ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

দীর্ঘ ১৬ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৪ এপ্রিল ২০১৭

দীর্ঘ ১৬ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার

আরাফাত মুন্না ॥ দীর্ঘ ১৬ বছরেও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি পহেলা বৈশাখে রমনা বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার। তিন বছর আগে বিচারিক আদালতে রায় হলেও উচ্চ আদালতে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে এ হত্যা মামলা। অন্যদিকে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলাটি নিম্ন আদালতে নিষ্পত্তি হবে কবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কেউ। সুপ্রীমকোর্টের সূত্র অনুযায়ী, রমনা বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় বিচারিক আদালতের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে মৃত্যুদ- ও যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামিদের আপীল ও ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি শহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানির শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ১৪ মে এই বেঞ্চেই সমাপনী বক্তব্য উপস্থাপন করবেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এদিকে বুধবার রাতে অন্য একটি মামলায় এ মামলার প্রধান আসামি হরকাতুল জিহাদের (হুজি) প্রধান মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। বিচারিক আদালতে এ মামলাও মুফতি হান্নানের মৃত্যুদ- হয়েছিল। এ বিষয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, হাইকোর্টে রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলায় যেভাবে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে মনে হয়েছে এখানে মুফতি হান্নানের ফাঁসিই বহাল থাকত। তবে যেহেতু অন্য একটি মামলায় তার মৃত্যুদ- কার্যকর হয়ে গেছে তাই ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী এ মামলা থেকে প্রধান আসামি অব্যাহতি পাবে। বাকিদের বিচার চলবে। তিনি আরও বলেন, হাইকোর্টে মামলাটি শুনানি শেষ পর্যায়ে। ইতিমধ্যে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। আগামী ১৪ মে এ্যাটর্নি জেনারেল এই মামলায় সমাপনী বক্তব্য উপস্থাপনের মাধ্যমে মামলার শুনানি শেষ হবে। এর পর শুধু রায়ের অপেক্ষা। অন্যদিকে ১৬ বছরেও সাক্ষ্য গ্রহণই শেষ হয়নি রমনা বটমূলে বোমা হামলা ঘটনায় বিস্ফোরক মামলার। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানান, দফায় দফায় সমন পাঠানোর পরও মামলার সাক্ষী হাজির করতে পারছে না পুলিশ। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলা কার্যক্রম ঢাকার দ্রুত বিচার আদালতে চলছে। এ মামলায় ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ২৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ বিষয়ে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আবদুল্লাহ ভূইয়া বলেন, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলাটিতে ২৪ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। তবে কবে নাগাদ মামলার কার্যক্রম শেষ হবে, তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। সাক্ষী হাজির না হওয়ায় মামলার কার্যক্রম এগোচ্ছে না। ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আটজনকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। মৃত্যুদ-প্রাপ্তরা হলো- মুফতি আবদুল হান্নান, মাওলানা আকবর হোসেন, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মাওলানা আবদুল হাই ও মাওলানা শফিকুর রহমান। এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত ছয় আসামি হলেন- শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল, মাওলানা সাব্বির, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা ইয়াহিয়া ও মাওলানা আবু তাহের। মৃত্যুদ-াদেশপ্রাপ্ত আটজনের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশপ্রাপ্তদেরও একই অর্থদ- দেয়া হয়েছে। অনাদায়ে তাদের অতিরিক্ত এক বছর সাজা ভোগ করতে হবে এই কুখ্যাত আসামিদের। এ মামলায় ১৪ আসামির মধ্যে পাঁচজন শুরু থেকে পলাতক রয়েছে। বাকি আসামিরা বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছে। কারাগারে থাকা আসামিরা হলো আরিফ হাসান সুমন, শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া ও মাওলানা আকবর হোসাইন। পলাতক আসামিরা হলেন- মাওলানা তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আবদুল হাই। মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান ‘ইসলামবিরোধী’ বিবেচনা করে ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বর্ষবরণে বোমা হামলা চালানো হয়। হামলায় ঘটনাস্থলেই নয়জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে মারা যান একজন। এ ঘটনায় নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র ওই দিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন। ঘটনার প্রায় আট বছর পর ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আলোচিত এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা বারবার পরিবর্তন, সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল, বারবার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও তদন্ত কর্মকর্তাদের আদালতে সাক্ষ্য দিতে না আসার কারণে বিচার শুরু হতে দেরি হয়। পর্যায়ক্রমে থানা, ডিবি ও সিআইডি পুলিশে মামলার তদন্ত যায়। মামলার অষ্টম তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা মোঃ ইউসুফ ২০০৮ সালের ৩০ নবেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দুটি মামলারই অভিযোগপত্র একসঙ্গে দাখিল করা হয়। পরে বিচারের জন্য মামলা দুটি ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে যায়। ওই আদালতে একই বছরের ১৬ এপ্রিল পৃথক মামলা দুটিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের সিদ্ধান্তে হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ পাঠানো হয়।
×