ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসসহ আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনের অঙ্গীকার

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৫ মার্চ ২০১৭

জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসসহ আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনের অঙ্গীকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসসহ আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনের অঙ্গীকার গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হলো চীফ অব পুলিশ কনফারেন্স। তিনদিনব্যাপী এই সম্মেলন শেষে বেশকিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় অংশগ্রহণকারী দেশগুলো। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম আবারও দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, বাংলাদেশে যেসব জঙ্গী আছে, তারা ‘হোমগ্রোন’। তারপরও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে আন্তর্জাতিক কোন জঙ্গী সংগঠনের কেউ এ দেশের কাউকে প্রভাবিত না করতে পারে। মঙ্গলবার হোটেল সোনারগাঁওয়ে ১৫টি দেশের পুলিশপ্রধান ও ইন্টারপোলসহ কয়েকটি সংস্থার অংশগ্রহণে এই সম্মেলন শেষ হওয়ার আগে যৌথ ঘোষণা গ্রহণ করা হয়। সম্মেলন শেষে যৌথ ইশতেহার সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক। সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের মাঝে বিতরণ করা লিখিত বিবৃতিতেÑ এসব সিদ্ধান্ত জানানো হয়। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন, আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র ডেপুটি মিনিস্টার আবদুল রহমান, অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পুলিশের সিনিয়র লিয়াঁজো অফিসার স্টুয়ার্ট ডেভিড অ্যালেন, রয়্যাল ভুটান পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশপ্রধান নিংরা ওয়াংদি ও রয়্যাল ব্রুনাই পুলিশের এ্যাসিসট্যান্ট পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হাসান আহমেদ। এ বিবৃতিতে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সীমান্তবর্তী অঞ্চলে পুলিশের পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করে সহিংসতা ও সীমান্তে সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন করা হবে। এ জন্য পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। বর্তমান বিশ্ব সন্ত্রাসের বিরদ্ধে লড়াই করছে। এই অঞ্চল ও বিশ্বের অন্যান্য সংস্থাগুলোরও এই সমস্যা মোকাবেলায় একত্র হওয়া প্রয়োজন। চীফ অব পুলিশ কনফারেন্স অব সাউথ এশিয়া এ্যান্ড নেইবারিং কান্ট্রিস অন রিজিওন্যাল কো-অপারেশন ইন কার্ভিং ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম শীর্ষক এই সম্মেলনে আরও বলা হয়, চারটি উদ্দেশ্যে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সন্ত্রাস দমনের লক্ষ্যে নিজেদের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়ন এবং অন্যান্য দেশের নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি, সীমান্তে সংঘবদ্ধ অপরাধ ও সহিংসতা রোধে সম্মিলিত কৌশল তৈরি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাঝে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্র তৈরি করা, সন্ত্রাস মোকাবেলায় একটি সাধারণ প্ল্যাটফর্মে সবাইকে একত্র করা। ঢাকায় অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে ইন্টারপোলের সেক্রেটারি জেনারেল জার্গেন স্টক উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, ব্রুনাই, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনামের প্রতিনিধিরা। এছাড়া ফেসবুক ও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এফবিআই), যুক্তরাষ্ট্রের আইজিসিআই, আসিয়ানপোল ইত্যাদি সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তাসহ মোট ৫৮ জন বিদেশী অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে কাউন্টার ভায়োলেন্ট টেররিজম, মানবপাচার, মাদক চোরাচালান, অস্ত্র পাচারবিষয়ক অপরাধের ওপর বেশি জোর দেয়া হয়। অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। শেষ দিনে বিভিন্ন দেশের পুলিশ প্রতিনিধি, বাংলাদেশ পুলিশ ও ইন্টারপোল একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এ জন্য সন্ত্রাস মোকাবেলায় সবাই একই কৌশল অবলম্বন করবেন বলে জানান। এনসিবি ও ইন্টারপোলের সদস্যদের সঙ্গে সরসারি যোগাযোগ করা হবেও বলেও সম্মেলনে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। এছাড়া ইন্টারপোলের আওতায় এই অঞ্চলের পুলিশপ্রধানদের নিয়ে একটি ফোরাম গঠন করার বিষয়েও নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সন্ত্রাস দমনে তথ্য আদান-প্রদানসহ সব ধরনের সহযোগিতার জন্য একটি প্রযুক্তিগত নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে। এই আইটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমেই বিভিন্ন দেশ তাদের সীমান্তে সংঘটিত অপরাধ থামাতে তথ্য সরবরাহ করবে। নিজেদের মধ্যে ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাব ও প্রশিক্ষণেরও সুবিধা দেয়ার ব্যাপারেও একমত হয়েছে অংশ নেয়া দেশগুলো। এই ফোরাম বিশ্বের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে এবং সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিংসহ অন্যান্য অপরাধ মোকাবেলা করা হবে। সন্ত্রাসী হামলার পরবর্তী পদক্ষেপ বিষয়ে অভিজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে পরিকল্পনা তৈরি করা হবে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়। সমাপনী সম্মেলনে প্রধান অতিথি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বেশ দৃঢ়কণ্ঠেই উচ্চারণ করেছেন, বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট (আইএস) বা আন্তর্জাতিক কোন সংগঠনের জঙ্গী নেই। বাংলাদেশে যেসব জঙ্গী আছে তারা ‘ হামগ্রোন’। তারা দেশীয় জঙ্গী সংগঠনের সদস্য। তবে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে করে আন্তর্জাতিক কোন জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ না হয় এবং আন্তর্জাতিক কোন জঙ্গী সংগঠনের কেউ যাতে এ দেশের কাউকে প্রভাবিত করতে না পারে। জঙ্গী দমনে আমরা কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, যৌথ ঘোষণায় দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল এবং বিশ^ব্যাপী অপরাধের ধরন চিহ্নিতকরণ, আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনে একটি কৌশল উদ্ভাবন, ইন্টারপোল সদস্য দেশসমূহের মধ্যে এনসিবির মাধ্যমে ওয়ান টু ওয়ান কমিউনিকেশন, চীফস অব পুলিশদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন, কাউন্টার টেররিজমে সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে তথ্যবিনিময়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিশে^র নেতৃস্থানীয় সংস্থার মধ্যে পেশাগত সম্পর্ক বৃদ্ধি, সন্ত্রাসবাদ এবং আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনে তথ্যপ্রযুক্তি নেটওয়ার্ক স্থাপন, ফরেনসিক ল্যাবরেটরি এবং ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি, মানি লন্ডারিং, সাইবার ক্রাইম এবং অর্থনৈতিক অপরাধ দমনে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা বাড়ানো, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে অপরাধ দমনে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের লক্ষ্যে যৌথ সিম্পোজিয়াম ও প্রশিক্ষণ আয়োজন ইত্যাদি গুরুত্ব পেয়েছে। সমাপনী অনুষ্ঠানের আগে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। প্রতিনিধিগণ তাদের বক্তব্যে চীফস অব পুলিশ কনফারেন্সকে একটি সফল সম্মেলন হিসেবে অভিহিত করেন। তারা এ ধরনের সম্মেলন আয়োজন আগামীতেও অব্যাহত রাখার জন্য ইন্টারপোল এবং বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। তারা বাংলাদেশে অবস্থানকালে আন্তরিক আতিথেয়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশের পুলিশপ্রধান এবং বাংলাদেশ পুলিশের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। সমাপনী অনুষ্ঠানে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্য এবং সন্ত্রাসবাদের ভিকটিমদের সম্মানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অধিবেশনটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক। এ সময় এসবির অতিরিক্ত আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর মোঃ সাদিকুর রহমান, অতিরিক্ত আইজিপি (্প্রশাসন ও অপারেশনস) মোঃ মোখলেসুর রহমান, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া, উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। কনফারেন্সে বিভিন্ন বিষয়ে ১৪টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
×