স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ গোদাগাড়ীতে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে জখমের পর থেকে নিষিদ্ধ নব্য জেএমবির উত্তরাঞ্চলের সামরিক শাখার প্রধান আমিজুল ইসলাম ওরফে আলামিন ওরফে রনির (২৩) বাড়িতে এখন তালা ঝুলছে। বুধবার রাতে বগুড়ার শেরপুরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার আগেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে তার পরিবারের সবাই। কোথায় গেছে তা প্রতিবেশীরা জানেন না। পুলিশের কাছেও হদিস নেই তাদের। তবে আমিজুল গোপনে গোপনে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাত সোয়া ৮টার দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌর এলাকার বুজরুক রাজারামপুর মহল্লার থেকে আমিজুলকে গ্রেফতার করে বগুড়া ডিবি পুলিশ। ওই সময় তাকে ধরতে গিয়ে বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দুই সদস্য মারাত্মকভাবে ছুরিকাহত হন। ওই রাত থেকেই আত্মগোপনে চলে যায় তার পরিবারের সদস্যরা।
আমিজুলের প্রতিবেশীরা জানান, এলাকার আতাউর রহমানের তৃতীয় স্ত্রী লাইলী বেগমের ছেলে আমিজুল। আমিজুলের বাবার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পর লাইলী বেগমের বিয়ে হয় আতাউর রহমানের সঙ্গে। আমিজুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চর হরিশপুর গ্রামে তার নানার বাড়িতেই বেশিরভাগ সময় থাকত। তবে মাঝে মাঝে আসত মায়ের কাছে।
প্রতিবেশীরা আরও জানান, এলাকার অনেকের কাছেই অচেনা ছিল আমিজুল। একা একা চলাফেরা করত। মসজিদে গিয়ে নামাজের পর মোনাজাতের বিরোধিতা করে এলাকায় সমালোচিত হয় এ যুবক। এছাড়া তার কথাবার্তায় ছিল উগ্রতা। তবে এ আমিজুলই দুর্ধর্ষ জঙ্গী তা জানত না এলাকার কেউই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আমিজুলের ব্যাপারে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। আমিজুল একাই যেভাবে দুই পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা চালিয়েছে, তা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। তার ছুরি চালানোর ধরনেই বোঝা গেছে সে কতটা দুর্ধর্ষ ক্যাডার। আমিজুল জেএমবির উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্যাডার। প্রশিক্ষক হিসেবে জেএমবি ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ দিত বলেও তারা তথ্য পেয়েছেন।
এলাকাবাসী সূত্র জানায়, আমিজুল নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করত। তবে সে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে বলেও অনেকের কাছে বলেছিল। এক বছর আগে থেকে আমিজুল পাঞ্জাবি পরতে শুরু করে। মুখে দাড়িও রাখে। সবসময় মাথায় টুপি পরে চলাফেরা করত। আমিজুলের বাবা আতাউর রহমান আগে জুয়া-মাদকে মেতে থাকতেন। তবে সম্প্রতি তিনিও নিজেকে বদলে ফেলেছেন। মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত আযান দিয়ে মুয়াজ্জিন বনে যান। তাদের বাড়িতে মাঝে মধ্যেই অচেনা নারীদের ইসলামী বৈঠকও হতো।
এদিকে ঘটনার পরদিন থেকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি বগুড়া গোয়েন্দা পুলিশের দুই সদস্য। এর মধ্যে পেটে গুরুতর যখম নিয়ে হাসপাতালের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আবদুস সালাম। মাথায় আঘাত নিয়ে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ইসমাইল হোসেন। তারা এখন শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
রামেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, কঠোর নিরাপত্তায় চিকিৎসা নিচ্ছেন এ দুই পুলিশ সদস্য। চিকিৎসাধীন ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা বাধা দেন। তবে আবদুস সালাম জানিয়েছেন, আমিজুল জেএমবির দুর্ধর্ষ জঙ্গী। গত এক মাস ধরেই তারা আমিজুলের গতিবিধি নজরে রেখেছিলেন। ওই রাতে তাদের সঙ্গে বগুড়া জেলা ডিবির একজন সহকারী উপ-পরিদর্শকও (এএসআই) ছিলেন।
ওই সময় বাড়ি থেকে বের হচ্ছিলেন আমিজুল। তাকে একা পেয়ে এই সুযোগটিই কাজে লাগাতে চান তারা। তাকে প্রথমেই আটকান কনস্টেবল ইসমাইল। এ সময় তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এরপর তিনি নিজেই আমিজুলকে জাপটে ধরেন। এ সময় তাকেও পরপর কয়েকটি ছুরিকাঘাত করে পালানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ওই যুবক ।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: