ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিস্তীর্ণ বালুরাশিতেই কোলাহল

শুকনা পদ্মাও টানছে দর্শনার্থী

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

শুকনা পদ্মাও টানছে দর্শনার্থী

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ পদ্মা নদীর রাজশাহী অংশে এখন বিস্তীর্ণ বালুরাশি। শুষ্ক মোৗসুম শুরুর অনেক আগেই পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। বলতে গেলে রাজশাহীর ওপর দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদী এখন পুরোটাই পানিশূন্য। বালুর স্তরে স্তরে আটকে আছে মাঝিদের নৌকা। শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে চারদিক। তবু শুকনা পদ্মার রূপ দেখতে দর্শনার্থীর যেন কমতি নেই। সকাল গড়িয়ে বিকেল অবধি বালুময় পদ্মার টানেও মানুষ আসছেন সময় কাটাতে। সারাক্ষণ মানুষের বিচরণ, আনাগোনা লেগেই রয়েছে পদ্মার বিস্তীর্ণ বালুরাশির মধ্যে। জৌলুশ হারিয়ে ক্রমেই অচেনা রূপ ধারণ করলেও পদ্মার বুকে মানুষের বিচরণের কমতি নেই। যেন শুকনা পদ্মাও সমানে টানছে দর্শনার্থী। আর বালুরাশির মধ্যেই খুঁজে পাচ্ছে বিনোদনের সুখ। শনিবার সকালে রাজশাহীর অংশে পদ্মা নদীতে গিয়ে দেখা গেছে যেন রূপ পাল্টানো অন্য পদ্মা। কোথাও পানি নেই। যতদূর চোখ যায় শুধু বালুরাশি। বালুর মধ্যে আটকে পড়েছে মাঝিদের নৌকা। ওপারের চরের মানুষ দীর্ঘপথ মাড়িয়ে হেঁটে আসছেন এপারে। ওপারের মালামাল আসছে পদ্মার বুক চিরে গরু-মহিষের গাড়িতে করে। কোথাও কোথাও শিশুদের ক্রিকেট খেলার দৃশ্যও দেখা যায়। তারপরও শুকনা পদ্মা সমানে টানছে মানুষকে। পদ্মার এই নিঃসঙ্গ রূপ ঘিরেই গড়ে উঠেছে বিনোদনের সবকিছু। শুকনা পদ্মা নদীকে ঘিরে এখন আলাদা ঢেউ তারুণ্যের। সকাল থেকে সন্ধ্যা গড়িয়ে খানিক রাত অবধি পদ্মা নদীর বিস্তীর্ণ বালুরাশির মধ্যে মানুষের আনাগোনা। বিশেষ করে রাজশাহীর পদ্মা নদীর অন্তত ১০ কিলোমিটারজুড়ে মানুষের কোলাহল এখন শুকনা নদী ঘিরেই। নদীর কলতান না থাকলেও তারুণ্যের কলরব, স্বাচ্ছন্দ্য সবই রয়েছে এখানে। বিশাল জলরাশির পরিবর্তে শুকনা বালুরাশির পাশে খানিকটা আনন্দের ঢেউ যেন শান্তির সুবাতাস। ভরা পদ্মার প্রতি মানুষের যেমন টান থাকে সর্বক্ষণ, এখন শুকনা পদ্মাও সমানে টানে মানুষকে অজানা আকর্ষণে। শুকিয়ে কাঠ হওয়া পদ্মায় বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরা জানান, পানিহীন পদ্মা নদীরও আলাদা রূপ আছে। সেই টানেই তারা ছুটে আসছেন। বালুর মধ্যে দৌড়ঝাঁপ, হৈ-হুল্লোড়ে কেটে যায় সকাল দুপুর সন্ধ্যা। বরাবরের মতো এবারও শীতকালেই প্রমত্ত পদ্মা শুকিয়ে মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। জেগে উঠেছে বিস্তীর্ণ ভূমি। যৌবন হারিয়ে পদ্মা এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরেই রূপ হারাচ্ছে পদ্মা। এবারও শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগেই শুকিয়ে অসংখ্য মরা খালে পরিণত হয়েছে পদ্মা নদী। নদীর বুকে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। কমে গেছে নদীর নাব্য। বিভক্ত হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। হালে পদ্মা নদীর এই চিত্র রাজশাহী সদর ছাড়াও পূর্বে গোদাগাড়ী আর পশ্চিমে চারঘাট-বাঘা পর্যন্ত। স্থানীয়রা জানান, গোদাগাড়ী থেকে শুরু করে রাজশাহী হয়ে বাঘা পর্যন্ত বিস্তৃত পদ্মা নদী। এর মধ্যে শুধু গোদাগাড়ী উপজেলায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার পদ্মা নদীর অংশ রয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলার ভাটোপাড়া, প্রেমতলী ও খরচাকার সামনে বিশাল চর জেগে ওঠায় তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে পদ্মা নদী। গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে পানি কেবল ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর প্রেমতলী এলাকায় হাঁটুপানি দিয়ে গরুর গাড়ি নদী পারাপার করছে। নগরীর বুলনপুর, চারঘাট ও বাঘায়ও অবস্থা একই।
×