ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

লাকী আখন্দকে নিবেদিত নাট্যোৎসব শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৫ এপ্রিল ২০১৭

লাকী আখন্দকে নিবেদিত নাট্যোৎসব শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিল্পের আলিঙ্গনে মানবতার আহ্বানে দর্শকনন্দিত দশটি নাটক নিয়ে শুরু হলো উৎসব। পাঁচ দিনের উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে সদ্য প্রয়াত কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা লাকী আখন্দকে। শিল্প, সংস্কৃতি ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে মানবতার জয়গান গেয়ে নাট্যপ্রেমীদের জন্য দারুণ এ নাট্যোৎসবের আয়োজক বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি কর্মচারী ইউনিয়ন। সংগঠনটির ৩৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে সোমবার থেকে ‘শিল্প-সংস্কৃতি-সৃজনশীলতা, জয় জয় জয় মানবতা’ শীর্ষক এ নাট্যোৎসবের সূচনা হয়। উৎসবের সহযোগিতায় রয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও শিল্পকলা একাডেমি। একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তন ও পরীক্ষণ থিয়েটার হলে আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় থাকবে নাটকের প্রদর্শনী। সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে জাতীয় সঙ্গীতের সুরে শুরু হয় উৎসব আনুষ্ঠানিকতা। এর পর মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বালন করে নাট্যোৎসব উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আইটিআইয়ের সাম্মানিক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান ও একাডেমির সচিব জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী। কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি এস এম সালাউদ্দিনের সভাপতিতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাইদুর রহমান এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সহসভাপতি মোহাম্মদ সুমন মিয়া। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, যারা শিল্পকলা একাডেমির জন্য প্রতিনিয়ত শ্রম দিচ্ছেন তারা একটি নাট্যোৎসবের আয়োজন করছে, এটা খুবই আনন্দের বিষয়। নানা কাজের মাধ্যমে শিল্পকলা একাডেমিকে নিরন্তর এগিয়ে নিয়ে চলা মানুষগুলোর এ ধরনের আয়োজন আমাদের অনুপ্রাণিত করে। আমার আরও ভাল লাগত, যদি কর্মচারী ইউনিয়নের সদস্যরা নিজেরা কোন দল তৈরি করে নাট্য প্রযোজনা নিয়ে মঞ্চে আসতেন। আশা করি, ভবিষ্যতে এমনটি হবে। রামেন্দু মজুমদার বলেন, এই মঞ্চে আজ পরিবেশিত হবে থিয়েটারের নাটক মেরাজ ফকিরের মা। ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে ১৯৯৪ সালে আমরা নাটকটি মঞ্চে এনেছিলাম। আমরা চাই নাটকটি যেন আমাদের আর মঞ্চায়ন করতে না হয়। ধর্মান্ধতা ও জঙ্গীবাদমুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চাই। উদ্বোধন শেষে নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় থিয়েটারের ‘মেরাজ ফকিরের মা’। নাটকটি রচনা ও নিদের্শনা দিয়েছেন আবদুল্লাহ আল-মামুন। নাটকটির কাহিনীতে উঠে এসেছে আজকের বাংলাদেশের ঘটমান কিছু বাস্তবতা। ধর্মকে ব্যবসায়িক পুঁজি করে, ধর্মের অপব্যাখ্যা করে একশ্রেণীর স্বার্থলোভী-অসৎ মানুষ সমাজের প্রগতিকে ঠেকিয়ে রাখার যে অপচেষ্টা চালাচ্ছে দেশজুড়ে সেটিও উঠে এসেছে নাটকটিতে। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফেরদৌসী মজুমদার, সমর দেব, তামান্না ইসলাম, মজিবর রহমান জুয়েল, তানজুম আরা পল্লী ও মারুফ কবীর। পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয় বাংলাদেশে প্রথম হিজড়া সমাজের মানুষদের সুখ-দুঃখ কথামালায় গাঁথা গবেষণা নাট্য মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের ‘শিখ-ী কথা’। নাটকটি রচনা করেছেন আনন জামান ও নির্দেশনা দিয়েছেন ড. রশীদ হারুন। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হবে ‘গহর বাদশা ও বানেছাপরী’ এবং পরীক্ষণ থিয়েটার হলে নাট্যকেন্দ্র মঞ্চস্থ করবে আলফ্রেড ফারাগের ‘দ্য ট্র্যাপ’ অবলম্বনে নাটক ‘বন্দুক যুদ্ধ’ ও তৌফিক আল হাকিমের ‘দ্য ডাঙ্কি মার্কেট’ অবলম্বনে ‘গাধার হাট’। দুটি নাটকেরই রূপান্তর, নির্দেশনা ও পরিকল্পনা করেছেন তারিক আনাম খান। কবি মাশরেকীর জন্মজয়ন্তী ॥ কবি আবদুল হাই মাশরেকীর ৯৮তম জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, আবদুল হাই মাশরেকী বাংলা সাহিত্যে লোকজীবনের অভীপ্সার রূপকার। তার সঙ্গীত ও কাব্য মানুষের ভেতর যেমন নাড়া দিয়েছে তেমনি রয়েছে দেশমাতৃকার জন্য মমত্ববোধ লালন-পালনের শিক্ষার বাণী। লোককবি আবদুল হাই মাশরেকী গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা অডিটরিয়ামে শনি ও রবিবার দু’দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন। প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তিনি তার বক্তব্যে কবি আবদুল হাই মাশরেকী রচিত কালজয়ী গানের কথা উল্লেখ করে বলেন, মাটি ও মানুষের এই কবির অবদানের কথা নতুন প্রজন্মের কাছে বেশি করে তুলে ধরতে হবে। জন্মজয়ন্তী উদযাপন পর্ষদের আহ্বায়ক ড. এস এম আফসারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কবি অসীম সাহা, অভিনেতা শংকর সাঁওজাল, বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক কবি ড. আমিনুর রহমান সুলতান, আবৃত্তি শিল্পী ভাস্কর বন্দোপাধ্যায়, লোকসঙ্গীত গবেষক রফিকুল হক ঝন্টু, গীতিকবি ফেরদৌস হাসান ভূইয়া, কবিপুত্র ও লোককবি আবদুল হাই মাশরেকী গবেষণা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক নঈম মাশরেকী, কবিপুত্র ও সাংবাদিক শামীম মাশরেকী। রবিবার সন্ধ্যায় সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান। অনুষ্ঠানে কবি আবদুল হাই মাশরেকী রচিত ‘বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার জারি’র কোরিওগ্রাফি পরিবেশন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘কাদামাটি’। এছাড়াও অনুষ্ঠানে কবির রচিত কালজয়ী বিভিন্ন গান, কবিতা আবৃত্তি ও নাটক পরিবেশন করা হয়।
×