ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

আইপিইউ সম্মেলনে ৪৪-১০ ভোটে পাস ॥ অন্য রাষ্ট্রে হস্তক্ষেপ নয়

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৫ এপ্রিল ২০১৭

আইপিইউ সম্মেলনে ৪৪-১০ ভোটে পাস ॥ অন্য রাষ্ট্রে হস্তক্ষেপ নয়

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ টানা তিন দিন আলোচনা-বিতর্কের পর কোন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বন্ধের প্রস্তাবটি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস হয়েছে। উন্নয়নশীল ৪৪ দেশের কাছে হেরে গেল উন্নত ১০ দেশ। পাঁচ দিনব্যাপী বিশ্বের সর্বোচ্চ সংসদীয় ফোরাম ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) আন্তর্জাতিক সম্মেলনের চতুর্থ দিন মঙ্গলবার শান্তি ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাবিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি ভোটে দিলে ৪৪ ঃ ১০ ভোটে তা পাস হয়। একটি দেশ বেলিজিয়াম ভোট প্রদানে বিরত থাকে। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ক হস্তক্ষেপ বন্ধে গৃহীত এ প্রস্তাবটি আজ বুধবার আন্তর্জাতিক সম্মেলনের নির্বাহী কমিটিতে অনুমোদনের পর তা ঢাকা ঘোষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। প্রস্তাবের পক্ষে বাংলাদেশ, ভারত, চীনসহ অবস্থান নেয়া দেশের নেতারা কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বন্ধের ব্যাপারে প্রথমবারের মতো দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, কোন দুর্বল সার্বভৌম দেশও তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সবল রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ চায় না। ভোটের পরিসংখ্যানই তার প্রমাণ। যদি খুবই প্রয়োজন হয় তবে কোন দেশে হস্তক্ষেপ করতে চাইলে অবশ্যই জাতিসংঘের অনুমোদন নিতে হবে। আর প্রস্তাবটি শুধু কাগজে-কলমে নয়, বাস্তব প্রয়োগে সব দেশকেই সোচ্চার হতে হবে। বিপক্ষে অবস্থান নেয়া জার্মানি, পোল্যান্ড, নরওয়ে, আইসল্যান্ডসহ ১০ দেশের নেতারা বলেন, এ ধরনের একটি প্রস্তাব গ্রহণ সত্যিই দুঃখজনক। এটা কার্যত গণতন্ত্রকেই ধ্বংস করার শামিল। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলায় শান্তি ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাবিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে সভাপতি প্রথমে প্রস্তাবটির ওপর কণ্ঠভোট দেন। কিন্তু কয়েকটি উন্নত দেশ সরাসরি ভোটের দাবি জানালে সভাপতি প্রস্তাবটি ভোটে দেন। ভোট গ্রহণের পর কমিটির সভাপতি ৪৪ ঃ ১০ ভোটে প্রস্তাবটি গৃহীত হলো বলে ঘোষণা প্রদানের পর পরই সমর্থনকারী দেশগুলোর তুমুল করতালিতে পুরো মিলনায়তন প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। অন্য দেশের দ্বারা আক্রান্ত কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিদের প্রস্তাবটি পাসের পর একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি ও হ্যান্ডশেক করতেও দেখা যায়। ভোটাভুটির পর অনুষ্ঠিত আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নেয়া বাংলাদেশের প্রতিনিধি ও জাসদের কার্যকরী সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, বাংলাদেশ পরিষ্কারভাবে বলতে চায় যে, অতীত ইতিহাসে আমাদের দেশটি এ ব্যাপারে অনেক ভুগেছে, কষ্ট পেয়েছে। আমরা কখনই অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নিজেদের নাক গলাই না, হস্তক্ষেপে বিশ্বাস করি না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এ বিষয়ে এক দেশ অন্য দেশকে দোষারোপ করছে। তিনি বলেন, ৫০০ বছর আগের ইতিহাস খুঁজলেই দেখা যাবে কোন দেশ অন্য দেশের ওপর হস্তক্ষেপ করেছে। তবে আমাদের অবশ্যই গণতন্ত্রকে শ্রদ্ধা জানাতে হবে। প্রস্তাবটি ৪৪ দেশ সমর্থন করেছে। মাত্র কয়েকটি দেশ পক্ষে ভোট না দিলেও তাদের উচিত ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতি সম্মান জানানো। ভারতের প্রতিনিধি প্রস্তাবটি সমর্থন করে বলেন, কোন রাষ্ট্রের অধিকার নেই যে অন্য কোন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে। এমন অবৈধ হস্তক্ষেপ কেউ মেনে নিতে চায় না, নেবেও না। যদি হস্তক্ষেপ করতেই হয় তবে জাতিসংঘের মতামত নিতে হবে। আর এ জন্যই তো জাতিসংঘ গঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, এই বাংলাদেশে সম্মেলনটি হচ্ছে। অথচ এই দেশটিরও লাখ লাখ মানুষের ওপর চরম নিপীড়ন, নির্যাতন হয়েছে, অসংখ্য মানুষ হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন। কিন্ত তখন তো অনেক বড় দেশই কোন কথা বলেননি। তাই, সব সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা রাখতে হবে। সব দেশেরই উচিত অন্য কোন রাষ্ট্রে হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ করা। প্রস্তাব সমর্থনকারী চীনের প্রতিনিধি বলেন, প্রস্তাবটির প্রত্যেকটি সংশোধনী ঐকমত্য বা ভোটের মাধ্যমে গৃহীত হয়েছে। আর এটি গণতন্ত্রেরই ফল। বেশিরভাগ দেশেরই অন্য রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের অভিজ্ঞতা রয়েছে। দীর্ঘদিন পর হলেও আজ যে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে তা বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বাস্তবিক। প্রস্তাবটি গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক দেশকেই কিছুটা কম্প্রোমাইজ (আপোস) করতে হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তর স্বার্থেই। আইপিইউকে ‘একটি পরিবার’ উল্লেখ করে রাশিয়ার প্রতিনিধি বলেন, পারস্পরিক সহযোগিতা ও শান্তির কারণেই প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে। এ ব্যাপারে নতুন কোন রাজনৈতিক বাধা সৃষ্টি আমাদের পরিবারের মধ্যে কাম্য নয়। আন্তর্জাতিক সুরক্ষায় ৪৮ রাষ্ট্রের সমর্থন কার্যত গোটা বিশ্বেরই বিজয়। প্রস্তাবটির বিরোধিতা করে জার্মানির প্রতিনিধি বলেন, আইনের শাসন ও মানবাধিকার রক্ষার ব্যাপারে আমরা সব সময়ই সোচ্চার। এ কারণেই প্রস্তাবটি পাসের পর বিপদ যেন একটু বেড়েই গেল। অনেক দেশের গণতন্ত্রও হুমকির মুখে পড়তে পারে। ভোট প্রদানে বিরত থাকার কারণ ব্যাখ্যা করে বেলজিয়ামের প্রতিনিধি বলেন, প্রস্তাবটি আমাদের কাছে খুবই অস্পষ্ট। যে খসড়াটি আনা হয়েছে তা আমাদের কাছে ঠিক মনে হয়নি। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিশ্বের সেই অবস্থা কি এখনও এসেছে? সবকিছু বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকায় আমরা ভোট প্রদানে বিরত থেকেছি। কিউবার প্রতিনিধি বলেন, মাত্র একটি বিষয়েই তিন তিনবার আমাদের ভোটে যেতে হয়েছে। আর এই মতপার্থক্য প্রথম নয়। প্রস্তাবটি এভাবেও মেনে নেয়া ঠিক হয়নি। কি নিয়ে ভোট হচ্ছে তাও অনেকে বুঝতে পারেনি। ফিনল্যান্ডের প্রতিনিধি বলেন, পূর্বের খসড়া এবং এখনকার খসড়ার বিষয়গুলো খুব স্পষ্ট নয়। কিছু কিছু জায়গায় সংশোধনীর প্রয়োজন রয়েছে। আর আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ প্রতিরোধের সিদ্ধান্তও সঠিক নয়। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বলেই কিছু সংশোধনীর প্রয়োজনের কথা বলেছি। ইউক্রেনের প্রতিনিধি বলেন, কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের হস্তক্ষেপ কখনই কাম্য হতে পারে না। মানবাধিকার রক্ষার নামে কোন দেশের হস্তক্ষেপ অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে। এ সময় অবৈধ হস্তক্ষেপের ব্যাপারে রাশিয়ার বিগত দিনের কথাও সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। আইপিইউ কর্তাব্যক্তিরা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপ বন্ধে এবারই প্রথম শান্তি ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটি প্রস্তাবটি গ্রহণ এবং ভোটের মাধ্যমে তা অনুমোদন দিয়েছে। কমিটি কোন সুপারিশ করলে নির্বাহী কমিটি সাধারণত তা অনুমোদন দেয়। আজ বুধবার সম্মেলনের সমাপনী দিনে নির্বাহী কমিটির বৈঠকে গ্রহণ করা হবে এবং ঢাকা ঘোষণায় তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। রাশিয়ার মেট্রোরেলে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা আইপিইউর ॥ রাশিয়ার মেট্রো স্টেশনে এবং যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সের সামনে সন্ত্রাসী হামলায় হতাহতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন- আইপিইউ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই সংসদীয় সংস্থাটি নিন্দা জানানোর পাশাপাশি যে কোন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দেশ দুটির সরকার ও জনগণের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। সম্মেলনের চতুর্থ দিনে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সাধারণ আলোচনায় এই নিন্দা প্রস্তাবটি উত্থাপনের পর এসব হামলায় নিহতদের স্মরণে সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। আইপিইউ সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এসব সন্ত্রাসী হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়ে বলেন, আইপিইউ এসব সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিপক্ষে। এদের বিপক্ষে আমাদের ‘জিরো টলারেন্স‘ অবস্থান অক্ষুন্ন রয়েছে। সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে আমরা সব সময় সোচ্চার আছি ও থাকব। তিনি এ সময় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনার পাশাপাশি আক্রান্ত দেশের মানুষের পাশে থাকার অঙ্গীকারও করেন তিনি। নিন্দা প্রস্তাবটি গ্রহণ করায় আইপিইউ সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রাশিয়ান প্রতিনিধি। দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের সহায়তা ॥ তীব্র খরায় ইয়েমেন, দক্ষিণ সুদান, সোমালিয়া ও উত্তর কেনিয়ার দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের সাহায্যে দ্রুত এগিয়ে আসার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ)। মঙ্গলবার আইপিইউ সম্মেলনে এ বিষয়ে একটি জরুরী প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। গত দুদিন বিষয়টির ওপর আলোচনা হয়। বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য ও কেনিয়ার প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে প্রস্তাবটি আইপিইউ অধিবেশনে উত্থাপন করা হয়। দুর্ভিক্ষ সম্পর্কিত প্রস্তাবে বলা হয় ইয়েমেন, দক্ষিণ সুদান, সোমালিয়া ও উত্তর কেনিয়ায় চলমান দুর্ভিক্ষের ফলে ওসব অঞ্চলে চরম মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হতে পারে। গত ১০ মার্চ জাতিসংঘও এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক করে দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই প্রস্তাবনা গ্রহণের মাধ্যমে আইপিইউ সদস্যরা নিজ নিজ সরকারকে জরুরী ত্রাণ সহায়তা দিতে উদ্বুদ্ধ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে দাবি করা হয়েছে। ওই বৈঠকে মেক্সিকোর দেয়া ‘বিশ্বজুড়ে কঠোর অভিবাসন নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি’ এবং আরব গ্রুপের পক্ষে ফিলিস্তিনের দেয়া ‘বসতি স্থাপন প্রক্রিয়াকে ইসরাইলের আইনী বৈধতা ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’ শীর্ষক দুটি প্রস্তাব ভোটে নাকচ হয়ে যায়। রাশিয়ায় হামলার ঘটনায় শোক প্রস্তাব ॥ রাশিয়ায় বোমা হামলা ও হতাহতের ঘটনায় আইপিইউ সম্মেলনের সাধারণ অধিবেশনে শোক প্রস্তাব প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে অধিবেশন শুরুর আগে আইপিইউ প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অধিবেশন শেষে সভার সভাপতি স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়ায় হামলার ঘটনায় শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। এ সময় আইপিইউ প্রেসিডেন্ট সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তাদের জোরালো অবস্থানের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় সদস্য দেশকে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। সংসদ ভবন পরিদর্শন ॥ আইপিইউ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিশে^র বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্টের প্রতিনিধিগণ জাতীয় সংসদ ভবন পরিবদর্শন করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে পরিদর্শনকালে প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ, হুইপ আতিউর রহমান আতিক, হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার, হুইপ ইকবালুর রহিম ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা বিদেশী প্রতিনিধিদের স্বাগত জানান। তারা বিদেশী প্রতিনিধিদের সঙ্গে থেকে সংসদ সচিবালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম ও ভবনের স্থাপত্যকর্ম বর্ণনা করেন। তারা বিদেশী অতিথিদের বিভিন্ন জিজ্ঞাসারও উত্তর দেন। বিদেশী সম্মানীয় অতিথিগণ স্বাগতিক দেশের পার্লামেন্ট ভবনের সংসদ কক্ষ, লাইব্রেরি, স্থায়ী কমিটিসমূহের বৈঠকের কক্ষসহ সংসদ ভবনের উত্তর ও দক্ষিণ প্লাজা ঘুরে দেখেন। অতিথিগণ সংসদ ভবনের অনন্য স্থাপত্যশৈলী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হন এবং উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। স্পীকারের সঙ্গে ৮ দেশের প্রতিনিধি দলের সাক্ষাত ॥ ১৩৬তম ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে আসা চীন, ভুটান, ইরাক, মেক্সিকো, জর্জিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধিরা মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের স্পীকার ও সিপিএ নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্থাপিত কার্যালয়ে সাক্ষাত করতে আসা আইন প্রণেতাদের স্বাগত জানিয়ে স্পীকার বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশ সরকার দারিদ্র্য বিমোচনে কৌশল নির্ধারণ করেছে এবং লক্ষ্য অর্জনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার একটি বাড়ি একটি খামার, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য জয়ীতা ফাউন্ডেশনের ন্যায় নানা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। আলোচনাকালে স্পীকার সাক্ষাত করতে আসা আটটি দেশের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান। তিনি জানান, আগামী নবেম্বরে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) সম্মেল আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সাক্ষাত করতে আসা আট দেশের আইন প্রণেতারা সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে ১৩৬তম আইপিইউ এ্যাসেম্বলি আয়োজন করতে পেরেছে। এজন্য তারা আয়োজক হিসেবে জাতীয় সংসদের স্পীকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ফেসবুকসহ সামাজিক গণমাধ্যম নিয়ে বিতর্ক ॥ বাংলাদেশে ফেসবুক বন্ধ করা না করা নিয়ে বিতর্কের মধ্যে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আইপিইউ সম্মেলনে এর প্রভাব নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আইন প্রণেতারা। বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অবদানকে ইতিবাচক বললেও কয়েকজন এমপি এর তীব্র বিরোধিতা করে বলেন, এসব মিডিয়ার ক্ষতিকর দিক অনেক বেশি। তাই এসব মাধ্যমে কী প্রচার হলো বা হলো না তা খুব বেশি পাত্তা দেয়ার কিছু নেই। মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের কার্নিভাল হলে ‘পার্লামেন্টারিয়ানস এ্যান্ড সোশ্যাল নেটওয়ার্কস, মেকিং ইফেক্টিভ ইউজ অব সোশ্যাল মিডিয়া’ শীর্ষক এজেন্ডার ওপর বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন দেশের প্রায় ২০ জন এমপি অংশ নেন। অনুষ্ঠানে স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভাল ও খারাপ দুটি দিকই রয়েছে। তবে এ মাধ্যমটি ব্যবহারে সবারই সতর্ক থাকা উচিত। তিনি বলেন, এ ফোরামে আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের খারাপ দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারি। খারাপ দিকগুলো কিভাবে ভালর দিকে নেয়া যেতে পারে সেসব নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার অনেক ক্ষতিকারক দিক রয়েছে। যেমন- সন্ত্রাসবাদ, ভোগান্তি, বিরক্ত করা, অপ্রয়োজনীয় তথ্য জানানো ইত্যাদি। যেসব বিষয় আমরা দেখতে চাই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুধু সেসব বিষয়ই থাকুক। যেমন- শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য বিষয়। তিনি বলেন, আমরা যারা রাজনীতিবিদ বা এমপি তারা এসব মাধ্যমে যখন কথা বলি তখন স্পষ্ট করে বলা উচিত। আমাদের অস্পষ্ট কোন বক্তব্য বা কথা বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। এরপরই বিতর্কে অংশ নিয়ে সৌদি আরবের নারী এমপি বলেন, এখানে যুগোপযোগী একটি বিষয়ের ওপর সুন্দর আলোচনা হচ্ছে। আমরা ভবিষ্যত প্রজন্ম ও তাদের ভবিষ্যত নিয়ে কথা বলছি। কাজ করার প্রক্রিয়া খুঁজছি। গালফ এরিয়ায় সৌদি আরব সবচেয়ে বড় দেশ, যেখানে সবচেয়ে বেশি মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করছেন। এখন আমাদের সময় এসেছে পুরাতনকে ফেলে নতুনকে নিয়ে এগিয়ে চলা। আধুনিকভাবে এগিয়ে যাওয়া। সৌদি আরবের আরেক এমপি বিতর্কে অংশ নিয়ে বলেন, সামাজিক যোগাযোগম্যাধমের সঙ্গে আমরা যুক্ত থাকলে বিশ্বের অনেক কিছুর অগ্রগতির সংবাদ পাওয়া যায়। নিজেরা আধুনিকভাবে এগোচ্ছি কি-না তা নিশ্চিত হতে পারি। গায়ানার এমপি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে আমরা অন্যান্য স্বাভাবিক মাধ্যমের মতো মনে করি। কিন্তু এটা অনেক শক্তিশালী। যুবসমাজ সবচেয়ে বেশি এ মাধ্যম ব্যবহার করেন। তাদের এ অংশগ্রহণ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তারপরও এ মাধ্যম নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ফেসবুকে নকল প্রোফাইল, নকল এ্যাকাউন্ট খোলা সবচেয়ে খারাপ দিক। এতে একজন মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। নামিবিয়ার এমপি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া কী কারণে ব্যবহার করব এ প্রশ্ন আমার। নামিবিয়ায় সম্প্রতি এটা খুব বেশি ব্যবহার হচ্ছে। সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করা না হলে ভায়োলেন্সের মতো ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারেন যে কেউ। সোশ্যাল মিডিয়ার বিরোধিতা করে বাহরাইনের এমপি বলেন, এ মাধ্যমের অনেক খারাপ দিক রয়েছে। এগুলো আমাদের জীবনে খারাপ ভূমিকা রাখতে পারে। নির্বাচন কাছে এলে অনেকে রাজনীতিবিদদের ব্যক্তিগত জীবনের গোপন কিছু ছড়িয়ে দিতে পারে। এর বাইরেও অনেক বাজেভাবে এর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে খুব বেশি পাত্তা দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। এ বিতর্ক সম্পর্কে আইপিইউ সম্মেলনে বাংলাদেশের ১৭ সদস্যের প্রতিনিধি দলের প্রধান ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার ইতিবাচক ভূমিকার চেয়ে নেতিবাচক ভূমিকাই বেশি। এটাকে কোনভাবে উৎসাহিত করা উচিত নয় বলে মনে করি। আমরা যারা রাজনীতিবিদ তাদের সম্পর্কে অনেক সময় প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যক্তিরা কুৎসা রটাতে পারেন। আবার তার প্রতিশোধ নিতে আমিও একই কাজ করতে পারি। এটা নিশ্চয়ই ভাল কিছু নয়।
×