ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

রাজাকার ও পাকি আর্মিরা আমার কাকা-জ্যাঠাসহ ১৪ জনকে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৫:০২, ৫ এপ্রিল ২০১৭

রাজাকার ও পাকি আর্মিরা আমার কাকা-জ্যাঠাসহ ১৪ জনকে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৌলভীবাজারের শামসুল হোসেন তরফদারসহ ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১১ম সাক্ষী চানু ধর চৌধুরী জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, রাজাকার ও পাকিস্তানী আর্মিরা আমার কাকা শতদল ধর ও আমার জেঠা সুশিতল ধরসহ ১৪ জনকে গুলি করে হত্যা করে। পরের দিন তাদের লাশ আমাদের বাড়ির পুকুরের পাশে গর্তে মাটি চাপা দেই। সাক্ষীর জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী তাকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ১৮ এপ্রিল দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে দুই সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মঙ্গলবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। এ সময় প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর সুলতান মোঃ সিমন, প্রসিকিউটর আবুল কালাম। অন্যদিকে আসামি পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট আব্দুস সুবহান তরফদার। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম চানু ধর চৌধুরী। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৫৯ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম খলাগ্রাম। থানা- রাজনগর, জেলা- মৌলভীবাজার। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। একাত্তরের ২৯ নবেম্বর সকাল আনুমানিক ৭/৮টার সময় আমি আমাদের বাড়ির উত্তরের গেটের সামনে গিয়ে দেখতে পাই, শতাধিক পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকার আমাদের প্রতিবেশী যতীন্দ্র মোহন ঘোষের বাড়ির দিকে যাচ্ছে। ঐ সকল রাজাকারের মধ্যে গয়েমপুরের উজের আহম্মেদ, সোনাটিকা গ্রামের ইউনুছ আহম্মেদ, জামুরা গ্রামের নেছার, বাঘাজোড়া গ্রামের শামসুল হোসেন ও শুশুরিয়া গ্রামের মোবারক মিয়া ছিল। এ সময় আমরা আইয়ুব পীরের বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করার আনুমানিক এক ঘণ্টা পর আমাদের বাড়ির দিক থেকে প্রচ- গুলির শব্দ শুনতে পাই। গুলির শব্দ পেয়ে ঐ বাড়ি থেকে বের হয়ে দেখি আমাদের পুরাতন বাড়ি ও আমাদের বাড়ি থেকে আগুনের ধোঁয়া উড়ছে। সাক্ষী আরও বলেন, বিকেল আনুমানিক তিন ঘটিকার সময় আইয়ুব পীরের বাড়িতে অবস্থান করাকালীন সময়ে লোকজনের নিকট জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারি যে পাকিস্তান আর্মিরা আমাদের বাড়ি থেকে চলে গেছে। এরপর আমি আমাদের বাড়িতে ফিরে এসে আমাদের বাড়ির দক্ষিণে ঢুকে গ্রামের বিজয় দাশ, আমাদের পুরাতন বাড়ির জেঠা সুকেশ রঞ্জন ধর ও পাশের বাড়ির যতীন্দ্র মোহন ঘোষের গুলিবিদ্ধ লাশ দেখতে পাই। আমাদের দক্ষিণ ভিটির দাদুর ঘরের দরজায মাটিতে রক্ত দেখি। ঐ ঘরে ঢুকে আমরা বাবার মামা প্রতাপ পুরকায়স্থ ও পুরাতন বাড়ির দাদা অখিল ধরের গুলিবিদ্ধ লাশ দেখতে পাই। আমার দাদা নিশি রঞ্জন ধরকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জীবিত দেখতে পাই। এরপর আমি আমার দাদার ঘরের পূর্ব পাশে অন্য একটি ঘরে ঢুকে কাকা শ্যামল ধরের গুলিবিদ্ধ লাশ ও আমাদের গ্রামের বাবুল দেবকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ছটফট করতে দেখি। এছাড়া পুরাতন বাড়ির দাদা অরবিন্দ ধর, পরিমল দাশ, ক্ষিরদ দেবের গুলিবিদ্ধ লাশ দেখতে পাই। এরপর আমি উত্তরের গেটে দিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে একটি ছোট ঘরে আমার জেঠা সুশিতল ধর, কাকা শতদল ধর ও ছোট কাকা সজল ধরের লাশ দেখতে পাই। আমরা আহত নিশি রঞ্জন ধর ও বাবুল দেবকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাই। পরে তারাও মারা যান। আমি পরের দিন সুভাস, শান্ত, অরুন ধর ও গ্রামবাসীদের সহায়তায় শহীদদের লাশ আমাদের বাড়ির পুকুরের পাশে গর্ত করে মাটি চাপা দেই।
×