ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ট্যানারি স্থানান্তর না করায় ১৫৪ মালিককে ৩১ কোটি টাকা জরিমানা

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৩ মার্চ ২০১৭

ট্যানারি স্থানান্তর না করায় ১৫৪ মালিককে ৩১ কোটি টাকা জরিমানা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তর না করার দায়ে ১৫৪ ট্যানারি মালিককে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা জরিমানা সরকারী কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত বছরের ১৮ জুলাই সুপ্রীমকোর্টের আপীল এক অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে বলেন, ১৫৪ ট্যানারি মালিকের প্রত্যেককে ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে। প্রথমে হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়েছিল, ১৫৪ ট্যানারি মালিককে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে হবে। কিন্তু পরে কমিয়ে ১০ হাজার টাকা করা হয়। এ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ জানান, পরিবেশের ক্ষতিসাধনকারী ১৫৪ ট্যানারি হাজারীবাগ থেকে স্থানান্তর না করার ফলে আদালত থেকে মালিকদের জরিমানা বকেয়া বাবদ ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা সরকারী কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ট্যানারি মালিকরা ওই টাকা জমা দেয়ার জন্য বলেছে আদালত। এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও হাজারীবাগের ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায়ে ব্যর্থতার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে শিল্প সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে তলব করে হাইকোর্ট। এর আগে গত ১৬ জুন হাইকোর্ট রাজধানীর হাজারীবাগে থাকা ১৫৪ ট্যানারি সাভারে না সরানো পর্যন্ত পরিবেশ দূষণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রত্যেক ট্যানারি মালিককে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপীল করেন বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস এ্যান্ড ফুটওয়ার ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান। ২০০১ সালে হাইকোর্ট এক রায়ে হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি শিল্প সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়। এরপর ২০০৯ সালের ২৩ জুন আরেক আদেশে ট্যানারি সরানোর জন্য ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়। পরবর্তীকালে সরকার পক্ষের আবেদনে ওই সময়সীমা কয়েক দফা বাড়ানোর পরও ট্যানারি স্থানান্তরে হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়ন হয়নি। পরে রিটকারী সংগঠনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ওই ১০ প্রতিষ্ঠানের মালিককে তলব করে। তলবের মধ্যেই একটি জাতীয় দৈনিক ট্যানারি শিল্প নিয়ে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরে এ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ প্রতিবেদন দুটি সংযুক্ত করে গত বছরের এপ্রিল মাসে হাইকোর্টে আরও একটি আবেদন করেন। ওই আবেদনে গত বছরের ১৩ এপ্রিল হাইকোর্ট হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্পের বর্তমান চিত্র প্রতিবেদন আকারে আদালতে দাখিল করতে শিল্প সচিবকে নির্দেশ দেয়। নির্দেশ অনুযায়ী শিল্প সচিবের পক্ষে ১৬ জুন আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে ১৫৫টি ট্যানারি প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা তুলে ধরা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শুধু রিলায়েন্স ট্যানারি লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠানটি সাভারে তাদের নামে বরাদ্দকৃত প্লটে ট্যানারি কারাখানা চালু করেছে মর্মে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পরই হাইকোর্ট ওই ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য ট্যানারি মালিকদের নির্দেশ দেয়।
×