ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ছোটদের গণতন্ত্র প্রশিক্ষণ

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ২ এপ্রিল ২০১৭

ছোটদের গণতন্ত্র প্রশিক্ষণ

বিদ্যালয় মানে কেবলই পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়ন নয়, পাশাপাশি সুকুমার বৃত্তির চর্চা যেমন, তেমনি নেতৃত্বের গুণাবলী নিয়ে বিকশিত হওয়ারও পীঠস্থান। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে যোগ্য, দক্ষ, গুণী, কুশলী, সৎ, সাহসী এবং গণমুখী নেতৃত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রটিও বিদ্যালয়েরই একচ্ছত্র। মানুষ হওয়ার কারিগর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে চায় সম্পন্ন মানব হিসেবে। ভবিষ্যত প্রজন্ম শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান গরিমায়, সাহস ও নির্ভীকতায় দেশপ্রেমের বরাভয় কাঁধে নিয়ে বেড়ে উঠুক এমন প্রত্যাশাই থাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী বিকশিত করা মানেই দেশ ও জাতির আগামী দিনের যথাযথ নেতৃত্বের জন্য নেতা গড়ে তোলার মহৎ কাজ সম্পন্ন করা। কিন্তু যদি এসব ক্ষেত্রে আসে স্থবিরতা, তবে ভবিষ্যত হবে জাতির জন্য ক্ষতিকর। শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক বিকাশের সমস্ত পথ রাখা উচিত উন্মোচিত। নিজের দক্ষতা ও ভাললাগায় খুঁজে নেবে ভবিষ্যতের উজ্জ্বল পথ। যে পথ রেখে যাচ্ছেন পূর্বসূরি, সেই পথকে আরও সমৃদ্ধ, গতিশীল যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা বিদ্যালয়ের অন্যতম পথ ও পন্থা হতে পারে। বিদ্যালয় তার অধ্যয়নরত প্রতিটি শিক্ষার্থীর মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠা, বিকশিত হওয়ার পথকেই প্রশস্ত করে দিতে পারে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই ক্ষেত্রে বন্ধ্যাবস্থা শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক বিকাশের পথটি মসৃণতর করেনি। বরং অন্তর্গত বৃত্তিগুলোকে অবদমিত করেছে। বনসাই হিসেবে স্থবির হওয়ার অবস্থান তৈরি করেছে। স্বাভাবিকতা রুদ্ধ হলে, অস্বাভাবিক পথ ও পন্থা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। যে কারণে শিক্ষিত তরুণ এবং নারীকে আত্মঘাতী জঙ্গীতে পরিণত হতে দেখা যাচ্ছে। শিক্ষা তাকে মানুষের জন্য, মানবিকতার জন্য, সমাজ, রাষ্ট্র ও দেশ-জাতির জন্য আত্মদানে উৎসর্গীকৃত হওয়ার দীক্ষা দিতে না পারলে, তার বিপথগামী হওয়ার পথ প্রশস্ত হতে পারে। মাদকাসক্তির ভয়াবহ করাল গ্রাসে নিপতিত হতে পারে। একই সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদের রোমাঞ্চে অনুপ্রাণিত হয়ে আত্মঘাতী হওয়ার প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করতে পারে। শিক্ষাঙ্গন পরিচালনায় শিক্ষক ও অভিভাবকের পাশাপাশি ছাত্রদের অংশগ্রহণ অত্যাবশ্যক। সম্মিলিত প্রয়াসই শিক্ষাঙ্গনকে সুপথে পরিচালিত করতে পারে। তাই বিদ্যালয় পর্যায়ে ভোটের মাধ্যমে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন করে শিক্ষাঙ্গনকে সমৃদ্ধ ও ছাত্রদের সমস্যা সমাধানের এ কাজটি হতে পারে। এতসব কথার অবতারণা দেশের তেইশ হাজার মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসায় ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। ছয় থেকে ষোলো বছর পর্যন্ত শিক্ষার্থী এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে দিনকয়েক আগে। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী ভোটার ভোটের মাধ্যমে তাদের এক লাখ তিরাশি হাজার দুই শ’ বাহাত্তর জন নেতা নির্বাচন করেছে। এদের মধ্য থেকে বাংলাদেশের আগামী দিনের নেতৃত্ব তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা অত্যধিক বললে অত্যুক্তি হবে না। বহুকাল থেকে চলে আসা ক্লাস ক্যাপ্টেনের মতোই এই নেতাদের ভূমিকা। তবে এ নতুন ব্যবস্থায় বিদ্যালয়ের সব শ্রেণীর নির্র্বাচিত প্রতিনিধিরা মিলে ক্যাবিনেট গঠন করে ক্লাস ও ক্লাসের বাইরে পুরো বিদ্যালয়ের আটটি বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করবে। শিক্ষাসামগ্রী, ক্রীড়া, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, পরিচ্ছন্নতা, বাগান করা, দিবস পালন অনুষ্ঠান প্রভৃতিতে নতুন নেতৃত্ব দায়িত্ব পালন করবে। এতে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব গুণ বিকাশের বাস্তব শিক্ষালাভ হবে। জাতীয় নির্বাচনের মতোই এই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন প্রার্থী ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার, স্কুলে প্রচার, পোস্টার সবই ছিল। শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে ছাত্ররাই সব করেছে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিনিধিদের নিয়ে আটজনের পরিষদে একজন প্রধান। বিদ্যালয় পর্যায়ে গণতন্ত্রের এই প্রশিক্ষণ সফল হলে তা হবে যুগান্তকারী। কিন্তু কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ অচল রেখে এই পদ্ধতি চালুর বিকাশ ঘটবে কিভাবে? বহু বছর ধরে প্রচলিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন তিন দশক ধরে বন্ধ রেখে জাতির জন্য নতুন নেতৃত্ব তৈরির পন্থা কণ্টাকাকীর্ণ রেখে সুস্থ নেতৃত্বের বিকাশ অসম্ভব। ডাকসু নির্বাচন অবশ্য কর্তব্য বলে স্বয়ং রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত ঘোষণা করেছেন। কিন্তু সে পথে কর্তৃপক্ষ যেতে চায় না। ছোটরা যে গণতন্ত্র শিখেছে, বড় হয়ে তার শাখা-প্রশাখা না পেলে বনসাই হয়ে যাবে। সুতরাং সর্বক্ষেত্রে গণতন্ত্রচর্চার পথ সুগম করার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোর নিয়মিত নির্বাচনের বিধি-বিধান সচল রাখা সঙ্গত।
×