ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

৮ বছরেই মুক্তিযোদ্ধা ॥ এলাকায় ক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৯ এপ্রিল ২০১৭

৮ বছরেই মুক্তিযোদ্ধা ॥ এলাকায় ক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ ॥ যুদ্ধকালীন সময়ে কামরুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি আট বছর বয়সে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হতে যাচ্ছেন! তাড়াশ উপজেলার ভায়াট গ্রামের ১৯৬৩ সালে জন্মগ্রহণকারী কামরুজ্জামান মহুরী মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকায় প্রাথমিকভাবে তার নাম অন্তর্ভুক্তি করিয়েছেন। তার নাম তালিকাভুক্ত হওয়ায় সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সঠিক তালিকা প্রকাশের উদ্যোগের ওই ঘোষণার পর ভায়াট গ্রামের মেনহাজ উদ্দিনের পুত্র কামরুজ্জামান মিয়া যাচাই-বাছাই কমিটিকে ম্যানেজ করে প্রাথমিকভাবে তার নাম তালিকাভুক্ত করিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কামরুজ্জামান মিয়া কখনও মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেন না। ১৯৭১ সালে কামরুজ্জামান ছিলেন শিশু। তার বয়স ছিল ৭-৮ বছর। যাচাই-বাছাই কমিটির মন্তব্যে কামরুজ্জামানের পাশে লেখা হয়েছে তিনি মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন। অথচ, তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ বা কোন সহযোগিতা করেছেন এমন কথা কোনদিন শুনতেও পাইনি। তিনি উল্টো প্রশ্ন রেখে বলেন ৭-৮ বছর বয়সের একজন শিশু মুক্তিযুদ্ধে কি সহযোগিতা করতে পারে? তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায়, জাতীয় পরিচয়পত্রে কামরুজ্জামান মিয়া, পিতা- মৃত আলহাজ মেনহাজ উদ্দিন, মাতা- মৃত. মহিরন নেছা, পেশা- ব্যবসা, জন্ম তারিখ-০৩-০১-১৯৬৩ইং, ক্রমিক নং- ১৬১, জাতীয় পরিচয়পত্র নং- ১৯৬৩৮৮১৮৯৮৪০৫৫৩৪০, ফরম নং-১০৫৫৩৪০, শিক্ষাগত যোগ্যতা- উচ্চ মাধ্যমিক পাস, ভোটার এরিয়া ও কোড- তাড়াশ উত্তর পাড়া, ০৯৬৬, ভোটার নং-৮৮০৯৬৬০৫৫৩৪০, গ্রাম- তাড়াশ, ডাক ও উপজেলা- তাড়াশ, জেলা- সিরাজগঞ্জ। সে হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল সাড়ে ৮ বছর। জামুকা প্রেরিত তালিকায় ক্রমিক নং-১২, তিনি বিএলএফ মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তির আবেদন করেছেন। কিন্তু তিনি তার বয়স বাড়ানোর জন্য ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে জন্মতারিখ-১৩-২-১৯৫২ইং উল্লেখ করে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই তালিকায় আবেদন করেছেন। যাতে তার গ্রাম- ভায়াট, তাড়াশ- সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে নওগাঁ ইউনিয়নের মাটিয়া মালিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কামরুজ্জামান ১৯৭৭ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হয়ে আর পড়াশোনা করেননি। এছাড়া ভোটার তালিকায় তার বড় ভাই আব্দুল ওয়াহাবের জন্মতারিখ ৩০-১১-১৯৫২ইং, ভোটার নং-৮৮০৯৬৩০৫১৩৮২ ও আব্দুর রাজ্জাকের জন্ম তারিখ ০১-০১-১৯৬২, ভোটার নং ৯৬৩০৫২৪৬৪ উল্লেখ রয়েছে। এ ব্যাপারে কামরুজ্জামান মিয়ার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুলবশত জন্মতারিখ ১৩-২-১৯৫২ এর স্থলে ৩-১-১৯৬৩ উল্লেখ করা হয়। যা পরবর্তীতে আবেদন করে সংশোধন করা হয়েছে। এখানে কোন জাল জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়নি। উপজেলা নির্বাচন অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাতীয় পরিচয়পত্রে কামরুজ্জামান মিয়ার জন্মতারিখ ৩-১-১৯৬৩ উল্লেখ আছে। জন্ম তারিখ সংশোধন করা হয়নি।
×