ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

অগ্নিঝরা মার্চ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৪ মার্চ ২০১৭

অগ্নিঝরা মার্চ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের রক্তক্ষরা মার্চের চতুর্থ দিন আজ। সাত কোটি বাঙালী তাকিয়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দিকে। দেশমাতৃকাকে হানাদারমুক্ত করতে দৃপ্ত শপথে বলীয়ান পুরো বাঙালী জাতি। উনিশ শ’ একাত্তরের মার্চের এই দিনে স্বাধিকার চেতনায় শাণিত আন্দোলনমুখর ছিল বাঙালী জাতি। বাংলাদেশ তখন বিদ্রোহ বিক্ষোভে টালমাটাল। বীর বাঙালী স্বাধীনতার আকাক্সক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা মার্চের চার তারিখ ছিল দেশব্যাপী লাগাতার হরতালের তৃতীয় দিন। তবে এই দিন হরতাল ছিল আট ঘণ্টার। দ্রোহ-ক্ষোভে বঞ্চিত-শোষিত বাঙালী তখন ক্রমেই ফুঁসে ওঠছিল ঔপনিবেশিক পাকিস্তানী শাসক-শোষকদের বিরুদ্ধে। মার্চের প্রথম থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষুব্ধ ও আন্দোলনরত বীর বাঙালীর হাতে শোভা পাচ্ছিল মানচিত্র খচিত বাংলাদেশের পতাকা। এক্ষেত্রে বসে নেই কুখ্যাত পাকিস্তানী বাহিনী। তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদররাও বাঙালীর স্বাধীনতা আন্দোলন নস্যাতে তৎপর। কার্ফু দিয়েও সামরিক জান্তারা বীর বাঙালীদের ঘরে আটকে রাখতে না পেরে গোপনে আঁটতে থাকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে বাঙালী নিধনের পরিকল্পনা। শুধু অপেক্ষা করতে থাকে ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কী বলেন? আন্দোলনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা দফায় দফায় বৈঠকে বসেন ৭ মার্চের জনসভা সফল করার জন্য। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) চলতে থাকে জনসভার প্রস্তুতি। পাশাপাশি ঢাকাসহ সারাদেশেই গঠন হতে থাকে সংগ্রাম কমিটি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যুব ও ছাত্র নেতারা গোপনে নানা স্থান থেকে অস্ত্র সংগ্রহ অভিযান চালাতে থাকেন বেশ জোরেশোরেই। একাত্তরের এই দিনে অর্থাৎ ৪ মার্চ, ১৯৭১ ক্ষুব্ধ বাঙালীর মিছিলে মিছিলে ঝাঁঝালো সেøাগানে উচ্চকিত ছিল সারাদেশ। প্রধান সেøাগান ছিল- ‘বীর বাঙালী অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’, ‘তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ।’ একাত্তরের উত্তাল, বিক্ষুব্ধ বাংলাদেশে এই দিনটিতে সারাদেশের সব পাড়া, গ্রাম, মহল্লায় সংগ্রাম কমিটির পাশাপাশি শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি এবং স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠনের আহ্বান জানানো হয়। এর উদ্যোক্তা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলের (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ক্যান্টিনে স্থাপন করা হয় ছাত্রদের যোগাযোগ কেন্দ্র। শুধু ঢাকায় নয়, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে দেশমাতৃকাকে হায়েনামুক্ত করতে সারাদেশেই বীর বাঙালী ফুঁসে ওঠে। বিশেষ করে প্রতিটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসমাজ এলাকার স্বাধীনতাকামী নেতৃবৃন্দকে নিয়ে সংগ্রাম কমিটি গঠন করে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। ৭ মার্চ যতই এগিয়ে আসতে শুরু করে, স্বাধীনতাকামী বাঙালী ও পাক সামরিক জান্তার মধ্যে উত্তেজনা ততই বাড়তে থাকে। দেশের মানুষ একবুক প্রত্যাশা নিয়ে বসে থাকে ৭ মার্চ কী ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু। অন্যদিকে পাক সামরিক জান্তারা ভয়ে কাতর- যদি বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তখন কী হবে? শুক্রবার অগ্নিঝরা মার্চের ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর স্মরণে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ ঢাকা মহানগর কমিটির উদ্যোগে নগরীর কর্নেল তাহের মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বাঙালী জাতির স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার হাজার বছরের স্বপ্ন ও সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায় হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ। যারা মুক্তিযুদ্ধকে নিছক সামরিক যুদ্ধ বা ভারত-পাকিস্তানের বিরোধ হিসেবে চিহ্নিত করে তারা বাঙালী জাতির হাজার বছরের ইতিহাসকে অস্বীকার করে। বাঙালিত্বের গৌরব অহংকারকেও অস্বীকার করে। ইনু বলেন, যারা বাঙালী পরিচয়ে গর্ববোধ করে না, তারাই বাংলা নববর্ষ, চৈত্র সংক্রান্তি, হালখাতা, বাংলা ভাষা, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। আজও বাঙালী জাতি বিরোধী ওই শক্তি বাংলা, বাঙালিত্ব, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ঘোষিত-অঘোষিত, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য যুদ্ধ পরিচালনা করছে। অন্তর্ঘাত, নাশকতা, অগ্নিযুদ্ধ চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ৫২, ৫৪, ৬৯, ৭০, ৭১ এ বাঙালী হারেনি। আজও বাঙালী ও বাংলাদেশ জঙ্গী ও জঙ্গী-সঙ্গীর কাছে হারবে না। ইনু বলেন, ৫২, ৫৪, ৬৯, ৭০, ৭১ পাকিস্তানী পাঞ্জাবি শাসক-শোষক-সামরিক জান্তার সঙ্গে আপোস করেনি, আজও জঙ্গী ও জঙ্গী-সঙ্গীর সঙ্গে বাঙালী-বাংলাদেশ আপোস করবে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে যে বিস্ময়কর জাদুকরী উন্নয়ন চলছে তার সুফল সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হলে শোষণ-বৈষম্যের অবসান করতে হবেÑ সমাজতন্ত্রের পথে দেশকে পরিচালিত করতে হবে।
×