ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

১৫ এপ্রিল থেকে রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস থাকছে না

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৫ এপ্রিল ২০১৭

১৫ এপ্রিল থেকে রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস থাকছে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে রাজধানীতে সিটিং, গেটলক বা স্পেশাল সার্ভিসের নামে কোন সার্ভিস চলতে পারবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। পাশাপাশি যাত্রীদের থেকে কোনভাবেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করা ও সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা গাড়িতে প্রদর্শন করার জন্যও পরিবহন মালিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি আয়োজিত এক বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়। বৈঠকে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মালিক ও শ্রমিক নেতাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক চলে। বৈঠকে যোগ দেয়া একাধিক পরিবহন মালিকসহ শ্রমিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭ এর খসড়া অনুমোদন হওয়ায় মালিক-শ্রমিকদের অনেকেই অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বৈঠকে। তারা বলেছেন, এ আইন সংসদে পাস হলে পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে। পথে বসতে হবে মালিক-শ্রমিকদের। অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে কেউ কেউ বলেছেন, আইনে মালিক ও শ্রমিকপক্ষের সুপারিশ উপেক্ষিত রয়ে গেছে। একতরফাভাবে মালিক ও শ্রমিকবিরোধী আইন করার চেষ্টা হয়েছে, যা কোনভাবেই মেনে নেয়া হবে না। এ আইন পাস হলে মালিক-শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে গোটা পরিবহন সেক্টর অচল হয়ে পড়বে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন, আইনে চালকদের শাস্তি, জরিমানাসহ নানা বিষয়ে অসঙ্গতি রয়েছে। এ আইন চূড়ান্ত করার আগে অসঙ্গতিগুলো দূর করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি দেয়া হবে। এছাড়া সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য পৃথক একটি কমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরপর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ১৫ এপ্রিলের পর থেকে সিটি সার্ভিস চলতে পারবে না বলে ঘোষণা দেন ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। তিনি জানান, ১৫ তারিখের পর থেকে মালিক ও শ্রমিকদের সমন্বয়ে একাধিক ভিজিলেন্স টিম গঠন করা হবে। এ টিম আমাদের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করবে। যদিও মালিকরা সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কোন পরিবহন কোম্পানি সিদ্ধান্ত না মানলে বিআরটিএর কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দেয়া হবে। মোবাইল কোর্টের অভিযান পারিচালনা করার কথাও জানান তিনি। পাশাপাশি সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকেও সহযোগিতা কামনা করেন এ নেতা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত অমান্যকারী পরিবহন কোম্পানির রুট পারমিট আমরা বাতিল করতে পারি। এতে পরিবহন সঙ্কট দেখা দেবে। বেশিরভাগ কোম্পানি সিদ্ধান্ত কার্যকর করলে অন্যরা এমনিতেই তা মানতে বাধ্য হবে বলেও জানান তিনি। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, রাজধানীতে যানবাহন সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল পরিচালনার জন্য এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করতে হবে। গাড়ির ছাদের উপরের ক্যারিয়ার, সাইড এ্যাঙ্গেল এবং অতিরিক্ত আসন ১৫ এপ্রিলের পর খুলে ফেলারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রংচটা, লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি দ্রুত মেরামত করে চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রতিটি বাসে মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আসন সংরক্ষিত রাখারও সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান তিনি। পরিবহন সেক্টরে দীর্ঘদিন ধরে চলা নানা নৈরাজ্য ও অনিয়মের কথা স্বীকার করে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমরা বারবার চেষ্টা করেছি এসব সমস্যা সমাধানের। এজন্য মালিকদের আনুষ্ঠানিক চিঠিও দেয়া হয়েছিল। মৌখিকভাবে বলা হয়েছে অনেকবার। এখন আমাদের সাংগঠনিকভাবে কঠোর হওয়া ছাড়া কোন পথ নেই। রাজধানীতে সাড়ে চার হাজার বাস-মিনিবাস চলার কথা উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রায় ১৩০টি কোম্পানি এসব বাস পরিচালনা করছে। এরমধ্যে প্রতিদিন ১০৭টি বাস ঢাকা মহানগর পুলিশকে তাদের কাজের জন্য দেয়া হচ্ছে। নিয়ম থাকলেও চালকের খোরাকি ছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে আর কোন অর্থ পরিবহন মালিকরা পান না। গত চার বছরে অনেক নতুন কোম্পানির বাস নামানোর কথাও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। সড়ক পরিবহন আইনে চালকদের শাস্তি কমানোর জন্য বিভিন্ন জেলায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা কোন কর্মসূচী পালন করছেন না দাবি করে এনায়েত উল্যাহ বলেন, প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনে বেশকিছু অসঙ্গতি রয়ে গেছে। তিনি বলেন, ১৯৮৩ সালের আইনের চেয়ে জরিমানা কোন কোন ক্ষেত্রে তিন হাজার গুণ বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে চালকের শাস্তি। এছাড়া গাড়ি চালালে দুর্ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণ বীমা প্রতিষ্ঠানের পরিশোধ করার কথা। কিন্তু আইনে ৯০ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ মালিকদের দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা পুরোপুরি সাংঘর্ষিক বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এনায়েত উল্যাহ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অনেক অনিয়ম পরিবহন সেক্টরে ছিল। বেশিরভাগ নিয়ম পালন করা হয়নি এ কথা সত্য। আমরা গোটা পরিবহন সেক্টরকে উন্নত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, সিটিং সার্ভিস ছাড়া গাড়ি চালালে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা লাভবান হবেন। পাশাপাশি রাস্তার মোড়ে মোড়ে যাত্রীদের বাসের জন্য আর অপেক্ষা করতে হবে না। তাছাড়া রুট পারমিটে সিটিং সার্ভিস বলতে কিছু নেই। আমরা আস্তে আস্তে গোটা পরিবহন সেক্টরের অনিয়ম দূর করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেনÑ সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হাসান ইমাম, কার্যকরী সভাপতি আজমল উদ্দিন আহমেদ সবুর, ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল বাতেন বাবু প্রমুখ।
×