ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালের ‘পাখিবাড়ি’

ব্যক্তি উদ্যোগে অভয়াশ্রম নানা প্রজাতির পাখির কলকাকলিতে মুখর

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৪ মার্চ ২০১৭

ব্যক্তি উদ্যোগে অভয়াশ্রম নানা প্রজাতির পাখির কলকাকলিতে মুখর

খোকন আহম্মেদ হীরা ॥ দেশী ও অতিথি পাখির প্রাকৃতিক নিরাপদ আবাসস্থল ও বিচরণের অভয়াশ্রম না থাকায় গ্রামীণ জনপদ থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে চির চেনা পাখি। চোরা শিকারিদের পাখি নিধন, প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট বিরূপ পরিবেশের মধ্যেও বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়সারহাট গ্রামের আব্দুর রশিদ মিয়ার বাড়িটি এখন এলাকায় ‘পাখিবাড়ি’ নামে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। আগৈলঝাড়াসহ পার্শ¦বর্তী উপজেলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে ‘পাখিবাড়ির’ নাম। সরকারী কোন পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই নিজ উদ্যোগে পাখিদের অভয়াশ্রমে পরিণত করা হয়েছে এ বাড়িটিকে। আগৈলঝাড়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় নয় কিলোমিটার পশ্চিমে পয়সারহাট পশ্চিমপাড় বাস স্ট্যান্ডের উত্তর পাশেই এ ‘পাখিবাড়ির’ অবস্থান। পাখিবাড়ির মালিক মৃত আব্দুর রশিদ মিয়ার পুত্র পাখিপ্রেমী রাসেল মিয়া জানান, প্রতিবছর শীত মৌসুমের শুরু থেকে তাদের বাড়ির পাশের বিশাল জলাবদ্ধ চাষের জমিতে গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত এসব পাখির দেখা মেলে। দেশী প্রজাতির পাখির সঙ্গে শীতের সময় ঝাঁকে ঝাঁকে আসা বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি সারাদিন দল বেঁধে পাশের জলাশয়ে তাদের খাবার সংগ্রহ করে। সূর্য অস্ত যাওয়ার আগেই রাত্রি যাপনের জন্য বিলের পার্শ¦বর্তী বিভিন্ন বিল ও জলাশয় থেকে পাখিরা এসে আশ্রয় নেয় বাড়ির বড় গাছের মগডালসহ নিরাপদ ঝোপ-ঝাড়ে। ভোর হলেই আবার পাখিরা চলে যায় খাবারের সন্ধানে বিভিন্ন বিলে। তিনি আরও জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শিকারিদের শিকার, যান্ত্রিক শব্দ ও মনুষ্যসৃষ্ট বিরূপ পরিবেশের কারণে এলাকায় এখন আর আগের মতো সর্বত্র পাখির বিচরণ দেখা যায় না। তারপরেও গত চার বছর থেকে তাদের বাড়িতে বাসা বেঁধেছে বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার পাখি। শীত মৌসুমে অতিথি পাখি আসা শুরু করার পর পাখি শিকারের জন্য ব্যস্ত হয়ে পরে এক শ্রেণীর শিকারির দল। দিনে ও রাতে সমানতালে চলে তাদের পাখি শিকারের প্রস্তুতি। প্রকাশ্যে ও চুরি করে চেষ্টা চলে পাখি শিকারের। এ কারণেই ছয় ঋতুর এ দেশে আগের মতো আর অতিথি পাখির দেখা মিলছে না। রাসেল আরও জানান, পাখিদের মৌসুমী বসবাসের জন্য শিকারিদের পাখি শিকার থেকে বিরত রাখতে দীর্ঘ কয়েক মাস পর্যন্ত দিনের বেশিরভাগ সময় তাকে বাড়িতে বা বাড়ির আশপাশ এলাকায় অবস্থান করতে হয়। কাজের জন্য কোথাও গেলে শিকারিদের হাত থেকে অতিথি পাখিদের রক্ষা করতে দুই জন নিজস্ব লোককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। রাসেল তার নিজের বাড়িকে পাখিদের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করেছেন। প্রায় পাঁচ একর আয়তনের বাড়িতে বিভিন্ন জাতের প্রায় চার হাজার গাছে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির বসবাস। এরমধ্যে বুনো হাঁস, পানকৌড়ি, নিশিবক, সাদাবক, লালবক, মাছরাঙা, ডাহুক, ঘুঘু, সরালি, কুদালীসহ অন্য শীত প্রধান এলাকা সুদূর সাইবেরীয়া থেকে নাম না জানা পাখিদের মিলনমেলা কলকাকলী ডাক শুনতে ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখতে এ বাড়িতে প্রতিদিন ভিড় করছেন পাখিপ্রেমীরা। ছুটির দিন ও বিশেষ দিনে লোকজনের ভিড় থাকে বেশি। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তিরা জানান, রাসেলদের বাড়ি ছাড়া ওই এলাকার অন্য কোন লোকের বাড়ির গাছে একটি পাখিও বসে না। রাসেল বলেন, পাখির মল ত্যাগের কারণে তাদের ঘরের টিন প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। দুর্গন্ধ রয়েছে সারা বাড়িতে। পাখির বিষ্ঠার কারণে বড় গাছের সঙ্গে ছোট কোন গাছের পাতাও নেই। মারা যায় পুকুরের মাছও। থাকছে না বাড়ির গাছের কোন ফল মূল। এতে প্রতিবছর তাদের আর্থিক ক্ষতি হলেও নিজেদের ক্ষতির কথা চিন্তা না করে পাখিদের কলতানীর সঙ্গে বসবাস করতে পেরে তারা খুবই গর্ববোধ করেন। শুধু শীত মৌসুম নয় বছর জুড়েই পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে তাদের বাড়ি।
×