ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

লিটন হত্যা

আদালতে কাদের খানের স্বীকারোক্তি

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আদালতে কাদের খানের স্বীকারোক্তি

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ২৫ ফেব্রুয়ারি ॥ গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যার ‘দোষ স্বীকার’ করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন সাবেক জাপা এমপি ডাঃ কর্নেল (অব) আবদুল কাদের খান। শনিবার দুপুর আড়াইটায় ১০ দিনের রিমান্ড চলাকালে চতুর্থ দিনে তাকে জবানবন্দী দেয়ার জন্য গাইবান্ধার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। আদালতের বিচারক মোঃ জয়নুল আবেদিন তার জবানবন্দী গ্রহণ করেন। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত নয়টা ২১ মিনিট পর্যন্ত তার জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়। জবানবন্দী শেষে কাদের খানকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, আদালতে তোলার পর থেকে জবানবন্দী দেয়া শুরু করেন কাদের খান। তাকে এসময় বিমর্ষ দেখা যাচ্ছিল। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলে হেলমেট এবং বুলেট প্রুপ জ্যাকেট পরিয়ে কাদের খানকে এসপি অফিস থেকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত চত্বরে এবং পুলিশ সুপার অফিসে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনি গড়ে তোলা হয়েছে। জজ কোর্ট ভবনের সমস্ত গেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কোন সাংবাদিককে সেখানে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এমনকি পুলিশ সুপার অফিসেও কাউকে যেতে দেয়া হয়নি। ফলে জবানবন্দী সংক্রান্ত কোন তথ্যই জানা সম্ভব হয়নি। নব্য জেএমবি নামে মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুরে সম্পৃক্ততা ॥ এদিকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় গত ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে নব্য জেএমবি’র নামে একাধিক মন্দিরে দুর্গা প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনা কাদের খানের নির্দেশ এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী সংঘটিত হয়েছে বলে জানা গেছে। সর্বশেষ ৯ অক্টোবর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুরের কামারপাড়া সড়ক সংলগ্ন কালীমন্দিরে রক্ষিত কালী প্রতিমা ভাংচুর করে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ এ অভিযোগে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছাপড়হাটি ইউনিয়নের ম-লেরহাট থেকে সেসময় ৪ জনকে কথিত নব্য জেএমবি সদস্য হিসেবে গ্রেফতার করে। গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের জাপার সাবেক এমপি কর্নেল (অব) আব্দুল কাদের খানের ভাতিজা সুন্দরগঞ্জের ছাপড়হাটি ইউনিয়নের খানপাড়া পশ্চিম ছাপড়হাটি গ্রামের ইউসুফ খানের ছেলে ফয়সাল খান ফাগুন (১৭) এবং কাদের খানের সুন্দরগঞ্জের পশ্চিম ছাপড়হাটি খানপাড়া গ্রামের বাড়িতে কর্মরত আব্দুল ওয়াহাবের ছেলে নজরুল ইসলাম খান (৩৫), আব্দুল হামিদ মিয়ার ছেলে আশিকুল ইসলাম (১৬) ও আদর আলীর ছেলে শহিদ মিয়া (১২) মোটরসাইকেলে এসে মন্দিরের কালী প্রতিমা ভেঙ্গে সেখানে নব্য জেএমবি কর্তৃক দায় স্বীকার সংক্রান্ত হাতে লেখা একটি চিঠি রেখে পালিয়ে যায়। সেসময় পুলিশের কাছে প্রদত্ত স্বীকারোক্তিতে তারা বলেছে, এর আগে ৮ অক্টোবর রাতে মোটরসাইকেল যোগে গিয়ে পশ্চিম ছাপড়হাটি ডুরামারি গ্রামে নরেন্দ্র চন্দ্র বর্মণের বাড়ির কালীমন্দিরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এছাড়া ২২ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে সাদুল্যাপুর উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব কেশালীডাঙ্গা সার্বজনীন মন্দিরেরও মূর্তি ভাংচুর করে। একই দিনে আরেকটি মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুরেরও পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু তার আগেই তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। ভাংচুর করার পরে প্রতিটি মন্দিরেই নব্য জেএমবি নামে হাতে লেখা চিঠি ফেলে আসা হয়। সুন্দরগঞ্জ জেএমবি প্রভাবিত এলাকা তা প্রমাণ করতেই কাদের খান সুপরিকল্পিতভাবে তার নিজের ভাতিজা ফয়সাল খান ফাগুনসহ নিজস্ব কাজের লোকদের ব্যবহার করে। মন্দিরের ভাংচুরের সম্পৃক্ততার জন্য গ্রেফতারকৃত আসামিরা ইতোমধ্যে জামিনে ছাড়া পেয়েছে বলে জানা গেছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের ভোটের নিশ্চয়তা ॥ কাদের খান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ছাড়াও বিএনপি-জামায়াতের ভোট পাবে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে আশাবাদী ছিল। সেকারণেই সে মরিয়া হয়ে এমপি লিটনকে তার পথের কাঁটা মনে করে চিরতরে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তদুপরি বিগত নির্বাচনে তার পরাজয় এবং তার সময়কালে সংগঠিত বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত বিষয়ে সে মূলত এমপি লিটনকে দায়ী করে। সেজন্য এক বছর আগে থেকেই এমপি লিটন কিলিং মিশনের পরিকল্পনা করে। মূলত ৩০ ডিসেম্বর এমপি লিটনকে তার বাড়িতে খুন করার মূল পরিকল্পনা ছিল। কেননা ৩১ ডিসেম্বর এমপি লিটনের ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিমানের টিকেট না পাওয়ার কারণে তিনি ওইদিন ঢাকা যেতে পারেননি। ফলে উপজেলা আ’লীগের দফতর সম্পাদক চন্দন সরকার এবং তার অন্য অনুসারীদের নিকট প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে ৩১ ডিসেম্বর এমপি লিটনকে তার বাড়িতে হত্যা করতে সক্ষম হয়।
×