ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কেন শেখ হাসিনার নেতৃত্ব অনিবার্য -স্বদেশ রায়

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১৬ মার্চ ২০১৭

কেন শেখ হাসিনার নেতৃত্ব অনিবার্য -স্বদেশ রায়

কোন কোন দেশে কখনও কখনও কোন নেতা দলমত নির্বিশেষে সকলের হয়ে যান। তাঁর অবস্থান গিয়ে দাঁড়ায় সবার ওপরে। দেশের সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণের জন্য, দেশের যাবতীয় ভালর জন্য তাঁর কোন বিকল্প থাকে না। যেমন ভারতের স্বাধীনতার পরে জওয়াহের লাল নেহরু, সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান, আধুনিক মালয়েশিয়ার মাহাথির এমনকি রাজতন্ত্রের থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবলও। এমনি আরও অনেক উদাহরণ পৃথিবীর ইতিহাসে জ্বল জ্বল করছে। কোন দেশের জনগণের জন্য এই ধরনের নেতা পাওয়া যে কত বড় বিষয় তা ঠিক প্রকাশের নয়, বরং উপলব্ধির। আজকের পৃথিবীর অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি যে ভারত- এর মূল রূপকার জওয়াহের লাল নেহরু এ কথা ভারতের দলমত নির্বিশেষে সকলে স্বীকার করেন। তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন, তাঁর দেশের মানুষ তাঁকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে দেশ পরিচালনার সুযোগ দিয়েছিল। অন্যদিকে, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ায় ট্যাক্সি ড্রাইভারের কাছেও একই ধরনের উত্তর পেয়েছি। তাদের কাছে জিজ্ঞেস করেছি, লি কুয়ানের অবস্থান কী তোমার দেশে? তারা বলেছেন, নেক্সট টু গড। ঠিক একই ধরনের উত্তর পাওয়া গেছে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াতে (মাহাথিরের আমলে)। এই দেশগুলোর জনগণের সচেতনতায় মুগ্ধ হতে হয়। জওয়াহের লাল নেহরু যতদিন বেঁচে ছিলেন, জনগণ তাঁর হাতেই রাষ্ট্র দিয়ে রেখেছিল। লি কুয়ান, মাহাথির নিজে অবসর না নেয়া অবধি জনগণ তাঁদের হাতেই রাষ্ট্র ক্ষমতা দিয়ে রাখে। থাইল্যান্ডের রাজার মৃত্যুর পরেও পৃথিবী দেখেছে তাঁর অবস্থান ছিল সে দেশে ঈশ্বরের পরেই। অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে, অনেক রক্ত, অনেক সামরিক ব্যটনের পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ আজ সেই সৌভাগ্য অর্জন করতে যাচ্ছে। স্বাধীনতার চার দশক পরে বাংলাদেশ এমন একজন নেতা পেয়েছে, যার অবস্থান এখন সবার ওপরে। তাকে ছাড়া দেশের উন্নয়ন, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন চিন্তা করা যায় না। এ মুহূর্তে যদি কেউ অন্য কিছু বলেন, তাকে বুকে হাত দিয়ে বলতে বললে বলবেন, ‘সত্য বলিনি’। কেউ কেউ আরও সত্য বলেন, তারা বলেন, ‘দল করি, তাই এমন উল্টো কথা বলেছি।’ কিন্তু যারা কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য নন, যারা কোন স্বার্থের কাছে নিজের বিবেক বন্ধক দেননি, যারা কোন এনজিও করেন না– এমন মুক্ত মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশে বেশি। কথা বলার ওইভাবে তাদের কোন প্লাটফর্ম নেই। তবে কাঁচা বাজারে গেলে, কোন যাত্রীবাহী বাসে চড়লে বা অনুষ্ঠানে গেলে এদের সঙ্গে দেখা হয়- এরা নির্দ্বিধায় সত্য বলেন। তারা বলেন, বাংলাদেশে এখন শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই এবং খুব নিকট ভবিষ্যতে তাঁর বিকল্প তৈরি হবে এমন সম্ভাবনাও নেই। তারা খুব সহজ করেই সত্যটি বলেন, তিনি যতদিন আছেন, তাঁর হাত দিয়েই দেশের উন্নয়ন যতটুকু করে নেয়া যায় সেটাই ভাল। বাংলাদেশের এই মুক্ত মনের সাধারণ মানুষের কাছে, যারা কোন স্বার্থের কাছে বন্দী নয়, তাদের দৃষ্টিতে কেন শেখ হাসিনা এই অবস্থানে গেলেন? এর উত্তর অতি সাধারণ মানুষের কণ্ঠে অতি সহজ ভাষায় পাওয়া যায়, তারা বলেন, ‘দেশের দিকে তাকালেই তো বোঝা যায়।’ বাস্তবে দেশের দিকে তাকালেই কি বোঝা যায়? যায়। এমনকি পত্রিকার পাতায় মাঝে মাঝে যে খবরগুলো আসে সেগুলোকে এক করলেই তো বোঝা যায়। এই যেমন গত সপ্তাহের রিপোর্ট, এশিয়ার ভেতর গ্রামে সব থেকে বেশি পাকা রাস্তা বাংলাদেশে। যিনি অর্থনীতির ছাত্র নন, তিনিও জানেন, উন্নয়নের প্রথম শর্ত যোগাযোগ। শেখ হাসিনার বড় তাত্ত্বিক সমালোচক যে সিপিবি, তাদের তাত্ত্বিক গুরু মার্কসও একই কথা বলেছেন। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়েছে, শেখ হাসিনার মতো বুর্জোয়া (!) নেতার হাত দিয়ে বাংলাদেশে। বাস্তবে শেখ হাসিনা কিন্তু কোন মতেই বুর্জোয়া নেতা নন, তিনি জনগণতান্ত্রিক। ব্রেক্সিট বা ট্রাম্প যুগের আগে হলে তাঁকে পপুলিস্ট ডেমোক্র্যাট বলা যেত। এখন এই টার্মটির অর্থ ভিন্ন হয়ে গেছে। তাই আমাদের বাংলাভাষায় থাকা ভাল, বাংলায় জনগণতান্ত্রিক বললে কল্যাণকামী গণতান্ত্রিকই বোঝায়। শেখ হাসিনা সেটাই। সমাজ কল্যাণ ও ক্যাপিটালাইজমের এমন চমৎকার মিলন অন্য কোন নেতা কোন দেশে ঘটাতে পারেননি। হুগো শ্যাভেজসহ অনেকেই কিন্তু বেশি সমাজ কল্যাণে গিয়ে এক পর্যায়ে ক্যাপিটালাইজমকে মেরে ফেলেন। শেখ হাসিনা খুবই মুন্সিয়ানার ভেতর দিয়ে একই মুঠিতে অধিক সমাজ কল্যাণ ও ক্যাপিটালাইজমকে এগিয়ে নিচ্ছেন। যার ফলে একদিকে মানুষ দশ টাকা কেজি চাল পাচ্ছে, কৃষক নিয়মিত ভর্তুকি পাচ্ছে, আবার পাশাপাশি বেসরকারী ইপিজেড গড়ে উঠছে, বিদেশী বিনিয়োগে দেয়া হয়েছে বিশেষ সুবিধা। অর্থনীতির ছাত্ররা এখন কিন্তু হাসিনোমিক্স লিখতে পারেন। কারণ, এটা হাসিনার নিজস্ব অর্থনীতি। যে কথা তাঁর অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে দেয়া সাক্ষাতকারে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি সফল হতে পেরেছেন মূলত তাঁর নেত্রী শেখ হাসিনার কারণে। তার কারণ, তার নেত্রী শেখ হাসিনা তাকে খুব সহজেই যে কোন বিষয়ে গাইড লাইন দেন। একদিকে আড়াই কোটি লোক দশ টাকা কেজি চাল পাচ্ছে, কৃষিতে ভর্তুকি, অন্যদিকে বেসরকারী খাতে প্রণোদনা, বেসরকারী ইপিজেড, বিদেশী বিনিয়োগে বিশেষ সুবিধাসহ প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপ এক্সপ্লোর হওয়ার পথ উন্মুক্ত হচ্ছে প্রতিদিন। এ কাজ এক মুঠিতে করা কিন্তু খুবই জটিল। খুব সহজ ভাষায় বলা যায়, একদিকে দেশের বেসরকারী খাতের উন্নয়ন, অন্যদিকে সরকারী তহবিল থেকে অতি দারিদ্র্য দূর করা- এ কাজই করছেন শেখ হাসিনা। এমনকি যেখানে খালেদা জিয়ার আমলে সাইফুর রহমান ভারতীয় পণ্য দিয়ে দেশ ভরে ফেলেছিলেন, সেখানে এখন অনেক পরিবর্তন। আজ ভারতের সাতটি রাজ্যে নিত্যপণ্যে নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পণ্য। এমনকি পশ্চিমবঙ্গসহ আরও অন্য রাজ্যেও তারা ঢুকেছে। এ ছাড়া আরও ৪৫টি পণ্য কিন্তু কম বাজার নেয়নি। ভারতের বাজারে আরও পণ্য যাবার সুযোগ হয়েছে। যাচ্ছেও কিছুটা। ভারতের বাজার বিশাল বলেই কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না। এই যে স্রোতের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া এ কিন্তু শেখ হাসিনার কারণেই সম্ভব হয়েছে। শেখ হাসিনার উন্নয়নের দৃষ্টি কোন মাইক্রো লেভেলে চলে গেছে তার আরেকটি উদাহরণও এ মাসেই ঘটেছে। দেশের সাধারণ হোটেল, রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের জন্যও শেখ হাসিনা ন্যূনতম মজুরি ধরে মজুরির নীতিমালা তৈরি করে দিয়েছেন। যেমনটি তিনি ক্ষমতায় আসার পরে বদলে গেছে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ভাগ্য। দূর হয়েছে শোষণ। এখন তারা যথেষ্ট ভাল বেতন পায়। দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষের ভাগ্য বদলের এই যে নেতৃত্ব শেখ হাসিনা দিচ্ছেন, এই নেতৃত্বের একশ’ ভাগের এক ভাগ যোগ্যতাও কিন্তু খালেদা, এরশাদ রাখেন না। আর বাংলাদেশের বামপন্থীরা তো রাষ্ট্র চেনার চেষ্টাই করলেন না। তারা তোপখানা-পল্টন ভালবেসে জীবন কাটিয়ে দিলেন। তাই তাদের ঘিরে যে উজ্জ্বল মানুষেরা স্বপ্ন দেখেছিলেন একদিন- তাদেরও স্বপ্ন এখন শেখ হাসিনাকে ঘিরে। দেশের এই উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে হলে বাংলাদেশে এখন সব থেকে বড় প্রয়োজন শক্তিশালী নেতৃত্ব। কারণ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (যদিও সে ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাচ্ছে) চায় তাদের একক প্রোডাকশন হাউস থাকুক বাংলাদেশে। চীন চায় শ্রীলঙ্কায় তারা যা করেছে তেমনটি করতে। চীন প্রথমে অবাধ বিনিয়োগ করে দেশটিকে বড় আকারের শর্ট টার্ম ঋণের বোঝায় ফেলে দিয়েছে। এখন এক ধরনের আর্থিক উপনিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশেও যে তাদের সে উদ্দেশ্য নেই তা বলা ভুল হবে। ভারত বাংলাদেশের জন্মলগ্নের বন্ধু ঠিকই কিন্তু তার পরেও পারস্পরিক স্বার্থরক্ষার বিষয়টি এখানেও আছে। স্বার্থশূন্য কোন বন্ধুত্ব চিন্তা করা ভুল। আবার আমেরিকা চায় বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানটিকে তাদের এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় সামরিক আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্র হিসেবে তৈরি করতে। অন্যদিকে পাকিস্তান ও তার সহযোগী মধ্য প্রাচ্যের আইএস কবলিত এলাকা চায় বাংলাদেশকে তাদের মতো করতে। এ কাজে তাদের বড় অস্ত্র মৌলবাদী অর্থ। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত মৌলবাদী অর্থনীতির (যার একটি টার্ম এখন ‘হেভেন ফিন্যান্স’) অর্থ প্রবাহ দিয়ে বাংলাদেশকে ইসলামিক মৌলবাদ কবলিত করতে চায় পাকিস্তান ও তার প্রভুরা। খুব মোটা দাগে বাংলাদেশ এখন এ ধরনের একটি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক ঘূর্ণন চত্রেুর ওপর বসে। এই অবস্থায় এক হাতে চীন, আমেরিকা, ভারত, ই্উরোপীয় ইউনিয়নের স্বার্থের সঙ্গে লড়ে নিজের স্বার্থ আদায় করা; অন্য হাতে, পাকিস্তানী নেতৃত্বে চলা গোটা বিশ্বের ইসলামিক মৌলবাদের ছোবল থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করা- এ যে কোন বিশ্বযুদ্ধের থেকে অনেক বড় যুদ্ধ। এই যুদ্ধ করার পয়েন্ট জিরো জিরো ওয়ান পার্সেন্ট ক্ষমতাও বেগম জিয়া রাখেন না। যিনি পুলিশের সিপাহীর সঙ্গে গোপালী বলে গ্রাম্য ঝগড়া করেন, তাঁকে আর যাই হোক এই জটিল পৃথিবীর নেতা ভাবার কোন কারণ নেই। এমনকি তাঁর দলের কেউও সেটা ভাবেন না। তাঁর অবস্থান বর্তমান পৃথিবীতে ওই গোপালীতেই। অন্যদিকে এরশাদের পাঁচ মিনিটও স্থিরতা নেই। এবং তিনি বয়সের ভারে ন্যুব্জ। তাই বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় নেতা হিসেবে শেখ হাসিনার লক্ষ্য যোজনের ভেতর কেউ নেই। আর তিনি যে এটা পারেন, তাও কিন্তু তিনি প্রমাণ করেছেন। তিনি ২০১৩ ও ’১৪-এর শুরুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রবল বিরোধিতা রুখে দিয়েছেন। তিনি হিলারির ব্যক্তিগত আক্রোশ শুধু নয়, বাংলাদেশকে আইএস-এর ক্ষেত্র বানানোর যে পরিকল্পনা আমেরিকা প্রশাসনের ছিল, তাও রুখে দিয়েছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব, আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রত্যেকের হুমকিকে তিনি সমান মাত্রায় জবাব দিয়েছেন। চীন ও ভারত সবার সঙ্গে তিনি সমান জুঝে দেশকে পরিচালনা করছেন। আবার বাংলাদেশের অর্থনীতি এমন স্তরে নিয়ে গেছেন যে, শুধু নিজ টাকায় পদ্মা সেতু হচ্ছে না, পদ্মা সেতু থেকে যে বিশ্বব্যাংক হিলারি ক্লিনটন ও বাংলাদেশী একজনের কথামতো অর্থ ফিরিয়ে নেয়, ওই বিশ্বব্যাংক তাকে এখন নতুন অর্থনীতির নেতা হিসেবে আমন্ত্রণ জানায়। তাই সিঙ্গাপুরের ট্যাক্সি ড্রাইভারের মতো বাংলাদেশের এখন অনেক ব্যাটারি চালিত রিক্সাওয়ালা বলেন, আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতের পরে আমাদের দেশের উন্নতি ও রক্ষার জন্য শেখ হাসিনাই আছেন। ওই সব রিক্সাওয়ালার বক্তব্যই কিন্তু দেশের মানুষের বক্তব্য। কারণ, তাদের স্বার্থ কোন দেশ বা প্রতিষ্ঠানের কাছে বাধা নেই। তারা এনজিও করেন না। বরং শেখ হাসিনার আমলে এনজিওর চক্রবৃদ্ধি ঋণের জাল থেকে মুক্তি পেয়েছেন অনেকে। এখান থেকেই ফুটে ওঠে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব কেন অনিবার্য। কেন বিকল্প কোন কিছুই চিন্তা করার দরকার এ মুহূর্তে বাংলাদেশে নেই। [email protected]
×