কিনা সে বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
×