ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাহিয়ান দ্বীপ

সময় এখন জোহানার

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১২ এপ্রিল ২০১৭

সময় এখন জোহানার

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। প্রায় চার দশক পর গ্রেট ব্রিটেনকে ডব্লিউটিএ খেতাব উপহার দিলেন জোহানা কন্টা। মিয়ামি ওপেনের ফাইনালে ডেনমার্কের ক্যারোলিন ওজনিয়াকিকে সরাসরি সেটে হারিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম বড় খেতাব জিতলেন ২৫ বছরের এই টেনিস তারকা। ১৯৭৭ সালে ভার্জিনিয় ওয়েড উইম্বলডন জিতেছিলেন। তারপর এই প্রথম কোন ব্রিটিশ টেনিস মহিলা তারকা এত বড়মাপের কোন টুর্নামেন্ট জিতলেন। মিয়ামিতে ফাইনাল জয়ের পর জোহানা কন্টার লক্ষ্য এবার গ্র্যান্ডসøাম জিতে ব্রিটেনের ৪০ বছরের খরা কাটানো। চতুর্থ ফাইনাল থেকে জোহানা কন্টার এটা তৃতীয় ডব্লিউটিএ ট্যুর সাফল্য। এতে দারুণ ব্রিটিশ তারকা। ওজনিয়াকির বিপক্ষে জয়ের পরই গ্যালারির উপস্থিত জনতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। কন্টা বলেন, ‘সকলকেই ধন্যবাদ। পুরো সপ্তাহজুড়েই অবিশ্বাস্যভাবে সমর্থন দিয়ে গেছেন আপনারা।’ তবে ক্যারোলিন ওজনিয়াকির মতো শীর্ষ সারির খেলোয়াড়ের বিপক্ষে লড়াই করে জেতাটা যে খুব সহজ ছিল না সেটাও স্বীকার করেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে সিডনি বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ খেলোয়াড় বলেন, ‘ক্যারোলিন ওজনিয়াকির মতো খেলোয়াড়ের বিপক্ষে লড়াই করাটা যে কোন টুর্নামেন্টেই কঠিন কাজ। কেননা সে এমন একজন খেলোয়াড় যে যতক্ষণ ইচ্ছে ততক্ষণই ম্যাচে থাকতে পারবে। তাই তার মতো খেলোয়াড়ের বিপক্ষে আমি ঠিক যেভাবে চেয়েছি সেভাবে খেলতে পেরে খুবই আনন্দিত। তার বিপক্ষে ম্যাচের সবগুলো সুযোগই কাজে লাগাতে পেরেছি।’ গত কয়েক বছর ধরেই আলোচনায় কন্টা। কিন্তু নিজেকে মেলে ধরতে পারছিলেন না। তবে চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই দুর্দান্ত পারফর্ম করছেন কন্টা। প্রথম গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেও ক্যারোলিন ওজনিয়াকিকে হারান তিনি। মিয়ামি ওপেনের সেমিফাইনালে পরাজয়ের স্বাদ উপহার দেন ভেনাস উইলিয়ামসকে। সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে সাতটি গ্র্যান্ডসøাম জেতা ভেনাস এখনও দুর্দান্ত। বছরের প্রথম মেজর টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালও খেলেছেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, ছোট বোন সেরেনা উইলিয়ামসের কাছে হেরে স্বপ্ন ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায় তার। সেই ভেনাসকেও হারান ব্রিটিশ তারকা। মিয়ামিতে আবার ওজনিয়াকিকে হারান তিনি। ড্যানিশ টেনিস তারকা ক্যারোলিনার বিপক্ষে এই শিরোপা জয়ের ফলে র‌্যাঙ্কিংয়েও অগ্রগতি হয়েছে কন্টার। ১১ থেকে সপ্তম স্থানে উঠে এসেছেন তিনি। যা তার ক্যারিয়ার সেরা। ২০১৫ সালের জুনেও বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের ১৪৬ নম্বরে ছিলেন এই ব্রিটিশ তারকা। মিয়ামি ওপেনের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর র‌্যাঙ্কিংয়ের পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসও বহুগুণে বেড়ে গেছে তার। কন্টার কণ্ঠে এখন পারফর্মেন্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার প্রত্যয়। শুধু তাই নয়, তার চোখে-মুখে এখন গ্র্যান্ডসøাম জয়েরও তীব্র আকাক্সক্ষা। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় এবং গ্র্যান্ডসøামের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আত্মবিশ্বাস সবসময়ই ছিল। এমন স্বপ্ন বিশ্বের প্রতিটি খেলোয়াড়ই দেখেন। এটা ছাড়া কখনই আসলে জয়গুলো এত মধুর হত না। এখন আমি চাই কঠোর পরিশ্রম করতে এবং নিজের সেরাটা বের করে আনতে।’ তবে স্বপ্ন পূরণের জন্য যে গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্টও জিততে হবে তাও স্বীকার করেছেন এই ব্রিটিশ তারকা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শীর্ষে উঠতে হলে গ্র্যান্ডসøামও জিততে হবে আমাকে। টেনিসের সেরা ও মর্যাদাকর টুর্নামেন্ট গ্র্যান্ডসøাম। চারটি বড় টুর্নামেন্ট জিতলেই শীর্ষে উঠার সম্ভাবনা তৈরি হবে।’ মিয়ামি ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ফলে ৯ লাখ ৪০ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড প্রাইজ মানি অর্জন করেছেন তিনি। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে টেনিস কোর্টের আলোচিত নাম ক্যারোলিন ওজনিয়াকি। কিন্তু তার দুর্ভাগ্য যে, এখনও মেজর কোন শিরোপার স্বাদ পাননি। তবে দমে যেতে নারাজ এই ড্যানিশ তারকা। চলতি মৌসুমে ইতোমধ্যেই তিনটি ফাইনাল খেলে ফেলেছেন। মিয়ামি ওপেন ছিল তার তৃতীয় ফাইনাল। এর আগে দুবাই চ্যাম্পিয়নশিপ এবং কাতার ওপেনেও ফাইনাল খেলেছেন বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক এই শীর্ষ তারকা। কিন্তু ক্যারোলিনা পিসকোভার কাছে হেরে কাতার ওপেনের শিরোপা হাতছাড়া হয় তার। মিয়ামি ওপেনে এবার সেই চেক তারকা পিসকোভাকে হারিয়েই ফাইনালের টিকেট কেটেছিলেন। কিন্তু জোহানা কন্টার কাছে হেরে স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে মিয়ামি ওপেনেও। তবে মিয়ামির পর চার্লসটনে বেশ ভালভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন ডেনমার্কের এই টেনিস তারকা। কিন্তু থমকে যেতে হলো ক্যারোলিন ওজনিয়াকিকে। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিলেন বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক এই নাম্বার ওয়ান। নতুন করে নিজেকে ফিরে পাওয়ার লড়াইটা শুরু করেছিলেন তিনি। সুযোগ ছিল ডব্লিউটিএ র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দশে জায়গা করে নেয়ারও। সেমিতে উঠলেই হয়ে যেত তা। কিন্তু তাকে আশাহত করেছেন লাটভিয়ার তরুণী জেলেনা অস্টাপেঙ্কো। ২০১১ সালের চার্লসটন চ্যাম্পিয়ন ওজনিয়াকিকে হারিয়ে দেন তিনি। সেই ম্যাচ জিতলেই দীর্ঘদিন পর আবার র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা দশে উঠে আসতেন তিনি। কিন্তু ১৯ বছর বয়সী লাটভিয়ার তরুণীর কাছে পাত্তাই পেলেন না ডেনিশ সুন্দরী। অস্টাপেঙ্কোও অবশ্য শেষ পর্যন্ত ফাইনালে হেরে গেছেন রাশিয়ার দারিয়া কাসাতকিনার কাছে। বর্তমানে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের ১৪তম স্থানে অবস্থান ওজনিয়াকির। শীর্ষে যথারীতি এ্যাঞ্জেলিক কারবার। সোমবার মনটেরি ওপেনে রাশিয়ার এ্যানেস্তাসিয়া পাভলিউচেঙ্কোভার কাছে হারলেও শীর্ষস্থান ধরে রেখেছেন জার্মান টেনিসের এই প্রতিভাবান তারকা। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন সেরেনা উইলিয়ামস। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতেই ক্যারিয়ারের ১৮তম মেজর টুর্নামেন্ট জয়ের স্বাদ পেয়েছেন তিনি।
×