ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রেণী পাল্টাচ্ছে কৃষি জমি

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৫ এপ্রিল ২০১৭

শ্রেণী পাল্টাচ্ছে কৃষি জমি

মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া, ২৪ এপ্রিল ॥ ভূমিগ্রাসীর থাবায় সবুজ আস্তরণে ঢাকা কলাপাড়ার উপকূলীয় জনপদ বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। হচ্ছে বিরানভূমি। কৃষি জমি চাপা পড়ছে বালুর নিচে। হাজার হাজার একর কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। স্থায়ীভাবে এসব জমি কৃষকের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ জীবনযাত্রার নির্মল দৃশ্য। বাদ পড়ছে না বাড়িঘর থেকে গ্রামীণ প্রকৃতি। যেন সবকিছুই ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে। বালুতে ভরাট হয়ে বিলীন হচ্ছে- পুকুর, গোয়ালঘর থেকে বাপ-দাদার কবর পর্যন্ত। বন বিভাগের সংরক্ষিত বাগানের গাছপালাসহ বাগান পর্যন্ত আগ্রাসী হানায় বালুর নিচে চাপা পড়ছে। রক্ষা পাচ্ছে না নদী-খাল থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক খাল পর্যন্ত। কখনও অধিগ্রহণ। কখনও আগ্রাসী থাবায় জবরদখল চলছে। সব চলছে ফ্রি-স্টাইলে। কোন নিয়ম কানুনের বালাই নেই। এক কথায় পর্যটন সমৃদ্ধ কলাপাড়ায় বালুর নিচে চাপা পড়ছে সবুজের সুন্দর আচ্ছাদন। অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় যেসব স্থাপনার জন্য সবুজ তিন ফসলি কৃষি জমিসহ বসতভিটা এলাকা বালুতে ভরাট করা হয়েছে তা নিয়েও রয়েছে এন্তার অভিযোগ। কারণ বিদ্যুত প্লান্ট করতে কী পরিমাণ জমির দরকার। আর কী পরিমাণ অধিগ্রহণ করা হয়েছে এ নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। একই অবস্থা পায়রাবন্দর নির্মাণ নিয়ে। নৌঘাঁটি নির্মাণসহ বিভিন্ন সরকারী উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সবুজে ঘেরা কৃষি উৎপাদনের তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণের বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই। ধানখালীতে ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপ বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্য ১০০২ একর তিন ফসলি কৃষি জমিসহ বসতভিটা অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত প্ল্যান্ট করতে কতটুকু জমির প্রয়োজন তা নিয়ে এখন সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যাদের জমিজমা, বসতভিটা গেছে তাদের মনে ক্ষোভের জন্ম নিয়েছে। এসব মানুষের জমি বুঝে নেয়ার দুই বছর পরেও পুনর্বাসনের আওতায় আনা হয়নি। অধিগ্রহণের টাকা আজও পায়নি ৭০ ভাগ মানুষ। সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে থাকা গেরস্ত পরিবারগুলো এখন বেড়িবাঁধের রিভার সাইটের স্লোপে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের চোখের সামনেই সবুজে ঘেরা মাঠে কৃত্রিম বালুর পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে। গত সাত বছরে অন্তত ১০ হাজার একর কৃষি জমির ধরন পাল্টে অনাবাদি হয়ে গেছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এভাবে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোক্তা কিংবা ভূমি ব্যবসায়ীরা শিল্প প্রতিষ্ঠান করার নামে বেড়িবাঁধের বাইরের সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় করে বালুতে ঢেকে দিয়েছে। শত শত গাছপালা কেটে সাবাড় করে দেয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহণকৃত করা জমিজমা দখল ও ভরাট করে নেয়া হয়েছে। স্লুইসসংযুক্ত খাল পর্যন্ত ভরাট করা হয়েছে। মিলিয়ে গেছে রাখাইনদের শ্মশানসহ ভূমিহীনদের জমিজমা। পায়রা বন্দর প্রকল্প এলাকার উত্তর ও দক্ষিণ দিকে এ চিত্র বিরাজমান। নাচনাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় চাকামইয়া-টিয়াখালী দোন নদীর তীর দখল করে বনাঞ্চল কেটে সাফ করে দোকানপাটসহ বাড়িঘর করা হয়েছে। চাকামইয় ব্রিজ থেকে রজপাড়া পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। কুয়াকাটা মহাসড়ক লাগোয়া আলীপুর-কুয়াকাটা সড়কের মাঝ বরাবর প্রায় ৮০ বিঘা জমি তিন ফসলি কৃষি জমি বিক্রি হয়েছে অন্তত ১৫ বছর আগে। এ জমিতে এখনও কিছু ধানের আবাদ হয়। সব জমি আবাদ করলে ফি বছর অন্তত দেড় হাজার মণ ধান উৎপন্ন হত। কিন্তু এ জমি পড়ে আছে অনাবাদি। অথচ মূল মালিক কৃষকের হাতছাড়া হয়ে গেছে কৃষি জমি। বালুতে ঢেকে গেছে সবুজের এ বিস্তীর্ণ এলাকা।
×