ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নজরদারি বাড়াতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২৫ এপ্রিল ২০১৭

নজরদারি বাড়াতে হবে

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের একটি বাড়িতে দুদিনব্যাপী পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমাণে বিস্ফোরক, রাসায়নিক দ্রব্য ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযুক্ত জঙ্গী দম্পতিকে এই অভিযানে আটক করা সম্ভব না হলেও পুলিশ বলছে, খুব শীঘ্রই তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। এরা নব্য জেএমবির সদস্য বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। দেশে জঙ্গী সন্ত্রাসী কার্যক্রমের দুর্ধর্ষ নেতা জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা মুফতি হান্নানের ফাঁসির পর সঙ্গত কারণেই আশা করা গিয়েছিল যে, জঙ্গী হামলা ও সন্ত্রাসী তৎপরতা একেবারে নির্মূল না হোক, অন্তত কমে আসবে। তবে সিলেটে আতিয়া মহল, হবিগঞ্জ ও কুমিল্লায় পুলিশী তৎপরতায় আত্মঘাতী জঙ্গীসহ সর্বশেষ টঙ্গী ও ঝিনাইদহের ঘটনায় সেই আশঙ্কা আবারও ঘনীভূত হচ্ছে বলেই প্রতীয়মান হয়। র‌্যাব-পুলিশ-গোয়েন্দাবাহিনীসহ কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের নিয়মিত নজরদারির পরও দেখা যাচ্ছে যে, দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গীরা আবারও তৎপর হয়ে উঠেছে। টঙ্গীতে কুখ্যাত জঙ্গী নেতা বহু অপরাধে অপরাধী ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামি মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নিতে প্রিজন ভ্যানে পর্যন্ত হামলা চালানো হয়। এখানেও চাপাতি ও হাতবোমাসহ দু’জন জঙ্গীকে গ্রেফতারের খবর আছে। এরও আগে ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর গোদাগাড়িতে পুলিশ কনস্টেবলদের ছুরিকাঘাতে আহত করে জঙ্গীরা। এ থেকে বোঝা যায় যে, জঙ্গীরা যেন হঠাৎ করেই আবারও আগ্রাসী ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এবার তাদের টার্গেট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তার মানে দেশ থেকে জঙ্গীবাদ ও তৎপরতা একেবারে নির্মূল হয়নি। বর্তমান সরকার ধর্মীয় উগ্রপন্থাসহ সব রকম জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে উগ্রধর্মীয় মতবাদের কোন স্থান নেই। প্রকৃতপক্ষে জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের হাত ধরে দেশে ধর্মীয় রাজনীতি ও জঙ্গীবাদের উদ্ভব ঘটে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে কুখ্যাত জামায়াত-শিবির হানাদার পাকিস্তান সেনাবহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মাধ্যমে প্রসার ঘটায় সন্ত্রাসী কার্যক্রমের। একাত্তরে পরাজিত হলেও পঁচাত্তরÑ পরবর্তী সামরিক শাসনপুষ্ট সরকারগুলোর সহায়তায় দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী কার্যক্রমের বিকাশ ঘটতে থাকে। তবে আশার কথা এই যে, এ দেশের মাটিতে তা কখনোই শিকড় গেড়ে বসতে পারেনি এবং জনসমর্থন পায়নি। ফলে দেশী-বিদেশী গডফাদারসহ আন্তর্জাতিক সহায়তায় সময়ে সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ব্যর্থ হয়েছে চূড়ান্তভাবে। গুলশান, শোলাকিয়া ও অন্যান্য স্থানে ছোটবড় কয়েকটি হামলার পর এদেশীয় জঙ্গীদের সঙ্গে কুখ্যাত আইএস, আল কায়েদা, আলশামস, জইশ-ই-মোহাম্মদ, তালেবান ইত্যাদির সঙ্গে যোগাযোগ ও মদদের কথা দেশে-বিদেশে উচ্চারিত হলেও সেসব কখনোই প্রমাণিত হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে। তবু এতে আত্মপ্রসাদের কিছু নেই। দেশীয় জঙ্গীদের অস্ত্র ও অর্থের উৎসসহ উৎসাহদাতা, মদদদাতাসহ আন্তর্জাতিক যোগাযোগের বিষয়টি সর্বদাই নজরদারির দাবি রাখে। অর্থাৎ এটি একটি নিরন্তর ও অব্যাহত প্রক্রিয়া। জঙ্গী সন্ত্রাসীরা শুধু অস্ত্র ও বোমাই নয়, বরং প্রযুক্তি ব্যবহারেও অত্যন্ত দক্ষ। সে ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে টেক্কা দিতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সর্বদাই সতর্ক ও তৎপর হতে হবে। সর্বোপরি সর্বস্তরে সর্বপর্যায়ে তৈরি করতে হবে জনসচেতনতা। টঙ্গী ও কুমিল্লায় জনপ্রতিরোধের বিষয়টি লক্ষণীয়। দেশ যদি আধুনিক শিক্ষা ও স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে শনৈঃশনৈঃ অগ্রসর হতে পারে, তাহলে এমনিতেই জঙ্গীবাদ নির্মূল হতে বাধ্য।
×