ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফুলের মাস এই ফেব্রুয়ারি

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ফুলের মাস এই ফেব্রুয়ারি

ফুল মানুষের দৈনন্দিন চাহিদার একটি বিশেষ উপকরণ। মানুষ মাত্রই ফুল ভালবাসে। বিচিত্র ফুলের বর্ণিল শোভা এবং সুবাস মানুষকে নানামাত্রিকে ভরিয়ে তোলে। প্রতিদিনের মানসিক খোরাক মেটানোর পাশাপাশি ফুল জাতীয় দিবসের বিভিন্ন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও পালন করে। বিশেষ করে এই ফেব্রুয়ারির মাসটাই ফুলের বিচিত্র আয়োজনে পরিপূর্ণ হওয়ার এক সুরভিত মাস। ১ ফাল্গুন এবং ভালবাসা দিবসে ফুলের নির্মল সৌন্দর্যের মহিমান্বিত আবেশে মানুষ উদ্বেলিত হয়, আবেগে আপ্লুত হয়, আনন্দে বিহ্বল হয়ে পড়ে। আর একুশে ফেব্রুয়ারি তো ফুলে ফুলে সাজানো একটি বিরাট আয়োজন। যে পুষ্পের অভিযাত্রায় সারাপথ সুশোভিত ও সুরভিত হয় এবং শেষ অবধি তা শহীদ মিনারে এসে সমর্পিত হয়। তাই ফুল শ্রদ্ধা নিবেদনেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। পূজায়, অর্ঘ্য,ে নিবেদনে ফুলের মাহাত্ম্য অবর্ণনীয়। এই পুষ্প শুধু নিজের জন্যই প্রস্ফুটিত হয় না অন্যের আনন্দের খোরাক হিসেবে ফুলের অবদান অনস্বীকার্য। নৈসর্গিক লীলা বৈচিত্র্যের এই দেশে ফুলের সমারোহ প্রকৃতিরই অভূতপূর্ব দান। নদী বিধৌত বাংলার উর্বর মাটি শুধু বাংলাকে শস্য শ্যামলাই করেনি পুষ্পের বিচিত্র সমারোহে নান্দনিকতার এক মোহনীয় রূপকেও বৈশিষ্ট্যম-িত করেছে। প্রকৃতির দান গ্রহণ করেও আধুনিক প্রযুক্তি বিদ্যার নিত্যনতুন প্রয়োগ ঘটিয়ে অন্যান্য কৃষি উৎপাদনের সঙ্গে ফুল চাষকেও নতুন মাত্রা দেয়া হয়েছে। সারাদেশে বিচিত্র রকমের ফুলের চাষ দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় ভিন্নমাত্রা সংযোজন করেছে। দেশে ফুলের ব্যাপক চাহিদা মেটাতে ফুলচাষীরা যেমন উৎসাহিত তেমনি এর ব্যবসায়ীদেরও মুনাফা অর্জনের এক বিরাট সম্ভাবনা; ফলে ফুলের ব্যবসা আজ রমরমা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ফুলচাষীদের আবাদ করা ফুল বিভাগীয় শহরগুলোতে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর হাতে এসে পৌঁছায় এবং সর্বশেষে তা গ্রাহকদের আনন্দ প্রদানের নিমিত্তে তাদের হাতে আসে। বিভাগীয় শহরের পাইকারি ফুলের বাজারের ব্যবসায়ীরা দেশজ বিভিন্ন ধরনের ফুলের সম্ভার নিয়ে দর্শনার্থীর সামনে উপস্থিত হয় এবং ফুলপ্রেমীরা উৎসাহ আর উদ্দীপনায় সুশোভিত পুষ্পকে অর্ঘ্য নিবেদনের জন্য নিজের কাছে নেয়। ঢাকা শহরের ফার্মগেট, শাহবাগ এবং আগারগাঁওয়ে ফুলের পাইকারি বাজারের গুরুত্বপূর্ণ স্থান। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে ফুলের সরবরাহ করা হয়। ভোর থেকে ফুলের পরিবহনগুলো বাজারগুলোতে ফুলের স্তবক নামিয়ে দেয়। আর সকাল থেকে শুরু হয় ফুল বিক্রির মহাসমারোহ। জানা যায়, প্রতিদিন প্রায় ৪২ লাখ টাকার ফুল বিক্রি হয় এসব পাইকারি বাজারে। আর এই ফেব্রুয়ারি মাসেই এই বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১৫-২০ কোটি টাকা। তবে ফুল সংরক্ষণে আরও যতœবান এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছেন ফুল ব্যবসায়ীরা। কারণ, এসব তাজা ফুল যথার্থ সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হওয়ার মতো দুরবস্থার শিকার হয়। ফলে আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয় ব্যবসায়ীদের। পরিবহন ব্যবস্থায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার ফুলকে পচনশীলতা থেকে বাঁচাতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। উৎপাদনশীল জায়গাগুলোতেও ফুলচাষে আরও সতর্ক এবং আধুনিক ব্যবস্থার প্রয়োজন যা ফুলকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। ফুল এখন কেবল ভালবাসা, নৈবদ্য কিংবা জাতীয় দিবসের প্রয়োজনীয় উপকরণই নয় গৃহসজ্জারও অন্যতম বাহন হিসেবে এসব তাজা পুষ্প নিজের জায়গা করে নিয়েছে। গৃহশোভার অলঙ্কার হিসেবেও ফুলের অবদান কোন অংশেই কম নয়। সুতরাং, ফুলের চাহিদা যেমন ব্যাপক তার উৎপাদনও তেমনি বিস্তৃত হওয়া আবশ্যক। সেই সঙ্গে অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে এর যথাযথ সংরক্ষণ এবং পর্যবেক্ষণ।
×