ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে দরকার আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিকতা

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১২ মার্চ ২০১৭

উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে দরকার আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিকতা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সাফল্যের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসা মানেই দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি। আর বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতায় আসা মানেই সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ, দুর্নীতি-অর্থপাচার আর দুঃশাসন। এরা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না বলেই দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি হোক তা চায় না। দেশের মানুষ সুন্দর, উন্নত ও সমৃদ্ধ জীবন নিয়ে এগিয়ে যাবে এটা খালেদা জিয়া ও জামায়াতিদের সহ্য হয় না। এ বিষয়গুলো দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরে তাদের মন জয় করার জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। শনিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার মাত্র ৮ বছরেই দেশের যে পরিমাণ উন্নয়ন করেছে, ২১ বছর ক্ষমতায় থেকে তারা পারেনি কেন? তার একমাত্র কারণই হচ্ছেÑ এরা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। এদের দিলে পেয়ারে পাকিস্তান। এদের (বিএনপি-জামায়াত) ব্যাপারে দেশের মানুষকে সচেতন থাকতে হবে। দেশের উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রায় কেউ বাধা দিতে না পারে সে জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। উৎসাহ-উদ্দীপনায় সংগঠনটির জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সারাদেশ থেকে আগত যুব মহিলা লীগের নেতাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে। মিলনায়তনে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীদের বাইরে টানানো মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে শুনতে দেখা যায়। বিকেলে দ্বিতীয় অধিবেশনে আগামী তিন বছরের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ গঠনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। জাতীয় সঙ্গীতের সুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পতাকা এবং যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আখতারের সভাপতিত্বে সম্মেলনে সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা অপু উকিল। শুরুতেই গীতিনাট্যের তালে তালে নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পীরা। এরপর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত রাজপথে যুব মহিলা লীগের কর্মকা- নিয়ে প্রমাণ্যচিত্র পরিবেশন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ব্যাজ, উত্তরীয় ও ক্রেস্ট তুলে দেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। শোক প্রস্তাব করেন ইসরাত জাহান নাসরিন। বক্তব্য রাখেনÑ আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা ও যুবলীগের মহিলা লীগের সহ-সভাপতি জাকিয়া পারভীন মনি। সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলে দেশব্যাপী অত্যাচার-নির্যাতন, হত্যার বিবরণ তুলে ধরেন বলেন, একাত্তরের পাকিস্তানী হানাদাররা বাংলাদেশে যেভাবে গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও অত্যাচার করেছে, ঠিক একই কায়দায় বিএনপি-জামায়াত জোট দেশে অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে। নৌকায় ভোট দেয়ার অপরাধে ৬ বছরের শিশু রাজুফাকে গণধর্ষণ করেছে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা। অন্তঃসত্ত্বা মা রেহাই পায়নি, মা-মেয়েকে একসঙ্গে ধর্ষণ করেছে। তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকতে তারা রাজপথে আমাদের মেয়েদের ওপর যে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে, আমরা ক্ষমতায় থাকতে তো তা করিনি। তারা বলে ভয়ে নাকি তারা রাস্তায় নামে না। আমার প্রশ্নÑ এত ভয় থাকলে রাজনীতি করা কেন? ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর ৫ বছরে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশে যে অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে, তা দেশের মানুষ কখনও ভুলবে না, ভুলতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুন-খারাবি, অত্যাচার-নির্যাতন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার পুরনো অভ্যাস। ৯২ দিন এয়ারকন্ডিশন অফিসে বসে থেকে হুকুম দিয়ে তিনি সারাদেশে খুন-খারাবি করিয়েছেন। শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করিয়েছেন। উনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে সরকারের পতন না ঘটিয়ে নাকি উনি ঘরে ফিরে যাবেন না। আমার প্রশ্নÑ ওই সময় উনি ঘরে ছিলেন নাকি রাস্তায় ছিলেন? ঘরে বসে হুকুম দিয়ে উনি সারাদেশে জ্বালাও-পোড়াও করিয়েছেন। শিশু, কিশোর, অন্তঃসত্ত্বা নারী, শিক্ষক থেকে সাধারণ মানুষ কেউই তার অগ্নিসন্ত্রাসের হাত থেকে রেহাই পাননি। তার আন্দোলনের ডাকে দেশের জনগণ কোন সাড়া দেয়নি, বরং উল্টো সারাদেশে বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলন প্রতিহত করতে শুরু করলে তারা এসব বন্ধ করতে বাধ্য হয়। নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মুখে কথা শোভা পায় না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন দেখি তারা (বিএনপি) নির্বাচন নিয়ে কথা বলে। সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাতে সৃষ্ট দল হচ্ছে বিএনপি। জিয়াউর রহমানের সময় নির্বাচনের নামে প্রহসন, হ্যাঁ-না ভোট, খালেদা জিয়ার আমলের ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচন, মাগুরা ও ঢাকা-১০ এর উপ-নির্বাচনের কথা কী তারা ভুলে গেছে? তারা ক্ষমতায় থাকতে ভোট কারচুপির ইতিহাস ছাড়া কখনও কী অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পেরেছে? তাই তাদের মুখে আর যাই হোক নির্বাচনের কথা শোভা পায় না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কথায় কথায় বিএনপির মুখে ভারত বিরোধিতার কথা শোনা যায়। কিন্তু তাদের চরিত্র বাস্তবে ঠিক উল্টো। ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেছিলেন। ৫০ বছরের রিজার্ভ না রেখে আমি গ্যাস বিক্রিতে রাজি হইনি বলে ক্ষমতায় যেতে পারিনি। ওই সময় ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা হাওয়া ভবনেই বসে থাকত। আর ভারতের দালালী করে কে তাও দেশের মানুষ ভাল করেই জানে। ভারতে গিয়ে খালেদা জিয়া গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে কথা বলতেই ভুলে গিয়েছিলেন। আমরা ক্ষমতায় এসে ঐতিহাসিক গঙ্গা চুক্তি করেছি। তিনি বলেন, জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ারা ভারতের সঙ্গে সীমানা নির্ধারণ করার বিষয়ে কথা বলতেই ভয় পেয়েছে। আমরা সেই সীমানা নির্ধারণও করেছি। তারা ভারত ও মিয়ানমারের কাছে সমুদ্র সীমার দাবি বা মামলা করতে ভয় করেছে। আমরা মামলা করে ভারত ও মিয়ানমার থেকে সমুদ্র সীমার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। এমনকি ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তির সময়ও খালেদা জিয়া বিরোধিতা করে বলেছিলেন ফেনী পর্যন্ত নাকি ভারত হয়ে যাবে। তখন আমি বলেছিলাম, ফেনী পর্যন্ত ভারত হয়ে গেলে খালেদা জিয়াকে তো পশ্চিমবঙ্গ কিংবা ত্রিপুরা সংসদে যেতে হবে, দেশে নয়। তিনি বলেন, আসলে এরা ক্ষমতায় আসে দেশপ্রেম নিয়ে নয়, ক্ষমতাকে ভোগ করার জন্য। এরা ক্ষমতায় থেকে নিজেরা বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছে, আর একটি এলিট শ্রেণী তৈরি করেছে। জিয়াউর রহমানের হত্যাকা-ের পর ৪০ দিন ধরে মিথ্যাচারের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া হত্যাকা-ের পর ৪০ দিন ধরে টেলিভিশনে প্রচার করা হয় ভাঙ্গা স্যুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া নাকি আর কিছুই রেখে যাননি। জিয়াউর রহমানের প্যান্ট কেটে নাকি তারেক-কোকোর প্যান্ট বানিয়ে পরানো হয়েছে। পরে সেই ভাঙ্গা স্যুটকেস আলাউদ্দিনের চেরাগ হয়ে গেছে। জিয়া পরিবারের বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদের চিত্র দেশবাসী দেখেছে। আসলে দ্বিমুখীতা, দুর্নীতি, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসই হচ্ছে বিএনপি নেত্রীর নীতি। হাওয়া ভবনের পাওনা না মিটিয়ে ওই সময়ে কেউ কোন কাজ করতে পারেনি। মা- ছেলেকে দু’ভাগ দিয়েই কাজ করতে হয়েছে। মায়ের ভাগ নিয়েছে ফালু আর ছেলের ভাগ নিয়েছে মামুন। এটাই ছিল ওই সময়ের দেশের বাস্তবতা। নারীর ক্ষমতায়নে আওয়ামী লীগের বিশাল অর্জনগুলো সারাদেশের মা-বোনদের সামনে ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য দলের নারী নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আগে দেশে কোন সচিব, জেলা প্রশাসক, এসপি, জজ, বিচারপতি নারী ছিল না। সেনা-নৌ ও বিমানবাহিনীতে কোন নারী কর্মকর্তা ছিল না। আমরা ক্ষমতায় এসে সব ক্ষেত্রে নারীদের পদায়ন করেছি। সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করেছি। কর্মসংস্থানের ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছি। তিনি বলেন, আন্তরিকতা নিয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করছি বলেই দেশের মানুষ এর সুফল পাচ্ছেন। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবই ইনশাল্লাহ। দৃষ্টি আকর্ষণ ঃ প্রধানমন্ত্রীর যুব মহিলা লীগের সম্মেলনের নিচে এটি সংযুক্ত হবে নাজমা-অপু পুনর্নির্বাচিত ॥ ১৩ বছর পর দ্বিতীয় সম্মেলনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুর্নবহাল হলেন নাজমা আকতার ও অধ্যাপিকা অপু উকিল। শনিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দ্বিতীয় অধিবেশনে কমিটি ঘোষণা করা হয়। দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতি পদে ও সাধারণ সম্পাদক পদে শুধু একজনের নামই প্রস্তাব করেন কাউন্সিলররা। পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাদের নাম ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নতুন কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে। উত্তরের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন এমপি ও সাধারণ সম্পাদক তাহেরা খাতুন লুৎফা এবং দক্ষিণের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ঝুমা ও সাধারণ সম্পাদক নিলুফা রহমানের নাম ঘোষণা করা হয়। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনটির প্রথম সম্মেলন হয় ২০০৪ সালের ৫ মার্চ। সভাপতি পদে আসেন নাজমা আক্তার এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় অপু উকিলকে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেনÑ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
×