ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

অন্যরকম ঢাকা

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৭ এপ্রিল ২০১৭

অন্যরকম ঢাকা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এ এক অন্যরকম রাজধানী। সপ্তাহের শেষদিন বৃহস্পতিবার। অন্য সময় এদিনে সকাল থেকে রাজধানীতে যানজটের মহাভোগান্তি শুরু হয়। এনিয়ে অনেকের কষ্টেরও যেন শেষ নেই। সপ্তাহের শেষদিনের দুর্ভোগের কথা ভেবেই গায়ে জ্বর আসার মতো অবস্থা। অবিশ্বাস্য হলে সত্য যে তীব্র জ্যামের নগরী ঢাকার বেশকিছু রাস্তা অস্বাভাবিক রকমের ফাঁকা ছিল। সকাল ১০টার আগে বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও এরপরই আটকে দেয়া হয় গণপরিবহন। এমনিতেই নগরীর ২৫টি পয়েন্টে গণপরিবহন চলাচলে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে আগে ভাগেই সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছিল বুধবার। যার প্রভাব দেখা গেছে সকাল থেকেই। নগরজুড়ে প্রাইভেটকারের সংখ্যা ছিল একেবারেই হাতেগোনা। গণপরিবহন নেই বললেই চলে। অর্থাত কার্যত অনেকটাই ফাঁকা ছিল গোটা রাজধানী শহর। তবে কিছু কিছু সড়কে যানজটের খবর পাওয়া গেছে। পরিবহন সঙ্কটের কারণে অনেকেই পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়েছেন দীর্ঘ পথ। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ওলামা মাশায়েখ মহাসম্মেলন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর ২৫টি পয়েন্টে যান চলাচল বন্ধ থাকবে বলে বুধবার জানিয়ে দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অনুষ্ঠানে আগতদের চলাচল নির্বিঘœ করতে বিজয় সরণি, খামারবাড়ি, বাংলামোটর, মগবাজার, পরীবাগ, সাকুরা গলি, পুলিশ ভবন, সবজি বাগান, মিন্টো রোড পূর্ব প্রান্ত, অফিসার্স ক্লাব, কাকরাইল চার্চ, শিল্পকলা গলি, দুদক গলি, কার্পেট গলি, মৎস্য ভবন, কদম ফোয়ারা, হাইকোর্ট, শহীদুল্লাহ হল, বকশীবাজার, পলাশী, নীলক্ষেত, রুমান চত্বর, কাঁটাবন, শাহবাগ এবং আজিজ সুপার মার্কেট ক্রসিং বন্ধ থাকবে। এ রুটের পরিবর্তে বিকল্প সড়কে যানবাহন চলাচলের পরামর্শ দেয়া হয় মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে। শাহবাগ থেকে আশপাশের প্রায় সবকটি সড়ক বন্ধ থাকায় সকাল থেকে গাড়ির চাপও ছিল তুলনামূলক কম। কমলাপুর, মতিঝিল, পল্টন, গুলিস্তান এলাকায় যানবাহন একেবারেই কম দেখা গেছে। যাত্রাবাড়ী থেকে বিশ্বরোড হয়ে রামপুরা সড়কেও যানবাহনের চাপ ছিল না। গণপরিবহন বলতে বাস চলেছে সীমিতসংখ্যক। তবে সকাল থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পরিবহন সঙ্কটের মুখে পড়তে হয়। রিক্সা ও ভ্যানে বাড়তি ভাড়া করে কেন্দ্রে কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের যেতে দেখা গেছে। ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, যানজটের ভয়ে অন্য দিনের তুলনায় বাস চলাচল সীমিত ছিল। কারণ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো বন্ধ থাকায় বাস চলাচল করতে যানজটে বসে থাকতে হয়। তাছাড়া এমনিতেই বৃহস্পতিবার যানজট বেশি থাকে। তিনি জানান, বাস কম চলাচলের বিষয়টি সম্মিলিত কোন সিদ্ধান্ত নয়। মালিক-শ্রমিকরা নিজেদের মতো করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ রাস্তায় গাড়ি নামাতেও দেখা গেছে। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, মিরপুর পল্লী থেকে বা সায়দাবাদ থেকে গাড়ি ছাড়া হয়নি। ফলে স্বাভাবিক কর্মদিবসে অন্যান্য দিন যখন রাস্তা থাকে গাড়িতে ঠাসা, সেখানে ঢাকার রাস্তা ফাঁকা। ফার্মগেট এলাকায় মানুষজনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসের অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। আনিস রহমান নামে এক ব্যক্তি জানান, তিনি মতিঝিল যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছেন। ঘণ্টাখানেক চেষ্টার পরও গাড়ির কোন দেখা নেই। বেলা ২টার দিকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আনন্দ রায় জানান, যান চলাচল ‘স্বাভাবিক’ থাকায় তার এলাকায় কখনও ডাইভারশনের দরকার হয়নি। দুপুরে ফার্মগেট থেকে শাহবাগের পথে থাকা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আরিফ জানান, ফার্মগেট থেকে শাহবাগের পথে বাসের সংখ্যা ছিল একবারেই কম। তবে ফার্মগেট থেকে উত্তর ও পশ্চিমে যাওয়ার রাস্তায় যানজট ছিল। মোহাম্মদপুর থেকে মহাখালী আসার পথে আসাদ গেট পর্যন্ত তীব্র যানজটের পর কিছুটা ফাঁকা রাস্তা পেলেও বিজয় সরণিতে এসে আবার যানজটের দেখা মেলে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে পলাশী, চাঁনখারপুল, রূপসীবাংলা, কাঁটাবন ও বাংলামোটর এলাকায় যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। আবার ধানম-ি, সাইন্সল্যাব, নিউ মার্কেট, ঢাকা কলেজ, কাঁটাবনসহ আশপাশের এলাকায় দুপুরের পর থেকে বেশ যানজট ছিল।
×