ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে গবেষণাপত্র

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২ মার্চ ২০১৭

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে গবেষণাপত্র

রশিদ মামুন ॥ দেশে কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের জ্বালানি সংগ্রহের জন্য একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। দেশে বড় বড় কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ শুরু হলেও জ্বালানি সংগ্রহে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে কোম্পানিগুলো। এক্ষেত্রে সরকার অনেক দিন ধরেই পরামর্শক নিয়োগ দেয়ার কথা বলে আসছে। যদিও এক্ষেত্রে এখনও সুনির্দিষ্ট কোন পন্থার কথা সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন আহসানের বাংলাদেশের বিদ্যুত উৎপাদন পরিকল্পনায় কয়লার ব্যবহার শীর্ষক একটি গবেষণায় সংকট সমাধানের উপায় খোঁজা হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, কয়লা আমদানির ক্ষেত্রে একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। বিদ্যুত বিভাগের অধীনে গড়ে তোলা এই প্রতিষ্ঠানটি এককভাবে কয়লা ক্রয় করে বিদ্যুত কেন্দ্রের কাছে সরবরাহ করবে। এককভাবে একটি প্রতিষ্ঠান দেশের সব বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য কয়লা সংগ্রহ করলে আর্থিক সুবিধা পাবে। একই সঙ্গে প্রশাসনিক ব্যয় ও জটিলতা কমে আসবে। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির পরিকল্পনা এবং নক্সা প্রণয়ন বিভাগের এই প্রকৌশলী তার গবেষণায় দেশীয় কয়লার সঙ্গে বিদেশী কয়লা ব্যবহারের প্রতি মনযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি তাঁর গবেষণায় বলেছেন, প্রতিদিন এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুত কেন্দ্র চালাতে ১৫ টন কয়লার দরকার হয়। বছরে এই কয়লার পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন। এভাবে ২০ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র চালাতে দৈনিক ২২০ টন কয়লা দরকার হয়। এভাবে বছরে কয়লার দরকার হবে ৮০ মিলিয়ন টন। বিপুল পরিমাণ কয়লা আমদানির জন্য বিশেষ বন্দর নির্মাণের প্রতিও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকার দুটি কয়লাবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এর একটি বন্দর নির্মাণ হবে জাইকার অর্থায়নে মাতারবাড়িতে। অন্যটি পয়রা বন্দর নির্মাণ করবে বন্দরের ভেতরে। বিদ্যুত উৎপাদন মহাপরিকল্পনায় ২০৪০ সালে দেশের মোট ৫০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ বর্তমানের তুলনায় এই পরিমাণ প্রায় তিনগুণ। আগামী ২৩ বছরে দেশের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে আরও ৩৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজন পড়বে। বিপুল এই বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য কোন একক জ্বালানির প্রতি নির্ভর করা সমীচীন হবে না। জ্বালানির ধরন এবং দেশের অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হিসেবে কয়লাকেই এগিয়ে রাখা হচ্ছে। সরকারের পরিকল্পনায় আপাতত দেশীয় কয়লা উত্তোলন না করা হলেও আমদানি করা কয়লা দিয়ে এসব কেন্দ্র চালানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের ক্ষেত্রে কয়লা সংগ্রহকে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বিবেচনা করা হলেও বিদ্যুত কেন্দ্রের সংরক্ষণকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। সবক্ষেত্রেই কেন্দ্রের সংরক্ষণ যথাযথভাবে করলে কেন্দ্রটি দীর্ঘ সময় ধরে উৎপাদন করতে পারে। অস্ট্রেলিয়ায় কোন কোন সাবক্রিটিক্যাল বিদ্যুত কেন্দ্রও ৫০ বছর ধরে বিদ্যুত উৎপাদন করছে। যেখানে আমাদের কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন সময়সীমা ২৫ বছর বিবেচনা করা হচ্ছে। কেবলমাত্র দক্ষ তদারকিতে বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদনে থাকার সময়সীমা বৃদ্ধি পায়। যাতে বিদ্যুতের দাম অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। এজন্য গবেষণায় বিদ্যুত কেন্দ্রের পরিচালনা পর্যায়ে যথাযথ সংরক্ষণের উপর জোর দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অন্তত ৪০ বছর বিদ্যুত উৎপাদন করবে এমনভাবে বিদ্যুত কেন্দ্রের নক্সা করা উচিত। সমাধানে যৌথমূলধনী কোম্পানি গঠনের মাধ্যমে অভিজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করার পাশাপাশি দেশীয় জনবল উন্নয়নের উপর জোর দেয়া হয়েছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য সবচবাইতে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দূষণ প্রতিরোধ করা। দূষণ প্রতিরোধের জন্য সরকারের কঠোর নিয়ম নীতি থাকা জরুরী বলে গবেষণা পত্রে তুলে ধরা হয়। এছাড়াও পানির ব্যবহার কমাতে ‘জিরো লিক্যুয়িড ডিসচার্জ’ করার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
×